9 June 2024 , 6:00:25 প্রিন্ট সংস্করণ
সরকারের রাজস্ব আয়ের বড় অংশ খরচ হয় পরিচালন ব্যয়ে। যাদের করের টাকায় সরকার চলে, সেই জনগণের উন্নয়নে টাকা থাকে না। এ জন্য সরকারকে দেশি-বিদেশি ঋণে নির্ভর করতে হয়। বছর বছর বড় অঙ্কের ঋণ করায় অর্থনীতিতে ‘টাইম বোমা’ তৈরি হচ্ছে। বাজেটের ১৪ শতাংশের বেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতেই খরচ হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর ঋণের বোঝা বাড়ছে, যা চিন্তার বিষয়। শনিবার বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) বিবিএ প্রোগ্রামের বাজেট আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
রাজধানীর ভাটারায় ইউনাইটেড সিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এবং হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ এমপি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।অনুষ্ঠানে এ. কে. আজাদ বলেন, জনগণ যে কর দেয়, তা সরকার চালাতেই শেষ হয়ে যায়। যে জনগণের টাকায় সরকার চলে, সেই জনগণের উপকারে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের হাতে টাকা থাকে না।
এ জন্য কর আদায় বাড়ানো দরকার। তবে ধনীদের থেকে এ কর আদায় করতে হবে।কখনও কখনও অর্থ সংকটে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাওয়া ও ব্যয় বেড়ে যাওয়ার সমালোচনা করে এ. কে. আজাদ বলেন, প্রকল্পের ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন হলেও সরকারি কর্মকর্তারা কিন্তু কৃচ্ছ্রসাধনের মধ্যে নেই। তাদের জবাবদিহি নেই। মাঠ পর্যায়ের এসিল্যান্ড, ইউএনওরা দামি পাজেরো গাড়ি চালান। ফরিদপুরের হাসপাতালে দামি যন্ত্রপাতি বাক্সেই ১২ বছর পড়ে থাকছে। এই যন্ত্র চালানোর মতো জনবল নেই।
তাহলে কোটি কোটি টাকা দিয়ে এ যন্ত্র কেন কেনা হলো– এমন প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা এ যন্ত্রের চাহিদা দেননি। ওপর থেকে পাঠিয়েছে। অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানও বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের কারণে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে, ব্যয় বাড়ছে বা সময়মতো ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এতে জনগণের অর্থ ব্যয় হলেও তাদের জবাবদিহি নেই, যদিও প্রতিবছর কর্মসম্পাদন চুক্তি করা হচ্ছে। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০০৯ সালে যে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা, এখন তা ১ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা।
এতে ঋণের খরচ বেড়ে ১৪-১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এত সুদ দিয়ে যেখানে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন, সেখানে ব্যবসায়ীরা কী করে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন।তিনি বলেন, তিন-চার বছর আগেও দেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধি, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং কম মূল্যস্ফীতি ছিল, যা এখন নেই। বর্তমান অবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদের আরও দু-তিন বছর কাটাতে হতে পারে। ঋণ কমাতে সরকারকে প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে হবে। শোভন কর্মসংস্থান, আয়বর্ধক উদ্যোগ ও বিনিয়োগ না বাড়িয়ে বর্তমান সংকটের কোনো সমাধান হবে না।
সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনীতিতে যে সমস্যা আছে, তা অস্বীকার করার কিছু নেই। সমস্যা আগেও ছিল। তবে সে সময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভালো ছিল বলে কথা হতো না। টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রির পাশাপাশি ন্যায্যমূল্যের দোকান খুলে নিম্নমধ্যবিত্তদের একটু স্বস্তি দেওয়া দরকার।গবেষণা সংস্থা র্যাপিডের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমানের উচ্চ মূল্যস্ফীতি বজায় রেখে উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়।
সমস্যা বুঝে বিকল্প সমাধানের কথা চিন্তা করা উচিত।ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় কোনো ফল মিলবে না, বরং সৎ করদাতারা কর দিতে নিরুৎসাহিত হবেন।