জাতীয়

কে এই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান

রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ড. ইউনূসের বিপক্ষে ‘বিবৃতি দিতে অস্বীকৃতি’ ও ‘ড. ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন’ বলে মন্তব্য করে আলোচনায় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশুনা করেন। এসময় তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।

তিনি ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্টে প্রাক্টিসের অনুমতি পান এবং ২০০৫ সালের ২১ জুলাই সদস্য পদ লাভ করেন। এরপর ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি তিনি অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। বর্তমান সরকারের একজন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনের সুপারিশে তিনি নিয়োগ পান বলেও কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।

আরও জানা গেছে, ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও পরস্পর সহযোগিতার অংশ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টে সমমনা আইনজীবীদের নিয়ে একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। ঠিক একইভাবে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে কর্মরতদের নিয়েও এমন গ্রুপ আছে। সরকার সমর্থিত সাধারণ আইনজীবীদের গ্রুপের মতো অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও ড. ইউনূসকে নিয়ে বিশ্বনেতাদের বিবৃতির প্রতিবাদে সই প্রদানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। তবে এতে আপত্তি জানিয়ে সংবাদমাধ্যমে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া।

এদিকে গত ৪ সেপ্টেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে বিশ্বের ১৬০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির বিবৃতির পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া।তিনি বলেন, ১৬০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির বিবৃতির বিপক্ষে প্রতিবাদ জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে একটি বিবৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আমাদের নোটিশ করা হয়েছে- এই বিবৃতিতে সাক্ষ্য প্রদান করার জন্যে।

কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর প্রদান করবো না। বিশ্বের ১৬০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। আমি তাদের সেই বিবৃতির সঙ্গে একমত। আমি মনে করি, ড. ইউনূস একজন সম্মানী ব্যক্তি। ওনার সম্মানহানি করা হচ্ছে এবং এটি বিচারিক হয়রানি।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন অভিযোগ তুলে বলেন, ‘কোর্টের অবকাশককালীন ছুটির কারণে ওইদিন তার (এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া) কোনও ডিউটি ছিল না। তারপরও তিনি স্যুট পরে চলে (সুপ্রিম কোর্টে) এসেছেন। তিনি টিভির সামনে গিয়ে কী কারণে ব্রিফিং করলেন, কেন করলেন, কোন উদ্দেশ্যে করলেন- সেটা আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন।

কাকে খুশি করার জন্য তিনি এসব কথা বলেছেন, তা খুঁজে বের করতেও আহ্বান জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।এদিকে এমরার আহম্মদের মন্তব্য মেনে নিতে না পেরে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে তার নামে থাকা নেমপ্লেট খুলে ফেলা হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এমরান আহম্মদের নেমপ্লেট খুলে ফেলেন একই কার্যালয়ের আরেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম ফজলুল হক।

এমরান আহম্মদের কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে এসএম ফজলুল হক বলেন, ‘এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া রাষ্ট্রের একজন আইন কর্মকর্তা হয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাই, একজন মুক্তিযোদ্ধা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তার নেমপ্লেট আমি খুলে ফেলেছি। তার নেমপ্লেট অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে থাকতে পারে না বলে আমি মনে করি।

এমরান আহম্মদের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছে সরকার। এ নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, তার (এমরান আহম্মদ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন ডিএজি (ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল)। তিনি যদি সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন, তাহলে তাকে হয় পদত্যাগ করে কথা বলা উচিত, অথবা অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুমতি নিয়ে কথা বলা উচিত। তিনি সেটি করেননি। তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন।