রাজনীতি

শক্ত অবস্থানে জি এম কাদেরপন্থী নেতারা

দুর্গ বলে পরিচিত রংপুরে ফের আলোচনায় জাতীয় পার্টি (জাপা)। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলটির ভরাডুবি হলেও রংপুরে জি এম কাদেরের জয়ের মধ্য দিয়ে দুর্গ রক্ষা হয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা নিজেদের কিছুটা সামলে নিয়ে দল গোছানোর চেষ্টা করছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে পৃথকভাবে জাতীয় পার্টির (জাপা) জাতীয় সম্মেলন করতে রওশন এরশাদের ঘোষণার পর শক্ত অবস্থানে রয়েছেন রংপুরের নেতারা।

কেউ যেন রওশন এরশাদ ঘোষিত সম্মেলনে যেতে না পারেন সে ব্যাপারে কাজ শুরু করেছেন নেতারা। ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তারা।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর ভূমিকা, ব্যক্তি-স্বার্থ, নীতি-নৈতিকতা এবং সাংগঠনিক দূরদর্শিতা নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা-সমালোচনা চলে। পরে ঢাকায় জাতীয় পার্টির ৬৭১ নেতাকর্মীর পদত্যাগের বিষয়টি আলোচনায় যুক্ত হয়।

অনেকে মনে করছেন এমনিতে দেবর-ভাবির (রওশন এরশাদ-জি এম কাদের) দ্বন্দ্বে জাতীয় পার্টির বেহাল দশা। এই দ্বন্দ্ব নির্বাচনেও কিছুটা প্রভাব ফেলে। এর পরে বিরাট একটি অংশ পদত্যাগ করায় জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কিছু নেতাকর্মী। সর্বশেষ রওশন এরশাদের সম্মেলন ঘোষণায় ‘দুর্গ’ রংপুরেও কিছুটা প্রভাব পড়েছে, হতাশা বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মাঝে।জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছোট ভাই পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

এরশাদপন্থী রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের রাজনৈতিক টানাপোড়েন সব সময়ই ছিল। তবে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়। রওশন এরশাদ ও তার ছেলে রংপুর-৩ (সদর) আসনের সাবেক এমপি রাহগির আল মাহি (সাদ এরশাদ) নির্বাচনে অংশ নেননি। এমতাবস্থায় আগামী ৯ মার্চ নিজের অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে জাতীয় সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছেন রওশন এরশাদ।

রংপুরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলা ও মহানগর কমিটির শীর্ষ নেতারাসহ রংপুরের বেশিরভাগ নেতাকর্মীই জি এম কাদেরপন্থী হিসেবে পরিচিত। রওশনপন্থীদের কোনো তৎপরতা রংপুরে নেই। তবে রওশন এরশাদের ঘোষিত সম্মেলনে যাতে কেউ যোগ দিতে না যান, সে ব্যাপারে নজর রাখছেন জি এম কাদেরপন্থী নেতারা।একাধিক নেতাকর্মী জানান, দীর্ঘদিন ধরে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরোধে সংকটকালীন সময়েও রংপুরের নেতাকর্মীরা জি এম কাদেরের পক্ষে ছিল।

চেয়ারম্যানের নেতৃত্বেই সবার আস্থা। সে কারণে এবারের নির্বাচনেও জি এম কাদেরকে জয়ী করেছেন তারা।তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, রংপুর জাপার দুর্গ বলে পরিচিত। নির্বাচনে ভরাডুবির পর নেতাকর্মীরা চিন্তিত হলেও নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। এমন অবস্থায় রওশনের নেতৃত্বাধীন সম্মেলনের তারিখ ঘোষণায় দল দুই ভাগ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন। এতে ঘুরে দাঁড়ানোর বদলে তাদের মধ্যে নতুন করে হতাশার জন্ম দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রংপুর জেলা জাপার এক শীর্ষ নেতা বলেন, রংপুর বিভাগে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা স্থবির হয়েছে পড়েছেন। তারা চরম হতাশার মধ্যে রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় একটি পক্ষের সম্মেলনের ডাকে দলের নেতাকর্মীদের ভাবিয়ে তুলেছে। দলের রাজনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আবদুর রাজ্জাক বলেন, একের পর এক নাটক সাজানো হচ্ছে। এ নিয়ে রংপুরের রাজনীতিতে নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক।

তবে কেউ যেন রওশনের ডাকা কাউন্সিলে যেতে না পারেন, সে ব্যাপারে সার্বক্ষণিক মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। কঠোর অবস্থানে রয়েছেন নেতারা।জাতীয় পার্টিতে ভাঙনের সুরের বিষয়টি নিয়ে রংপুরের নাগরিক সমাজেও চলছে আলোচনা। নাট্যকর্মী রাজ্জাক মুরাদ বলেন, রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির অবস্থান মূলত রংপুর অঞ্চলে। জাতীয় পার্টি আঞ্চলিক দলের কথাও বলেছেন খোদ দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

তবে নতুন করে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, এ থেকে কাটিয়ে উঠতে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো বিকল্প নেই।তবে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দলে যতই বিরোধ হোক, রংপুর অঞ্চলে জি এম কাদেরের নেতৃত্বেই দল এগিয়ে যাবে। কারা পদত্যাগ করলেন-কারা সম্মেলন ডাকলেন তা মুখ্য বিষয় নয়। রংপুর অঞ্চলে দলের কোনো ভাঙন নেই।

আরও খবর

Sponsered content

%d bloggers like this: