7 January 2025 , 3:55:03 প্রিন্ট সংস্করণ
সকাল ১১ টা বাজে। তবুও টাঙানো হয়নি জাতীয় পতাকা। প্রধান ফটকে ঝুলছে তালা। আসেনি চেয়ারম্যান, সচিব ও মেম্বররা। কয়েকজন গ্রাম পুলিশ বসে আছেন। আর ফিরে যাচ্ছেন সেবা প্রত্যাশীরা। গতকাল সোমবার (৬ জানুয়ারি) কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ৮ নম্বর যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদে সরেজমিন গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশীরা। অথচ সকাল ৯ টার মধ্যে কার্যালয় খুলে পতাকা উত্তোলনের কথা। এসময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাম পুলিশ বলেন, গতকাল রোববার দুপুরে বিএনপির নেতাকর্মীরা তালা লাগিয়েছেন। সন্ধায় নেতারাই পতাকা খুলে নিয়ে গেছে। আর আজ (গতকাল) সকালে কার্যালয় বন্ধ দেখে সচিব চলে গেছেন। জনগণ এসে ফিরে ফিরে ফিরে যাচ্ছেন। পরে খবর পেয়ে সকাল ১১ টা ৫৩ মিনিটের দিকে পরিষদ চত্বরে আসেন কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ। তিনি এসে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে বৈঠক করেন।
বৈঠকে বক্তব্য রাখেন যদুবয়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম আসাদ, ইউনিয়নের যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর মেম্বর আনিছুর রহমান, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বর আব্দুল মালেক প্রমূখ। তাঁরা বক্তব্যে, পরিষদ চত্বরে নিষিদ্ধ সংগঠনের জন্মদিন উদযাপনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, আওয়ামী লীগের দোষর চেয়ারম্যান মিজানুরকে অপসারণের দাবি জানান। এসময় তাঁদের দাবি পূরণে আশ্বস্ত করেন ওসি। আর দুপুর ১২ টা ১৩ মিনিটের দিকে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি সিরাজ খাঁ পরিষদের প্রধান ফটকের তালা খুলে দেন। এবং পরিষদে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মেম্বর ও গ্রাম পুলিশরা। তবে দাবি পূরণের আগ পর্যন্ত চেয়ারম্যান কক্ষের তালা খুলবেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেজন্য পরিষদের প্রধান ফটকের তালা খুললেও চেয়ারম্যান না থাকায় সকল ধরনের সেবা বন্ধ রয়েছে। দুপুর ২টার দিকে ফের সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পরিষদে ছাদে উড়ছে পতাকা। প্রধান গেট অন্যান্য কক্ষ খোলা থাকলেও চেয়ারম্যানের কক্ষে ঝুলছে তালা। আর কক্ষে বসে সচিব গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলছেন। এসময় চৌরঙ্গী বাজারের মেসার্স ভাই ভাই ট্রেডার্সের মালিক ইয়াসির আরাফাত বলেন, ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ। নবায়ন করার জন্য এসেছি। তবে চেয়ারম্যান না থাকায় সেবা বন্ধ। ফিরে যাচ্ছি।
পরিষদের সচিব রেজাউল ইসলাম বলেন, পরিষদের তালা খুললেও চেয়ারম্যান কক্ষে তালা রয়েছে। চেয়ারম্যানও নেই। সেজন্য সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন গ্রাহকরা। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে সেবার কার্যক্রম চালু করা হবে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত শনিবার রাত ৮ টার দিকে যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ছাত্রলীগের ৭৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে কেক কেটে বিভিন্ন শ্লোগান দেওয়া হয়। ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার নেতৃত্বে এই কেক কাটা হয়। পরে কেক কাটার ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার হলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এর প্রতিবাদে ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা রাত ৯ টার দিকে চেয়ারম্যান কার্যালয়ে তালা দেন। এরপর গত রোববার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে যদুবয়রা জয়বাংলা বাজার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মিছিল যদুবয়রা পশুহাটের টোলঘরে ভাংচুর করে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যায়। সেখানে পরিষদ থেকে সচিব, গ্রাম পুলিশ ও সেবা প্রত্যাশীদের বের করে দেন এবং পরিষদ ভবনের প্রধান ফটকের গেটে তালা লাগিয়ে দেন নেতাকর্মীরা। গতকাল সোমবার সকালে দুই শিশু বাচ্চা নিয়ে পরিষদে সেবা নিতে এসেছেন ইউনিয়নের বিলকাটিয়া গ্রামের আলিফ হোসেনের স্ত্রী বন্যা খাতুন। তিনি বলেন, স্কুলে ভর্তির জন্য বাচ্চার জন্মনিবন্ধন করা জরুরি। গতকাল এসে ফিরে গেছি। আজও ফিরে গেলাম। মানুষের কষ্ট দেখার কেউ নাই। এসময় কেশবপুর গ্রামের যুবক মো. সিজান বলেন, পাসপোর্ট করার জন্য চেয়ারম্যানের প্রত্যায়ন পত্র দরকার। গত রোববার দুপুরে এসেছিলাম। সেসময় অনেক লোকজন এসে সবাইকে বের করে দিল। আজও (গতকাল) কার্যালয় বন্ধ।
যদুবয়রা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম আসাদ বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের জন্মদিন উদযাপনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, আওয়ামী লীগের দোষর পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিতে প্রশাসনের কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করায় কার্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। থানাতেও অভিযোগ দেওয়া হবে। যদুবয়রা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক ও যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ফোনে বলেন, কার্যালয়ে তালা থাকায় এবং পরিস্থিতি কিছুটা অশান্ত থাকায় পরিষদে যাওয়া হয়নি। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে পরিষদের তালা খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে ক্ষতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। দ্রুত সেবা চালুর ব্যবস্থা করা হবে। জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, পরিষদে সেবা বন্ধ থাকার সুযোগ নেই। ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।