20 April 2024 , 1:51:45 প্রিন্ট সংস্করণ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি ও তাদের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো। এখন জনগণকে এই ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বৃহস্পতিবার দলের সাংগঠনিক সভায় এ ইস্যুতে সারা দেশে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির প্রস্তাব করা হয়। একই সঙ্গে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বর্ধিত বা প্রতিনিধি সভা করার বিষয়েও ওই সভা থেকে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সাংগঠনিক টিম ফের বৈঠক করে এসব প্রস্তাব লিখিত আকারে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়েছে।
আগামী সোমবার দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারলী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কর্মসূচির এ প্রস্তাব চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী সাংগঠনিক টিমের সঙ্গে ভার্চুয়ালে বৈঠক করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক ছাড়াও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও ছিলেন। ওই বৈঠকে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন নিয়ে নেতাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। তারা বলেন, প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলায় ৪৫ জনের মতো বিএনপি নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সেখানে হাতেগোনা কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন, আর বেশিরভাগ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জেলা ও সাংগঠনিক টিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কথা বলেছেন।
ইতোমধ্যে অনেকেই তাদের কাছে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছেন। এছাড়া বাকি ধাপের নির্বাচনে দলীয় পদে থেকে কেউ যাতে অংশ না নেন, সেজন্য নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরা হয়। তবে দলীয় পদে থেকে যারা নির্বাচনে যেতে ইচ্ছুক তাদের তালিকা করতে জেলা ও উপজেলার নেতাদের বলা হয়েছে। তালিকা ধরে প্রথমে ইচ্ছুক নেতাদের ভোটে না যেতে কাউন্সিলিংয়ের ওপর জোর দেওয়ার কথা বৈঠকে জানানো হয়। তারপরও কেউ ভোটে অংশ নিলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা অর্থাৎ আজীবন বহিষ্কার করার স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়। এছাড়া সাধারণ মানুষকে উপজেলা নির্বাচনের ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের কর্মসূচির প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বর্ধিত বা প্রতিনিধি সভা করার বিষয়েও প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। এসব কর্মসূচি সারা দেশে পালনের কথা বলা হয়েছে।
শুক্রবার বিকালে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও সাংগঠনিক টিমের বৈঠক হয়। সেখানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাবনা ও লিফলেটে কী থাকবে তার একটি খসড়া তৈরি করা হয়। যা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে। আগামী স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না, যা জনগণের কাছে প্রমাণিত। তাছাড়া এই সরকারের আমলেই একটা সময় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, কোথাও কোথাও তার চেয়েও বেশি বিএনপির প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে নানা অজুহাতে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে।
কোথাও কোথাও মামলার অজুহাত দেখিয়ে তাদের সরিয়ে, সেখানে আওয়ামী লীগের লোকজনকে বসিয়ে দেওয়া হয়। কারাগারে থেকেছেন অনেক মেয়র। নির্বাচনে জয়লাভ করার পরও এই ফলাফল হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব হলো আগে থেকে সতর্ক হওয়া উচিত, সরকারের এই নির্বাচনি ফাঁদে কেউ যেন না পড়ে।কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ সমস্যা নিয়ে কর্মসূচির প্রস্তাবনা আছে। লিফলেট বিতরণের প্রস্তাবনাও রয়েছে। চূড়ান্ত হবে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে।বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ৭ জানুয়ারির একতরফা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট বর্জনের ডাক দিয়েছিল বিএনপি। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। আমরা আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের ভোট বর্জনের আহ্বান জানাব।
আশা করি এবারও জনগণ সাড়া দেবে। ইতোমধ্যে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দল আসন্ন উপজেলা নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়েছে।বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে প্রত্যাহারের কথা কেন্দ্রকে জানিয়েছেন। বাকি ধাপের উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রার্থী হতে চায়, তাদের কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে ভোট থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করবেন। শেষ পর্যন্ত যদি কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত না মানে, তখন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার আগ পর্যন্ত কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমেই চেষ্টা থাকবে।দলটির একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, জনগণকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ করা হবে। বর্তমান সরকারের অধীনে ’১৪, ’১৮ সালে ও সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন হয়েছে, যা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনও একইভাবে হয়েছে। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রতীক দেয়নি, এটিও বিএনপি নেতাদের নির্বাচনে নিতে একটি ফাঁদ। কিন্তু সেই ফাঁদে পা দেবে না নেতারা। নির্বাচন হবে আগের মতোই প্রহসনমূলক। কারণ একই সরকার ও তাদের ‘আজ্ঞাবহ’ নির্বাচন কমিশন এবং একই প্রশাসন আছে, যারা ’১৪, ’১৮ সালে ও ৭ জানুয়ারির নির্বাচন করেছে। তাই তারা জনগণের কাছে বিশ্বাস অর্জন করতে পারেনি। সে কারণেই বিএনপি ও বিরোধীদের ডাকে এবারও উপজেলা নির্বাচন বর্জন করবে জনগণ। নেতারা আরও জানান, লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি আরও প্রস্তাব আছে জেলায় ও উপজেলায় বর্ধিত কিংবা প্রতিনিধি সভা করার। এই সভা করে জানান দেওয়া হবে, নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বর্জন করবেন, কোনো প্রতিরোধ করবেন না।
জানা গেছে, এবার উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লিফলেটে কী থাকতে পারে তার একটি খসড়া তৈরি করেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ভোট বর্জনের আহ্বান সংবলিত লিফলেটে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়েছে। খসড়ায় আছে- কৃষক, শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে অসহায় অবস্থা পড়ে গেছে। দেশে বর্তমানে ভোটাধিকার ও মানবাধিকার না থাকায় সর্বক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, সড়ক দুর্ঘটনা, হঠাৎ করে অগ্নিকাণ্ড-এসব বিষয়ও লিফলেটের খসড়ায় আছে।
খসড়ায় আরও আছে গত ৭ জানুয়ারি (জাতীয় সংসদ নির্বাচন) একতরফা ও পাতানো নির্বাচন হয়েছে। যেখানে একটি দলের মনোনীত, স্বতন্ত্র এবং ডামি প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচনের নামে খেলা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নিজেরা নিজেরাই প্রার্থী হচ্ছেন, অন্য কোনো দলের কেউ অংশ নিচ্ছেন না। তাই জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও বর্জনের জন্য ভোটারদের আহ্বান জানানো হয়েছে ওই খসড়ায়। লিফলেটের এই খসড়া স্থায়ী কমিটি আরও সংযোজন-বিয়োজন করে চূড়ান্ত করবে বলে জানা গেছে।