11 November 2023 , 3:57:15 প্রিন্ট সংস্করণ
ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমন বলেছেন, ৪৪ বছর বয়সে মাঠে নামি, ঘাম ফেলি। কাজ ফেলে প্রতি সপ্তাহে ছুটে যাই বিভিন্ন জেলায়। ফুটবলের প্রতি দেশের মানুষের প্রেমটা সত্যিকারের প্রেম। ফুটবল মাঠে গেলে দেশপ্রেমও দেখা যায়। শুধু যে ফুটবল খেলি তা না। বয়স বিবেচনায় মাঠে নেমে আমার ফুটবল খেলার কথা না। মাঠে দলমত নির্বিশেষে ৮ থেকে শুরু করে ৮০ বছর বয়সী মানুষও আসে। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মাঝে দেশপ্রেম ও অঞ্চলের প্রেম বাড়ানোই হলো আমার উদ্দেশ্য।
শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর মুক্তিযোদ্ধা গেস্ট হাউসে সাংবাদিকদের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। আজ বিকেল ৩টার দিকে সদর উপজেলার দালাল বাজার এনকে উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে লক্ষ্মীপুর জেলা ফুটবল একাদশ ও ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমির প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। খেলায় অংশ নিতে শুক্রবার তিনি লক্ষ্মীপুর এসে পৌঁছেছেন।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে। কিন্তু মানসিকভাবে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মানুষে মানুষে প্রেম কমে যাচ্ছে। এ প্রেমের জায়গাটাতে আমি কাজ করতে চাই। ৯০ এর দশকে ফুটবল যে জায়গায় ছিল, সেখান থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে গিয়েছি। আমাদের ফুটবল আইসিইউতে (নিবিড় পর্যবেক্ষণে) আছে। আইসিইউ থেকে সুস্থ করার জন্য বিভিন্ন জেলায় যাই।
সুমন বলেন, লক্ষ্মীপুরে জীবনের প্রথমবারের মতো আসলাম। সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর আমন্ত্রণে এখানে আসা। মনে হচ্ছে আজ অনেক সাড়া পাব। একটা সুন্দর ফুটবল ম্যাচ হবে। এখানে আমি জিততেও পারি, হারতেও পারি। কিন্তু আমার জেতা বা হারাতে কিছু আসে যায় না। আমি চাই ফুটবলটাকে বাঁচাতে। ফুটবলকে জেতাতে চাই। ফুটবলের মধ্য দিয়ে আমরা শপথ করতে চাই- এদেশের জন্য কাজ করতে হবে।
জন্মের পর যে দেশটা আমরা পেয়েছি, মৃত্যুর আগে এর চেয়ে ভালো একটি দেশ আমরা দেখে যেতে চাই।তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক হিসেবে তিনি যে জায়গায় কাজগুলো রেখে গেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে কাজগুলোকে আমরা দুর্নীতি ও প্রভাব মুক্ত থেকে, মানুষে মানুষে বিভেদ কমিয়ে সোনার বাংলা বানাতে চাই। এটার জন্যই আমি কাজ করে যাচ্ছি। এর জন্য সবার সহযোগিতা চাই।
লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিভিন্ন সময় তিনি আবাহনী ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেডের তৃতীয়বারের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহ-সভাপতি। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
হারুনুর রশিদের মতো একজন উচ্চমানের ক্রীড়া সংগঠক থাকলেও লক্ষ্মীপুর জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রায় সাড়ে ৩৯ বছরে এখানে একজন তারকা ফুটবলার সৃষ্টি হয়নি। এমন প্রশ্নে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, সফলতার বৃত্ত সবাইকে নিয়েই পূরণ করতে হয়। আপনার এলাকা থেকে কেউ অনেক বড় খেলোয়াড় ও সংগঠক হতে পারেন। কিন্তু আপনার এলাকায় যদি আর কোনো খেলোয়াড় না সৃষ্টি হয়, তাহলে কিছু ব্যর্থতার দায় তাকে নিতেই হবে।
ঢাকার জনপ্রিয় ক্লাবের উচ্চ পর্যায়ে থাকা একটি সুবর্ণ সুযোগ। চাইলেতো আপনি নিজের এলাকার মানুষকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারেন। এ সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে হয়। তা না হলে ১০ থেকে ২০ বছর পর হলেও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে- ঢাকায় ভালো অবস্থানে থাকার পরও কেন আপনার এলাকা থেকে ভালো খেলোয়াড় বের হলো না?
তিনি আরও বলেন, অনেক নেতারাই কেন্দ্রীয়ভাবে কথা বলেন, ঢাকায় বড় বড় বক্তব্য দিচ্ছেন। কিন্তু তার এলাকায় গিয়ে দেখবেন রাস্তা চলাচলের মতো না। রাস্তা ভাঙা। তার ঢাকার বক্তব্যের সঙ্গে এলাকার রাস্তার মিল পাবেন না। যারা লক্ষ্মীপুরের কেন্দ্রীয় নেতা বা কৃতি সন্তানরা আছেন, ঢাকায় হয়তো তারা অনেক ভালো ভালো বক্তব্য দেন। কিন্তু লক্ষ্মীপুরেও তো অনেক সমস্যা আছে।
যেগুলো দেখলে তাদের বক্তব্যের সঙ্গে মিলবে না। তখন তাদের প্রতি সম্মানটা কমে যায়। একই ধারাবাহিকতায় দেখবেন কেন্দ্রীয় নেতা না হয়েও আঞ্চলিক নেতা হয়ে তার এলাকাকে ভালো অবস্থানে নিয়ে গেছেন। মানুষের প্রতি সম্মান আসার জন্য আপনাকে বড় নেতা হতে হবে তা না। আপনার কর্মটাই যথেষ্ট। কাজের মাধ্যমেই বুঝাতে হবে আপনি এলাকার কৃতি সন্তান।
প্রীতি ম্যাচের আয়োজক ও সভাপতি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু বলেন, সব প্রস্তুতি শেষ, এখন শুধু মাঠে বল এবং খেলোয়াড়দের অপেক্ষা। এ ম্যাচটি অবশ্যই আনন্দদায়ক হবে। সুন্দরভাবে খেলাটি সম্পন্ন হবে। পুরো জেলা থেকেই লোকজন খেলা দেখতে আসবে। সবার সহযোগিতায় সুন্দর একটি ফুটবল ম্যাচ দেখতে পারবে দর্শকরা।
ম্যাচটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন। বিশেষ অতিথি থাকবেন লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান। এছাড়া প্রায় ২৪ জন আমন্ত্রিত অতিথি থাকবেন বলে জানা গেছে।