জাতীয়

সাংবাদিকদের সত্য উদ্ঘাটন ও প্রকাশে নির্ভীক হতে হবে: কাদের গনি চৌধুরী

বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, সাংবাদিকদের সত্য উদ্ঘাটন, অনুসন্ধান ও প্রকাশে নির্ভীক হতে হবে। অর্ধ সত্য নয়, সত্য ও অসত্যের মিশ্রণও নয়,  তাদের প্রকাশ করতে হবে অখণ্ড ও পূর্ণ সত্য।

কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়ন আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে তিনি আজ এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের চাকরির ঝুঁকি, জীবনের ঝুঁকিসহ নানা ঝুঁকি নিতে হয়। সাংবাদিকরা এই ঝুঁকি না নিলে সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে কীভাবে? অসহায় আত্নসমর্পণ সাংবাদিকদের মানায় না। বিগত সরকারের সময় আমাদের সাংবাদিকদের বিরাট অংশকে আমরা অসহায় আত্মসমর্পণ করতে দেখেছি সেল্ফ সেন্সর শিপের মাধ্যমে।’

তিনি বলেন, মনে রাখবেন সত্য প্রকাশে বাধা ও বিপদের সম্মুখীন হলেও সমাজের সাধারণ মানুষ সাংবাদিকদের পাশে এসে দাঁড়ায়।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, জীবনে কোনো ক্ষেত্রে মিথ্যার সঙ্গে আপস করা চলবে না। তাহলে সাংবাদিকতা হবে না। সত্যের তরে দৈত্যের সাথে লড়াই করাই সাংবাদিকতা। সত্য প্রকাশই হতে হবে গণমাধ্যমের একমাত্র অঙ্গীকার।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, সাংবাদিকতা হচ্ছে সবচেয়ে জীবন্তু ও আধুনিক পেশা। বুদ্ধিবৃত্তিক পেশা, সাংবাদিকতা কখনই মূর্খজনের পেশা নয়, পেশা হিসেবেই সাংবাদিকতা বুদ্ধিদীপ্ত মানুষের পেশা। যে মানুষ অতীতকে ধারণ করে বর্তমানের সঙ্গে তা মিলিয়ে ভবিষ্যতের নির্দেশনা দিতে না পারেন, ভাষায়-ব্যাখ্যায়-উপস্থাপনায় যিনি মেধার ছোঁয়া না বুলাতে পারেন, তিনি আর যা-ই হোন সাংবাদিক হতে পারেন না। কিছু মৌলিক কাঠামোই সাংবাদিকতাকে আধুনিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পেশার শক্ত ভিত্তি দিয়েছে।

তিনি বলেন, সাংবাদিকতাকে দাঁড়াতে হয় এই মৌলিক ভিত্তির উপর। একটি সমাজে মত প্রকাশের স্বাধীনতাটি যদি নিশ্চিত না থাকে, সমাজটি যদি চিন্তা ও বিবেকের জন্য খোলা প্রান্তর অবারিত করতে না পারে, সেই সমাজে স্বাধীন বা মুক্ত সাংবাদিকতা বিকশিত হতে পারে না। সাহসী ও বুদ্ধিবৃত্তিক সাংবাদিকতার ভিতও দৃঢ় হয় না।

তিনি বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলি কিন্তু নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতার কথা বলি না। আজকাল প্রায়শই সংবাদ মাধ্যম বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্বশীলতা ও নৈতিকতার বিষয়টি উচ্চারিত হয় জোরেসোরে। সংবাদ মাধ্যমের প্রথাগত দায়িত্বটি মানুষকে তথ্য জানানো, সেই তথ্য জানানোর মধ্য দিয়েই মানুষকে শিক্ষিত ও সচেতন করে তোলা, তথ্য এবং আলোচনার মাধ্যমে বিনোদন দেয়া এবং সময়ের প্রয়োজনে মানুষকে উদ্দীপ্ত করে তোলা।’

বিএফইউজে মহাসচিব বলেন, দায়িত্বশীলতা প্রকৃতপক্ষে সাংবাদিকতার সঙ্গে এমনভাবে ঘনিষ্ঠ যে সেজন্য পৃথক কোনও সংজ্ঞার প্রয়োজন হয় না। কারণ সাংবাদিকতা পেশাটিই দায়িত্বশীল পেশা। প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিকতা কখনও ‘অ-দায়িত্বশীল’ হতে পারে না। যারা দায়িত্বহীন ভাবে সাংবাদিকতা পেশাকে ব্যবহার করেন, তারা আর যাই হোক ‘সাংবাদিক’ নন।

তিনি বলেন, সংবাদ মাধ্যমের দায়বদ্ধতা সমাজের প্রতি। সমাজের পাঠক বা দর্শকই তো তার ভোক্তা। তারাই মূল্যায়ন করবেন। ভালো লাগলে গ্রহণ করবেন, না হলে প্রত্যাখ্যান করবেন। সেই গণমাধ্যমই টিকে থাকবে, যেটি মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে। আস্থা অর্জন করা সম্ভব হবে যদি সংবাদমাধ্যমটি নৈতিকতার দিক থেকে পরিশীলিত হয়, পেশাদারিত্বের দিক থেকে পরিশীলিত হয়, সত্যপ্রকাশে সাহসী- আপসহীন হয়।

আবার রাষ্ট্রের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতির গণমাধ্যমের দায়বোধ থাকা জরুরি। মনে রাখতে হবে, কোনও স্বাধীনতাই নিরঙ্কুশ নয়।

তিনি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আর বিদ্বেষ ছড়ানো সমার্থক নয়। কোনো তথ্য যাচাই না করে তার ওপর ভিত্তি করে যুদ্ধ ঘোষণা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নয়। সমাজে ন্যায্যতার পক্ষে গণমাধ্যমকে থাকতে হবে। তবে সমাজকে শিক্ষিত করে তোলাও গণমাধ্যমের দায়িত্ব। শিক্ষিত সমাজই বুঝবে গণমাধ্যমের কাছে কতটা প্রত্যাশা করা সঙ্গত। তাই বলা হয়, শিক্ষিত সমাজে সাংবাদিকরা বেশি নিরাপদ।

এ সাংবাদিক নেতা বলেন, সাংবাদিকতার মৌলিক শর্তগুলোই সাংবাদিকতাকে রক্ষা করেত পারে।

কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বাচ্চুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহী, বিএনপি চেয়ারপারসনের  উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি আল মামুন সাগর, জামায়াত সেক্রেটারি সুজা উদ্দিন জোয়ার্দার, ইসলামি আন্দোলনের আহমদ আলী, বিএফইউজের দফতর সম্পাদক আবু বকর, পিপি এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ও এড. সাতিল মাহমুদ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শামীউল হাসান অপু।

আরও খবর

Sponsered content