সারা দেশ

মায়ের বিরুদ্ধে বাবার হত্যা মামলা মেয়ের মৃত্যুতে

মালপুরে সরিষাবাড়ীতে শারমিন আক্তার সুপ্তি নামে এক কিশোরীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (৩ অক্টোবর) উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের গাড়াডোবা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সুপ্তির বাবা মো. শাহাদাত হোসেন বাদী হয়ে সরিষাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ মহব্বত কবীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত সুপ্তি (১৩) উপজেলার আওনা ইউনিয়নের পঞ্চাশী দক্ষিণ পাড়া গ্রামের মো. শাহাদাত হোসেনের একমাত্র মেয়ে। সে গাড়াডোবা সিরাতুন্নবী আলিম মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থী ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় সুপ্তি বাড়ীর আঙ্গিনায় টিউবওয়েল মাগরিব নামাজের অজু করতে গিয়ে পড়ে যায়। পরে তার নানী টিউবওয়েল পাড়ে গিয়ে দেখে সে অচেতন হয়ে পড়ে আছে। এ সময় তিনি চিৎকার করলে বাড়ীর আশপাশের লোকজন এসে সুপ্তিকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।

পরে এ ঘটনা থানায় জানালো হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে নিহতের সুরতহাল শনাক্ত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন। এ বিষয়ে সুরতহাল শনাক্তকারী অফিসার তারাকান্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই আমজাদ হোসেন কালবেলাকে জানান, সুরতহাল শনাক্তকালে নিহতের গলায় কালো দাগ পাওয়া গেছে।

এদিকে নিহতের গলায় চিহ্ন দেখে স্থানীয়রা বলছেন, সম্ভবত তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলা হয়েছে।এ বিষয়ে নিহতের পিতা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি একজন প্রবাসী। আমি পার্শ্ববর্তী ডোয়াইল ইউনিয়নের গাড়াডোবা গ্রামের বদিউজ্জামানের মেয়ে বেদেনা আক্তারকে বিয়ে করি। আমি দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে যা ইনকাম করেছি তা সবই আমার স্ত্রীর নামে পাঠিয়েছি। বিদেশ থেকে ছুটি আসার ৬ মাস পূর্বে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। আমি বিদেশ থেকে এসে সুপ্তিকে আমার কাছে নেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে আমার মেয়েকে আমার কাছে দেয়নি।

শাহাদাত হোসেন আরো বলেন, ‘আমি আজ নিঃস্ব হয়ে গার্মেন্টসে চাকরি করছি। গত ২ অক্টোবর রাতে আমাকে ফোন করে জানানো হয়, আমার মেয়ে মারা গেছে। আমি তৎক্ষণাৎ ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসি এবং সেখানে গিয়ে দেখি আমার মেয়ের মারা গেছে। তার গলায় একটি কালো দাগের চিহ্ন রয়েছে। আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তাই আমি বাদী হয়ে সরিষাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করছি।

এ বিষয়ে নিহত সুপ্তির দাদা মো. আব্দুস সামাদ জানান, আমার নাতনী অনেক ভালো একটি মেয়ে ছিল। সে মাঝে মধ্যেই আমাদের বাড়িতে এসে বলতো আমাকে মা ও নানী মারধর করে।এ ছাড়া তিনি বলেন, সুপ্তির মা ও নানীর বাড়ির লোকজন আমাদের না জানিয়ে সুপ্তিকে কিছুদিন পূর্বে জোরপূর্বক ধনবাড়ী উপজেলা বিয়ে দেয়।

সুপ্তি শশুরবাড়ি যেতে চায় না বলে তার মা ও নানার বাড়ির লোকজন তাকে মারধর করতো। আমরা ধারণা করছি সম্ভবত এজন্যই সুপ্তিকে নির্যাতন করে তারা মেরে ফেলেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে এই ঘটনা সঠিক তদন্ত সহ উপযুক্ত বিচার চাই।এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ মহব্বত কবীর বলেন, এ ঘটনায় নিহতের লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল শনাক্ত করা হয়েছে।

নিহতের পিতার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নেয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট পেলেই অভিযুক্ত আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।