31 August 2024 , 1:21:57 প্রিন্ট সংস্করণ
বর্ণিল ক্যারিয়ার। জীবনের গল্পও তেমন। ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন নায়করাজ উপাধি। অভিনয়ের জন্যই বাঙালির হৃদয়ে দাগ কেটে রয়েছেন। আজ এ কিংবদন্তি অভিনেতার মৃত্যুবার্ষিকী। তবু কে বলবে তিনি নেই। শারীরিক উপস্থিতি না থাকলেও সিনেপ্রেমীদের মনোজগতে তাঁর ঠাঁই বাংলা ও বাংলাদেশি চলচ্চিত্র যত দিন থাকবে। কিন্তু অভিনয়ের শুরুটা কেমন ছিল নায়করাজের? ছেলেবেলায় অভিনয়ের অনুমতির জন্য পরিবার একটি শর্ত দিয়েছিল রাজ্জাককে।
শর্তটা হচ্ছে বিয়ে। আর সে জন্যই মাত্র ১৯ বছর বয়সে খায়রুন্নেছা লক্ষ্মীকে বিয়ে করেছিলেন নায়করাজ। একটু পেছনের দিকে ফেরা যাক। ২০১৫ সালে এক সাক্ষাৎকারে ওই গল্প শুনিয়েছিলেন রাজ্জাক। বলেছিলেন, “বিয়ে করেছি খুব অল্প বয়সে। কারণ, আমরা যে পাড়ায় থাকি, বান্ধবী অনেক। প্লাস নাটকের সোর্সে আরও মেয়েদের সঙ্গে আলাপ শুরু করাতে ফ্যামিলি ভয় পেয়ে গেল, কোনও অঘটন না ঘটিয়ে ফেলি! একদিন বাড়ি ফিরে দেখি মিটিং হচ্ছে। কী মিটিং? ‘তুমি নাটক করতে পারবে না।’ নাটক আমি ছাড়ব না। ডিসিশন নিল, ‘নাটক যদি করো, তাহলে তোমাকে বিয়ে করতে হবে।’ আমি এই বয়সে বিয়ে করব না। বলল, ‘কোনও প্রবলেম নেই।’ বিয়ে করলে নাটক করতে পারব? ‘হ্যাঁ।
ঠিক আছে, দাও বিয়ে। তবু নাটক ছাড়ব না। এক বছরের মধ্যে বিয়ে করলাম। তখন আমার বয়স ১৯। আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা খুব ভালো ছিল। তাকে আমি বলেছি, সেও জানত। যেহেতু আমার পাড়া থেকে বেশি দূরে না, মাইল তিনেক দূরে তাদের বাড়ি। যখন বিয়ে হয়নি, সে আমার নাটকও দেখেছে। তার সঙ্গে একটাই কথা ছিল—নাটক আমার প্রথম প্রেম। এর পরে কিন্তু তুমি। সেটা সে সারা জীবন মেইনটেইন করেছে। ফিল্মে আসার পরও করেছে। তার পর তো ইতিহাস। একের পর এক হৃদয়গ্রাহী সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। হয়েছেন কালজয়ী অভিনেতা।
তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো রুপালি জগৎকে করেছে আলোকিত। শোনা যায়, এ অভিনেতাকে নায়করাজ উপাধি দিয়েছিলেন চিত্রালীর সম্পাদক আহমদ জামান চৌধুরী। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ৭৫ বছর বয়সে মারা যান রাজ্জাক। নায়করাজ রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার খানপুর হাই স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় সরস্বতী পূজা চলাকালীন মঞ্চনাটকে অভিনয়ের জন্য তাঁর শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁকে বেছে নেন নায়ক, অর্থাৎ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা নাটক ‘বিদ্রোহী’-তে গ্রামীণ কিশোর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নায়করাজের অভিনয়জীবন শুরু।
১৯৬৪ সালে রাজ্জাক সপরিবারে বাংলাদেশে পাড়ি জমান। চলচ্চিত্রকার আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে ‘তের নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ ছবিতে ছোট একটি চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। এর পর ‘কার বউ’, ‘ডাক বাবু’-তেও অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে তাঁর প্রথম ছবি জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’। সেই থেকে তিনি তিন শতাধিক বাংলা ও কয়েকটি উর্দু চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। পরিচালনা করেন ১৬টি চলচ্চিত্র।
নায়ক রাজ্জাকের অভিনয় করা উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে—বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, দর্পচূর্ণ, এতুটুকু আশা, নীল আকাশের নিচে, জীবন থেকে নেয়া, নাচের পুতুল, অশ্রু দিয়ে লেখা, ওরা ১১ জন, অবুঝ মন, রংবাজ, আলোর মিছিল, শুভ দা, অভিযান, যোগাযোগ, অন্ধবিশ্বাস, টাকা আনা পাই, ছন্দ হারিয়ে গেল, মানুষের মন, অতিথি, যোগ বিয়োগ, মধু মিলন, যে আগুনে পুড়ি, দুই পয়সার আলতা, অনেক প্রেম অনেক জ্বালা, দ্বীপ নেভে নাই, পিচঢালা পথ, দুই ভাই, আবির্ভাব, বন্ধু, বাঁশরী, আশার আলো, কে তুমি, মতিমহল, আনোয়ারা, নাত বউ, অবাক পৃথিবী, অনন্ত প্রেম, অশিক্ষিত, ছুটির ঘণ্টা, মহানগর, বড় ভাল লোক ছিল, স্বরলিপি, বাঁদী থেকে বেগম, বাবা কেন চাকর প্রভৃতি।