লাইফ স্টাইল

ঘূর্ণিঝড়ের পর যা করবেন যেভাবে করবেন জেনেনিন

ঘূর্ণিঝড় রেমাল বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। রয়ে গেছে বহু ক্ষতচিহ্ন। মানুষ মারা গেছে, মারা গেছে গবাদি পশু, গাছপালা উপড়ে গেছে বহু স্থানে, বাঁধ ভেঙে গেছে, ঘরবাড়িসহ বহু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। দুর্যোগ কবলিত অঞ্চলের মানুষ এখন এই ঘূর্ণিঝড়–পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী করা উচিত।

যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে ও পরে দুর্যোগ সম্পর্কিত তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে দুর্যোগ থেকে উত্তরণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া নানা পদক্ষেপ সম্পর্কেও জানা চাই। বড় কোনো ঝড়ের পর অনুসরণীয় বিষয় সম্পর্কে জানাচ্ছে ইউনিসেফ।ইউনিসেফ বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের সময় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন। অনেকে নিজ বাড়িতেই অবস্থান করেন।

ঝড় শেষ হওয়ার সাথে সঙ্গেই বের না হয়ে প্রশাসনিক ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে আশ্বস্ত হলেই কেবল ঘর থেকে বের হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে ইউনিসেফ।এমন পরামর্শের কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িসহ বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

একইসঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের পরও একটা লম্বা সময় ধরে ভারী বৃষ্টিপাত চলতে থাকে। ফলে বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধ্বসের আশঙ্কা থাকে প্রবল। ফলে স্থানীয় প্রশাসনের দিক থেকে ‘সবকিছু নিরাপদ’ এমন ভাষ্য না পাওয়া পর্যন্ত সবার নিরাপদ অবস্থানেই থাকা উচিত।

এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু পরামর্শ দিচ্ছে ইউনিসেফ—

নিজের পরিবারকে নিরাপদ রাখতে সচেষ্ট থাকুন।

অনিরাপদ স্থাপনা এবং ঝুলন্ত তার থেকে সবাইকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন।

বন্যা হলে বন্যার পানি থেকে শিশুদের দূরে রাখুন। বন্যার পানি দূষিত হতে পারে, যা নানা রোগের সৃষ্টি করতে পারে।

ঝড়ে সৃষ্ট জঞ্জালের আশপাশে শিশুদের খেলতে বা দৌড়ঝাঁপ করতে দেবেন না।

যতটা সম্ভব শুষ্ক ও উষ্ণ কাপড়ে থাকার চেষ্টা করুন। বিশেষত শিশুদের কাপড় যেন ভেজা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

নিরাপদ সুপেয় পানি পানের চেষ্টা করুন। একইসঙ্গে রান্নার সময় নিরাপদ পানি ব্যবহারের চেষ্টা করুন।

উদ্ধারকর্মীদের সহায়তা করুন।

স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলুন।
সম্ভব হলে দুর্যোগ সম্পর্কিত খবরাখবর সম্পর্কে হালনাগাদ থাকুন।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বহু জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক স্থানে চলছে ঝড়–পরবর্তী উদ্ধার অভিযান।

সোমবার খুলনায়
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বহু জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক স্থানে চলছে ঝড়–পরবর্তী উদ্ধার অভিযান।

সোমবার খুলনায়। ছবি: ইনডিপেনডেন্ট
ঘূর্ণিঝড়ের পর নিজের আশপাশ পরিষ্কারের সময় খেয়াল রাখুন—
ঘরে ঢুকে যাওয়া পানি অপসারণের সময় সতর্ক থাকুন। কাজটি ধীরে ধীরে করুন, যাতে পানির নিচে থাকা কোনো কঠিন কিছুতে আঘাত না পান বা বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে না আসেন। চেষ্টা করুন ঝড়ের পরের ২৪–৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চারপাশ শুষ্ক করতে।

যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় শিশুদের দিকে বাড়তি নজর দেওয়া জরুরি। ঘরদোর পরিষ্কারের সময় শিশুদের যতটা দূরে রাখা যায়, ততটাই ভালো। এ ধরনের কাজে যুক্ত হলে একটু অসতর্ক হলেই শিশুরা আঘাত পেতে পারে।

ঝড় পুরোপুরি থামার পর কী করবেন
ঝড় পুরোপুরি থেমে গেলে মনোযোগ দিন পরিবারের বাকি সদস্যদের দিকে। ঝড় চলে গেলেও, ঝড়ের স্মৃতি এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি করে রেখে যেতে পারে। এ কারণে ঝড়ের পর পরিবারের সদস্যরা কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। কেউ নিখোঁজ হলে স্থানীয় প্রশাসনসহ দায়িত্বশীল সংস্থা ও গোষ্ঠীগুলোর সাথে যোগাযোগ করুন।

পাশাপাশি খেয়াল রাখুন ঝড়ের পর নিরাপদ পরিস্থিতি যে সৃষ্টি হয়েছে, সে বিষয়ে সবাই যেন আশ্বস্ত হয়। এ জন্য পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলুন। বিশেষত শিশুদের সাথে কথা বলুন—ঝড়ে তারা কেমন ভয় পেয়েছে, তাদের কী মনে হয়েছে ইত্যাদি সম্পর্কে জানুন। দুর্যোগে মাথা ঠান্ডা রাখা কঠিন। তবুও চেষ্টা করুন, তাদের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করতে। তাদের আশ্বস্ত করুন।

দুর্যোগে হওয়া আহত–নিহত ও ক্ষয়ক্ষতির খবরাখবর থেকে বিশেষত শিশুদের দূরে রাখার চেষ্টা করুন।পরিবারের শিশুসহ কম বয়সীদের বোঝানোর চেষ্টা করুন যে, দুর্যোগ প্রাকৃতিক একটি ব্যাপার। এটি স্থায়ী কোনো বিষয় নয়। দুর্যোগের পরও ঘুরে দাঁড়ানো যায়। অনেকেই দাঁড়িয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content

%d bloggers like this: