Uncategorized

ছিনতাইকারী ওরা সবাই বেতনভুক্ত

ওরা থাকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে, কিন্তু চলে একসঙ্গে দলবদ্ধ হয়ে। সবাই ‘বেতনভুক্ত’ ছিনতাইকারী। চলার পথে নিজেদের শিকারে পরিণত করে নিরীহ লোকজনকে। টার্গেট নির্ধারণের পরই তাকে ঘিরে চলে ‘অপরাশেন’। ভিড়ের মধ্যেই টার্গেট করা ব্যক্তির কাছ থেকে মোবাইল-মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয় কৌশলে।

সাধারণ পথচারীদের বুঝতে দেওয়া হয় না গ্রুপভিত্তিক ছিনতাইকারী চক্রের অভিনব এ কৌশল। দিনে কৌশলে ছিনতাই, রাতে সরাসরি অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাই, এ কাজের জন্য দৈনিক ভিত্তিতে বেতনও পেতেন তারা।এদের বেতন নির্ভর করে ছিনতাই করা ফোনের সংখ্যার ওপর। শর্ত একটাই ছিনতাই করা মোবাইল জমা দিতে হবে চাকরি দাতার হাতে।

নকি পুলিশের হাতে ধরা পড়লে মামলা চালানো ও জামিনের ব্যবস্থা করে চাকরিদাতারা। ছিনতাই চক্রের এমন একটি দলের ১১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দারা।রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে জানান, গ্রেপ্তারদের কেউ মোবাইল চোর, কেউবা ছিনতাইকারী। কেউ ছিনতাই বা চুরি করা মোবাইলের ফোনের পাইকারি ক্রেতা। আবার কেউ চুরি করা ফোনের আইএমইআই নাম্বার পরিবর্তনে দক্ষ।

তিনি জানান, গ্রেপ্তারদের এদের মধ্যে দীপু এবং লাম ইসলাম নামের দুই জন মাসিক বেতন দিয়ে ছিনতাইকারী লালন করে। তবে শর্ত একটাই- চুরি বা ছিনতাই করা মোবাইল জমা দিতে হবে তাদের কাছে।এরপর চোরাই মোবাইলগুলো তারা তুলে দেয় আরেকটি গ্রুপের হাতে। বিশেষ অ্যাপস ব্যবহার করে ফোনের আইএমইআই নাম্বার পাল্টায় সেই গ্রুপটি। চতুর্থ ধাপে এসব মোবাইল ফোন চলে যায় গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে।

তিনি জানান, তাদের কাছ থেকে এমন ৮০টি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করা হয়। তবে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরও পুলিশ মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে পারেনা। এর বড় কারণ আইএমইআই পরিবর্তন।রাজধানীতে চোরাই ফোন বেচাকেনা সিন্ডিকেটের এমন একাধিক চক্রের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।সম্প্রতি মৎস্য ভবন এলাকা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বাসে ওঠা যাত্রীদের টার্গেট করে মোবাইল ফোন ছিনতাই করা তিনজনকে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানা পুলিশ।

এ চক্রের সদস্যরা দিনে বিভিন্ন রুটের গণপরিবহনে উঠে ছিনতাই করে। এক্ষেত্রে তারা পাঁচ শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন ও বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করে। শ্রেণিগুলো হচ্ছে— মহাজন, ঠেকবাজ, মিস্ত্রি, জমাদার ও পাসম্যান। তারা একসঙ্গে বাসে ওঠে। ৩-৪ জন ঠেকবাজের দায়িত্ব পালন করে টার্গেট করা যাত্রীকে ঘিরে জটলা তৈরি করে। একজন মিস্ত্রি জটলার মধ্যে দ্রুত মোবাইল-মানিব্যাগ হাতিয়ে নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে পাসম্যানের কাছে দিয়ে দেয়। পাসম্যান সেটা জমাদারের কাছে দেয় ও জমাদার দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে যায়।

এ সময় যাত্রী যদি বুঝতে পারেন যে তার মোবাইল-মানিব্যাগ নেই, তখন যদি তিনি চিৎকার করেন, তাকে ঘিরে যারা জটলা তৈরি করেছে, তারাও ওই যাত্রীর সঙ্গে যোগ দেয়। উদ্ধার করে দেয়ার কথা বলে তাকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায়। কাছাকাছি কোথাও নিয়ে তাকে মারধর শুরু করে। বাধ্য হয়ে ওই যাত্রী সেখান থেকে পালিয়ে যান। এটা গণপরিবহনে তাদের ছিনতাইয়ের কৌশল। আর সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা সংঘবদ্ধভাবে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করে। রিকশা-অটোরিকশার যাত্রী কিংবা পথচারীকে টার্গেট করে অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাই করে।

পুলিশ সূত্র জানায়, শাহবাগ রাজধানীর অন্যতম ছিনতাইপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। গত পাঁচ বছরে শুধু শাহবাগ এলাকায় ৮৩টি ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, শাহবাগ মোড়, মৎস্য ভবন মোড়, প্রেসক্লাবের সামনে, রেল ভবনের সামনে, হাইকোর্ট মাজার মোড়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে, টিএসসি মোড় ও বাংলা একাডেমির সামনের সড়কে বেশি ছিনতাই হয়।

%d bloggers like this: