শিক্ষা

কুমারখালীতে পদ্মার ভাঙনে স্কুল ভবন বিলীনহওয়ায় পরিত্যক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান

মাহমুদ শরীফ

প্রমত্বা পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে বিদ্যালয়ের প্রথম পাকা ভবন। ভাঙন ঠেকানোর জন্য জিও ব্যাগ ফেলেও লাভ হয়নি। ভাঙন দ্বিতীয় ভবনের কাছে চলে এলে বিদ্যালয়টিই সরিয়ে নেওয়া হয় গত বছর। ঠাঁই হয় ২৩ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষিত চার কক্ষের জরাজীর্ণ একটি ভবনে। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকদের উদ্বেগ রয়েই গেছে। এভাবেই চলছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চরঘোষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
জানা যায়, পদ্মা নদীতে নতুন ভবন বিলীন হলে ২০২৪ সালের আগস্টে বিদ্যালয়টি সরিয়ে চরঘোষপুর বাজার এলাকায় অবস্থিত পরিত্যক্ত কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনে স্থানান্তর করা হয়। তখন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল ১০৬ জন। একটি সিঁড়িঘরসহ চার কক্ষের কমিউনিটি বিদ্যালয়ের ভবনটি ২০০১ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। সেই জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই এখন চলছে পাঠদান। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৩০৫ জন। শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে দুটি কক্ষ। ফলে কক্ষ সংকটে ব্যহত হচ্ছে পাঠদান।
১৯৬৬ সালে পদ্মা নদীর কোলঘেঁষে স্থাপিত হয় চরসাদিপুর ইউনিয়নের ১৩ নম্বর চরঘোষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতি বছরই বিদ্যালয় সংলগ্ন পাড়ে ভাঙন দেখা দেয়। বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবন, খেলার মাঠ, মসজিদসহ অসংখ্য বসতি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের প্রথম পাকা ভবন ভেঙে যাওয়ার পর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ২০০০ সালে বিদ্যালয়ের ভবন পুনর্র্নিমাণ করা হয়। ভাঙন প্রতিরোধে কয়েক বছর আগে নদীপাড়ে জিওব্যাগ ফেলে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও থামেনি পদ্মার তান্ডব।
চরঘোষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আগের এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় ভবনটির মাত্র কয়েক হাত দূরে পদ্মা নদী। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, পদ্মার ভাঙন আতঙ্কে বছরখানেক আগে বিদ্যালয়টি দুই কিলোমিটার দূরে বাবড়ীতলা বাজারে স্থানান্তর করা হয়েছে। আগে স্কুলের প্রথম ভবন, একটি মসজিদ ও অনেক ঘরবাড়ি- কৃষিজমি ভেঙে গেছে নদীতে। পরে আরেকটা ভবন করা হয়। ভাঙন ঠেকাতে জিওব্যাগের বাঁধও দেওয়া হয়। তবুও বছর বছর ভেঙেই যাচ্ছে পাড়। গত বছর ভাঙন একদম কাছে এলে স্যাররা স্কুল নিয়ে চলে গেছেন।
বাজার এলাকায় গিয়ে পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ বেসরকারি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায় পাঠদান। কক্ষ সংকটে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান চলছে সংকীর্ণ সিঁড়িঘরে। শিক্ষার্থীরা জানায়, আগের স্কুলে নদীভাঙন আতঙ্কে থাকতাম, এখন ইট, বালু, সিমেন্ট খসে খসে মাথার ওপর পড়ে। আমরা সব সময় ভয়ে থাকি। বিদ্যালয়ে কক্ষ কম। দরজা জানালা ভাঙা। পড়াশোনা, চলাফেরায় খুবই সমস্যা হয়। আমরা একটি নতুন ভবন চাই।
এদিকে বিদ্যালয়টিতে বাড়ছে শিক্ষার্থী। আগে ১০৬ জন ছিল, বর্তমানে ৩০৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে কক্ষ মাত্র দুটি। পাঠদান চালাতে ঝুঁকিপূর্ণ সিঁড়িঘরেও ক্লাস নেওয়ার কথা জানান বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক মনিরুল ইসলাম। তিনি একটি ভবন নির্মাণ করার দাবী করেন।
প্রধান শিক্ষক আব্দুল আউয়াল বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে নদীপাড় থেকে বিদ্যালয় সরানো হয়েছে। তবে এখানে আবার নতুন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভবন নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন ভবনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।