রাজনীতি

কুষ্টিয়ায় বিএনপির আহবায়ক কমিটি গুলোতে স্বজনপ্রীতি করায় পদবঞ্চিতদের সংবাদ সম্মেলন

কুষ্টিয়ার ছয় উপজেলাতে বিএনপির আহবায়ক কমিটি গুলোতে স্বজনপ্রীতি করায় পদবঞ্চিত নেতাকর্মী সংবাদ সম্মেলন করেছে। বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করেছে পদবঞ্চিত ত্যাগী-পরিক্ষিত নেতাকর্মী। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতা অ্যাড. শামিমুল হাসান অপু। তিনি বলেন, গত ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর জেলা বিএনপির দুই সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদিত হয়। সবার প্রত্যাশা ছিল, অনুমোদিত কমিটির আহবায়ক ও সদস্যসচিব ত্যাগী, পরীক্ষিত ও বিগত ১৬ বছরে কারা নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের দিয়ে পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি করবেন। কিন্তু ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহবায়ক কমিটিতে ত্যাগীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিতর্কিত আহবায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে গত বছরের ৬নভেম্বর বিক্ষোভ মিছিল ও গত ১৭নভেম্বর মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন পদবঞ্চিতরা। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজল মাজমাদার, মিরাজুল ইসলাম ও আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক বশিরুল আলম চাঁদ, জেলা বিএনপির সাবেক ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক মেজবাউর রহমান পিন্টু, জেলা কৃষক দলের সাবেক সভাপতি গোলাম কবির সহ পদবঞ্চিত ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতাকর্মী। এদিকে বিতর্কিত জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পরে ছয় উপজেলার আওতাধীন যে কয়টি আহবায়ক কমিটি গঠন করেছে সে কমিটি গুলোতে স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। এছাড়া বিগত সময়ে আওয়ামী সরকারের সাথে আতাতকারীদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে যারা সদস্য পদে রয়েছে তাদেরকে পুনরায় পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে পদ দেওয়ায় পরিস্কার বোঝা গিয়েছে সকল কমিটি স্বজনপ্রীতি। পক্ষান্তরে দৌলতপুর থানা বিএনপির কমিটিতে ত্যাগীদের বাদ দেওয়ায় উত্তেজনা বিরাজ করে। অভিযোগ উঠেছে মিরপুর থানা বিএনপির আহবায়ক আশরাফুল ইসলাম শাহিন দীর্ঘ ১৬বছর বিএনপির রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় ছিলেন। এছাড়া ১নং সদস্য আ’লীগ নেতা কামারুল আরেফিনের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। ২৭নং সদস্য আলী হীম ৩০বছর বিএনপির রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় ও ২৮নং সদস্য জাহাঙ্গীর সৌদিআরবে। কুমারখালী থানা বিএনপির সাবেক আহবায়ককে সদস্য সচিব, সাবেক কমিটির ১নং যুগ্ম আহবায়ক হাফিজ চেয়ারম্যানকে ৪নং যুগ্ম আহবায়ক করায় তাদেরকে অপমান করার শামিল এবং বিগত ১৬বছর বিএনপির রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় আনসার প্রামানিককে আহবায়ক করায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কুমারখালি পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মমিনুল ঢাকাতে অবস্থান করছে তাকে পদ দেওয়া হয়েছে। খোকসা থানা বিএনপির আহবায়ক করা হয়েছে সাবেক জাসদ নেতা আলাউদ্দিন খান, যিনি গত বছরের ৫আগষ্ট পরে লুটপাট ও দখল দারিত্বে ছিলেন। খোকসা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আনিস উজ জামান স্বপনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে, যিনি বর্তমানে পিএলআর এ আছেন। এই কমিটিতে ১৪নং সদস্য আনোয়ার ও ২৩নং সদস্য পোকন মল্লিক আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। খোকসা পৌর বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিব এস এম মোস্তফা শরিফ রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় ও অনুপস্থিত ছিলেন। কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক রবিউর রহমান রবিউল বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবউল আলম হানিফকে ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে আওয়ামী লীগ দলে ওই সময় যোগদান করেন। এ কমিটিতে জেলা বিএনপির ৭জন সদস্যকে পৌর বিএনপির কমিটিতে রাখা হয়েছে। এছাড়াও জেলার বাগুলাট ইউনিয়নে সার্চ কমিটির আহবায়ক আলো জাসদ নেতা ও সদস্য সচিব আওয়ামী লীগ কর্মী, চাপড়া ইউনিয়ন কমিটির ৭জন সদস্যর মধ্যে ৬জন আওয়ামী লীগ নেতা। খোকসা মোড়াগাছা কমিটির শিহাব মৃধা, গোপকগ্রাম কমিটির মাসুদ আহসান শিবলী আওয়ামী লীগ নেতা। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার গোস্বামী দুর্গাপুরের কমিটিতে নুরুদ্দীন, মনোহরদিয়া ইউনিয়নের হাবিবুর রহমান সদর থানা বিএনপির সদস্য যিনি আওয়ামী লীগ নেতা। মিরপুর আমবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির নজরুল ইসলাম নায়েব, বারুইপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির মনোনীত সাবেক চেয়ারম্যান প্রার্থী মাসুদ হোসেন সহ অধিকাংশ নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। যাদের বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে ছবি রয়েছে। বিএনপির সকল কমিটিতে আওয়ামী লীগ ও জাসদের যে সকল নেতাকর্মী পদ পেয়েছেন তাঁদের অধিকাংশই জেলা বিএনপির আহবায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকারের একান্ত আস্থাভাজন ও অনুগত বলে জানান। এদিকে আরো জানা গিয়েছে, জেলা বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিব আওয়ামী লীগ নেতা হানিফের স্ত্রী চেয়ারম্যান কুষ্টিয়া লালন ও কলা বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে ভর্তির অনুমোদন করিয়েছে। সম্প্রতি কুষ্টিয়া ইসলামীয়া কলেজ অধ্যক্ষকে অপহরণ করা হয়েছিলো জেলা বিএনপির নেতৃত্বে, যার প্রতিবাদে কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে। কুষ্টিয়া পৌরসভার এক সন্ত্রাসী কাউন্সিলর সদ্য ঘোষিত পৌর বিএনপির নেতা শীর্ষ স্থানীয় নেতার ছত্রছায়ায় থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে সাহস পাচ্ছে না বলে জানান। দ্রুত সময়ে কেন্দ্রীয় ভাবে এর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানানো হয়।

আরও খবর

Sponsered content