এক্সক্লুসিভ

মৃত হাতিকে মাটিচাপা দেওয়ায় রাতভর ৫৫ হাতির অবস্থান

ইংরেজিতে প্রবাদ আছে, ‘এলিফ্যান্টস নেভার ফরগেট’। অর্থাৎ হাতিরা কখনো ভোলে না। হাতিরা নিজেদের শুঁড় দিয়ে একে অন্যকে অনুভব করে। তাদের মধ্যে রয়েছে বন্ধুত্বের বন্ধন, তীব্র আবেগ। এসব প্রবাদ কিংবা গবেষকদের ব্যাখ্যার প্রমাণ মিললো শেরপুরে। এক মৃত হাতিকে ঘিরে বন্য হাতির পাল যা কাণ্ড ঘটালো, তা অবিস্মরণীয় বটে!

গত বৃহস্পতিবার শেরপুরের নালিতাবাড়ীর বাতকুচি টিলাপাড়া গ্রামে জেনারেটরের তারে পেঁচিয়ে একটি বন্য হাতির মৃত্যু হয়। ধানখেতে সেই হাতির নির্মম মৃত্যুর সাক্ষী ছিল ২৫-৩০টি হাতির একটি পাল। এর পর থেকেই ওই এলাকায় শুরু হয় বন্য হাতির চিৎকার-চেঁচামেচি।

ঘটনা তীব্র হয় ওেই স্থানে মৃত বন্য হাতিকে মাটি চাপা দেওয়ার পর। গত শুক্র ও শ‌নিবার রাতে ওই স্থানে ভিড় করে আশেপাশে থাকা হাতির পালও। অন্তত ৫৫টি বন্য হাতির ডাকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়। গ্রামবাসী একদিকে যেমন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে, তেমনি হাতির পাল একের পর এক ধানখেত নষ্ট করায় চিন্তাও বাড়াচ্ছে।

বাতকুচি গ্রামের রুবেল আহমেদ (৩৭) বলেন, হাতির পাল এমন বিকট চিৎকার করছে, সবাই বেশ ভয়ে আছি। রাতে বের হতে পারছি না। কখন বাড়িতে এসে আক্রমণ চালায়, তারও নিশ্চয়তা নেই। কোনো প্রতিরোধ না থাকায় ধানখেত পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে দিচ্ছে বন্য হাতিরা।

গত শুক্রবার রাতে হাতির মৃত্যুর ঘটনায় ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ১১ জনের নামে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা করেছেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরই মধ্যে জেনারেটর চালক শহিদুল ইসলাম (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শেরপুরের নালিতাবাড়ীর বাতকুচি টিলাপাড়া গ্রামে জেনারেটরের তারে পেঁচিয়ে একটি বন্য হাতির মৃত্যু হয়।  ছবি: সংগৃহীত

শেরপুরের নালিতাবাড়ীর বাতকুচি টিলাপাড়া গ্রামে জেনারেটরের তারে পেঁচিয়ে একটি বন্য হাতির মৃত্যু হয়। ছবি: সংগৃহীত

জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে উপজেলার দুজন ভেটেরিনারি সার্জন ময়নাতদন্তের আলামত সংগ্রহের পর সেখানেই ওই হাতিকে মাটিচাপা দেওয়া হয়। সন্ধ্যার পরপরই ওই স্থানে জড়ো হয় অন্তত ৫৫‌টি বন্য হাতি। বাতকুচি গ্রামের পাহাড়ের ঢালে কৃষকের আমন খেত নষ্ট করে দিচ্ছে হাতির পালটি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত কয়েকদিনে বাতকুচি, শমশ্চুড়া ও কোচপাড়া গ্রামের প্রায় ১০ একর জমির ফসল নষ্ট করে দিয়েছে বন্য হাতির পাল। বাতকুচি টিলাপাড়া গ্রামের গৃহিণী আয়শা বেগম বলেন, ‘আত্তি (হাতি) মরণের পর থাইকা, আরও মেলা আত্তি এক লগে অইছে। যেমনে চিকার মারে, আমরা ডরের মধ্যে আছি।’

মধু‌টিলা ইকোপা‌র্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা র‌ফিকুল ইসলাম বলেন, এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যসহ বন বিভাগের লোকজন হাতির পালকে পাহাড়ে ফিরিয়ে দিতে কাজ করছেন। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করতে বলবে বন বিভাগ।

হাতির মৃত্যুর ঘটনায় অন্য আসামিদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ‌ছানোয়ার হোসেন।

ডেইলি-বাংলাদেশ

আরও খবর

Sponsered content