ধর্ম

তাশাহুদ কি এর উচ্চারণ অর্থ পড়ার নিয়ম ও ফজিলত

ফরজ ইবাদতের মধ্য নামাজ হলো একটি ফরজ ইবাদত। নামাজের ভেতরে এবং বাইরে কিছু কাজ আছে যেগুলো সঠিকভাবে আদায় করাও ফরজ। প্রথম দুই রাকাত পর বসাকে প্রথম বৈঠক বলা হয়, চার রাকাত পর বসাকে শেষ বৈঠক বলা হয়, এবং প্রতি বৈঠকে তাশাহহুদ পড়তে হয়।

তাশাহুদ কি?

তাশাহুদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দোয়া, যা নামাজের প্রত্যেক বৈঠকে পড়তে হয়। তাশাহুদ বা আত্তাহিয়াতু হচ্ছে মহান আল্লাহতালা এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর একটি কথোপকথন। এই কথাকোপথন এতটাই মহিমান্বিত যে, আমরা প্রত্যেক নামাজে এই তাশাহুদ বা আত্তাহিয়াতু পড়ে থাকি।

তাশাহুদ বাংলা উচ্চারণ

আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত-তাইবাতু। আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।

তাশাহুদ অর্থ

মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক যাবতীয় ইবাদত মহান আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার ওপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের ওপর এবং আল্লাহর সব নেক বান্দার ওপর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।

সূত্র : আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে এই ‘তাশাহহুদ’ শিক্ষা দেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২৬৫)

তাশাহুদ ইংরেজি উচ্চারণ

Attahiyyaatu lillaahi, wassalawaatu, wattayyibaatu, assalaamu alayka, ayyuhan-Nabiyyu, wa-rahmatullaahi, wa-barakaatuhu, assalaamu alaynaa, wa-alaa ibaadillaahis-saalihiin, Ash-hadu allaa ilaaha, illallaahu wa-ash-hadu anna, Muhammadan, abduhu wa Rasuuluh.

নামাজি ব্যক্তি নামাজের মধ্যে যখন মৌখিকভাবে তাওহিদের সাক্ষ্য দেয়, তখন তার আঙুলও এই সাক্ষ্য দেবে। এজন্য আত্তাহিয়াতু পড়তে পড়তে যখন ‘আশহাদু আল্লা… ইলাহা’ পর্যন্ত পৌঁছবে, তখন বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা দ্বারা গোল ভিত্ত বানাবে এবং শাহাদত আঙুল দ্বারা ইশারা করবে। আর কনিষ্ঠা ও অনামিকা হাতের তালুর সঙ্গে যুক্ত থাকবে। ‘ইল্লাল্লাহ’ বলার পর শাহাদত আঙুল নিচু করবে। তবে অন্য আঙুলগুলো আপন অবস্থায় নামাজের শেষ পর্যন্ত থাকবে।

উল্লেখ্য, বৃদ্ধাঙ্গুলির নিকটতম আঙুলকে শাহাদত আঙুল বলা হয়। ইশারা শেষ করে আঙুল আর নাড়াচড়া করবে না। (তথ্যসূত্র: সহিহ মুসলিম: ১৩৩৬-১৩৩৭ সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫/২৭০, সুনানে নাসায়ী কুবরা: ১১৯৩, আবু দাউদ: ৯৮৯)

তবে তাশাহুদের বাক্য ও আঙুল দিয়ে ইশারা করার বিষয়ে অন্য নিয়মেরও হাদিস পাওয়া যায়। তাই বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি কাম্য নয়।

তাশাহুদ এর হাদিস

আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সলাত আদায় করতাম তখন এ দুআ পাঠ করতাম, “আসসালা-মু আলাল্ল-হি ক্বাবলা ইবাদিহী, আসসালা-মু আলা-জিবরীলা, আসসালা-মু আলা- মীকায়ীলা, আসসালা-মু আলা- ফুলা-নিন” – (অর্থাৎ- আল্লাহর উপর সালাম তাঁর বান্দাদের উপর পাঠাবার আগে, জিবরাঈলের উপর সালাম, মীকায়ীল-এর উপর সালাম। সালাম অমুকের উপর)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সলাত শেষ করলেন, আমাদের দিকে ফিরে বললেন, “আল্লাহর উপর সালাম” বল না। কারণ আল্লাহ তো নিজেই সালাম (শান্তিদাতা)।

অতএব তোমাদের কেউ সলাতে বসে বলবে, “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লা-হি ওয়াসসালাওয়া-তু ওয়াততায়্যিবা-তু আসসালা-মু আলায়কা আইয়্যুহান নাবিইয়্যু ওয়ারাহমাতুল্ল-হি ওয়াবারাকা-তুহু আসসালা-মু আলায়না ওয়াআলা- ইবা-দিল্লা-হিস স-লিহীন” (অর্থাৎ সব সম্মান, ইবাদাত, উপসানা ও পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নাবী! আপনার উপর আল্লাহর সব নেক বান্দাদের উপর সালাম)। নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কোন ব্যক্তি এ কথাগুলো বললে এর বারাকাত আকাশ ও মাটির প্রত্যেক নেক বান্দার কাছে পৌঁছবে।

এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহু”- (অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রসূল)। নাবী (সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এরপর আল্লাহর বান্দার কাছে যে দু’আ ভাল লাগে সে দু’আ পাঠ করে আল্লাহর মহান দরবারে আকুতি মিনতি জানাবে।

%d bloggers like this: