16 May 2025 , 3:41:32 প্রিন্ট সংস্করণ
কুষ্টিয়ায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) এক নেতা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তে যোগদানের অভিযোগ উঠেছে। এলাকায় চাঁদাবাজি ও জমি দখলকারি এই জাসদ নেতার বিরুদ্ধে বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে জ্বালাও পোড়াও, লুটপাট, সশস্ত্র হামলা, চাঁদাবজি ও দখল বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। তার এধরনের বেপরোয়া কর্মকান্ডের জন্য ভূক্তভোগী ও সাধারণ মানুষসহ প্রকৃত বিএনপি’র নেতা-কর্মীরাও হতাশ হয়েছেন। ঐসব অপকর্ম করে এখন এই জাসদ নেতা বিএনপিতে ভর করে পার পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যিনি ইতিমধ্যে বিএনপিতে পদও বাগিয়ে নিয়েছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিএনপির প্রকৃত নেতাকর্মিরা। জাসদ ও আওয়ামীলীগ থেকে বিএনপির কমিটিতে ঢুকে পড়ায় সমালোচনা শুরু হয়েছে এই ইউনিয়নের ত্যাগি বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে। এলাকা ঘুরে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়ন জাসদের কর্মী আবদুল খালেক। যিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও কুষ্টিয়ার মিরপুর-ভেড়ামারা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনুর আস্থাভাজন ব্যাক্তি। চলতি বছরের গত বুধবার (৭ মে) মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তিনি কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক শহিদুল ইসলামের সাথে সাক্ষাৎ করে বিএনপিতে যোগদান করেছেন। বাগিয়ে নিয়েছেন কুর্শা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি পদ। তবে মিরপুর বিএনপির নেতারা বলছেন, আগামী ১৭ মে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার কথা রয়েছে। কমিটি না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরে মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউপিতে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে কতিপয় জাসদ সমর্থকরা। এ সময় তারা ঐ এলাকায় জ্বালাও পোড়া, লুটপাট, সশস্ত্র হামলা, চাঁদাবজি ও দখল বাণিজ্যে মেতে ওঠে । তাদের এধরনের বেপরোয়া কর্মকান্ডের জন্য ভূক্তভোগী ও সাধারণ মানুষসহ প্রকৃত বিএনপি’র নেতা-কর্মীরাও হতাশ হয়েছেন। দুই-একটি ঘটনায় মামলা হলেও অধিকাংশ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। আবার মামলা হলেও অদৃশ্য কারনে পুলিশ প্রশাসনও রয়েছে নিরবে। কুর্শা ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মকবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, পূর্নাঙ্গ মিরপুর উপজেলা কমিটি এবং ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত তারা উর্ধ্বতন মহলের নির্দেশে কোনো ভূমিকা নিতে পারছেন না। অন্যদিকে মিরপুর উপজেলা জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জামাল উদ্দিন কুর্শা ইউনিয়ন জাসদ যুব জোটের প্রচার সম্পাদক ও কুর্শা ইউনিয়ন জাসদের সভাপতি এবং কুর্শা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম ওমর আলীর আপন ভাতিজা। জামাল উদ্দিন জাসদ যুব জোটের প্রচার সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা না দিয়েই হয়েছেন মিরপুর উপজেলা জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। আর জামাল উদ্দিনের চাচা ওমর আলী কুর্শা ইউনিয়ন জাসদের সভাপতি ও কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে সে মিরপুর-ভেড়ামারা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনুর একনিষ্ট কর্মী ছিলেন। এলাকাবাসী বলছে, গত ৫ আগস্টের পরে মাজিহাট গ্রামের মৃত আব্দুছ সামাদের ছেলে আব্দুল খালেক ও তার