সারা দেশ

যৌনপল্লী ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান ৩৫০ নারী

করোনা ভাইরাসের সময় থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন যৌনকর্মীরা। পদ্মা সেতুর চালুর পর পল্লীতে শুরু হয়েছে হাহাকার। লোকজনের যাতায়াত কমে যাওয়ায় জীবিকা সংকটে রয়েছেন তারা। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীরা। এমন পরিস্থিতিতে যৌনপল্লী ছাড়তে চান অন্তত ৩৫০ জন নারী।জানা গেছে, যৌনপল্লীতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস। এখানে যৌনকর্মীর সংখ্যা এক হাজার ৩০০ জন। এর মধ্যে এক হাজার ৫০ জন নিয়মিত। বাকিরা অনিয়মিত। প্রায় ৩০০ বাড়ি রয়েছে। শিশুর সংখ্যা ৬০০। বর্তমানে সাড়ে ৩০০ বয়স্ক নারী রয়েছেন।

পল্লী ঘুরে দেখা গেছে, এখন আর সেই আগের মতো ভিড় নেই। সুনসান নীরবতা চারদিকে। এক সময় পল্লীর প্রধান গলিতে ভিড় লেগে থাকলেও সেই গলি এখন অনেকটাই ফাঁকা। লোকজনের আশায় নারীরা সেজে ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তবে এখন আর লোকজন সেভাবে আসে না বলে জানান বেশ কয়েকজন যৌনকর্মী।সেখানে কথা হয় ফাতেমার সঙ্গে। তিনি বলেন, দিন তারিখ মনে নেই কবে আসছিলাম। তবে শুধু মনে আছে, যেদিন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়, সেদিন এখানে আমার আসা। আমার বাড়ি ঝিনাইদহ। তিন সন্তান রয়েছে।

তারা এই জগত থেকে অনেক দূরে। আমি একাই পল্লিতে আছি। আমার বয়স ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে। পল্লীর ভেতরে মানুষের বাড়িতে কাজ করে খাই। কাজের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এখান থেকে চলে যেতে চাই।৫৭ বছর বয়সী ছন্দা বলেন, পল্লীর অবস্থা এক সময় ভালো ছিল। বর্তমানে খুব খারাপ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট ও লঞ্চ ঘাটে লোকজন আসে না। সবাই পদ্মা সেতু হয়ে যায়। তাই আমাদের হাহাকার শুরু হয়েছে। আমরা এখন চলে যেতে চাই। কিন্তু আমাদের তো যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই।

সরকার যদি আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে বেঁচে থাকতে পারবো।আরেকজন বলেন, দৌতলদিয়া ফেরি ঘাটে যখন যানজট লেগে থাকতো তখন ভালো ছিলাম। লোকজনও বেশ আসতো পল্লিতে। কিন্তু এখন কেউ খবর নেয় না। আমরা এখান থেকে চলে যেতে চাই। সরকার যদি আশ্রয়ণের ঘরে থাকার জায়গা করে দিতেন আমরা চলে যেতাম।পল্লীতে রয়েছে ‘অসহায় নারী ঐক্য সংগঠন’। সংগঠনের সভানেত্রী ঝুমুর বেগম বলেন, পল্লীর মধ্যে ৩৫০ জন বয়স্ক নারী আছেন। তাদের চরম খাদ্য সংকট শুরু হয়েছে। তারা এখন চলে যেতে চায়।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন এসেছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘৫০ বছরের ঊর্ধ্বে যারা আছেন তাদের একটি তালিকা প্রস্তুত করতে’।গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় যৌনপল্লী দৌলতদিয়া। পদ্মা সেতুর চালুর পর এখানে ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। আমি সরেজমিনে সেখানে গিয়েছিলাম। পল্লীর সবাই আমাদের সমাজের অংশ। সেখানে কয়েকটি সংস্থা কাজ করে। আমি নির্দেশনা দিয়েছি ৫০ বছরের ওপরের নারীদের তালিকা প্রস্তুত করতে। চিন্তাভাবনা করবো তাদের কীভাবে পুনর্বাসন করা যায়।