ছেলে জামাল উদ্দিন হঠাৎ করে ভোল পাল্টিয়ে বিএনপির পরিচয়ে সংঘন্ধ হয়ে ১০/১৫ জনের একটি দল এলাকায় জ্বালাও পোড়া, লুটপাট, সশস্ত্র হামলা, দখল বাণিজ্য চালিয়েছে। কুর্শা ইউনিয়ন জাসদের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম ওমর আলীর ভাই আব্দুল খালেকও জাসদের লোক। গত ৬ আগস্ট কুর্শা ইউনিয়নের মাজিহাট গ্রামের ৩টি বাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা। এরপর থেকে এলাকার নিরিহ বিভিন্ন মানুষকে মিথ্যা মামলা ও হামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করতে থাকে। সবশেষ গত ২০ ডিসেম্বর জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে কতিপয় সশস্ত্র অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মাজিহাট বাজারে আরিফুল ইসলাম অভি নামে এক যুবককে চাপাতি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টায় চালায়। এসময় স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে তারা ফাঁকা গুলি বর্ষন করে পালিয়ে যায়। এদিকে সাধারণ মানুষের ভাষ্য মতে, এই সংঘবদ্ধ চক্রটি বিএনপি’র কেউ না, তারা ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পরে প্রতিপক্ষের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভাড়াটিয়া দখলবাজ, মামলা বাণিজ্যের নামে চাঁদাবাজি সহ অরাজকতা করে যাচ্ছে। গত নয় মাসে তাদের অপ্রতিরোধ্য চাঁদাবাজীর শিকার হয়েছেন প্রায় শতাধিক পরিবার। অনেকে ভয় ও আশঙ্কায় মুখ না খুললেও প্রকাশ্যে হয়রানি, মারধর ও চাঁদাবাজীর শিকার হয়েছেন। যাদের মধ্যে মাজিহাট গ্রামের সেলিম উদ্দিনের ছেলে পুলিশ কন্সটেবল সাইদুল ইসলাম, হাসেম আলীর ছেলে নূর ইসলাম, বাবলু ডাক্তারের মেয়ের জামাই আকতার হোসেন, মৃত জমির মুন্সীর ছেলে এনামুল হক, মৃত ইয়াজদ্দিনের ছেলে আশাদুল, মৃত আবুল হোসের ঘর জামাই আমানত, মৃত ভোলা মালিথার ছেলে অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক নাসির উদ্দিন, মৃত বাদশা ব্যাপারির ছেলে জান আলম, শাহাদত ব্যাপারীর ছেলে হাসান, ফেলু মিস্ত্রির ছেলে বিল্লালসহ অনেকেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কুর্শা ইউনিয়ন জাসদের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম ওমর আলীর আপন ভাই আব্দুল খালেক ও তার ভাতিজা জামাল উদ্দিন বিএনপিতে ভর করে পার পেতে চাচ্ছে। কেননা গত নয় মাসে তারা এলাকায় যে অরাজকতা করেছে, তা থেকে বাঁচতে হলে বিএনপিতে ভর করা ছাড়া উপায় নাই। এরই ধারাবাহিকতায় জামাল উদ্দিন কৌশলে মিরপুর উপজেলা জাতীয়বাদী তাঁতী দলের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং তার বাবা আব্দুল খালেকও অর্থের বিনিময়ে কুর্শা ইউনিয়ন বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক থেকে ইউনিয়ন বিএনপি’র সহ-সভাপতি হতে যাচ্ছেন। জামাল উদ্দিন কুর্শা ইউনিয়ন জাসদের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান ওমর আলীর আপন ভাতিজা ও আবদুল খালেকের ছেলে। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের নয় মাসের মাথায় জাসদ ও আওয়ামীলীগ থেকে বিএনপির কমিটিতে ঢুকে পড়ায় সমালোচনা শুরু হয়েছে। এই ইউনিয়নের ত্যাগি বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলছে আলোাচনা সমালোচনার ঝড়। এছাড়া কুুর্শা ইউনিয়ন বিএনপিতে পদ পেতে মিরপুর উপজেলা বিএনপির একনেতা ও পৌর বিএনপি’র এক নেতাকে নগদে ৫ লাখ টাকা পকেট মানি দিতে হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি’র এক শীর্ষ নেতা পেয়েছেন লেটেস্ট ভার্সনের আই ফোন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে চান তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। বহিরাগতমুক্ত দল চান তারা।















