রাজনীতি

ধীরেসুস্থেই এগোতে চায় খেইহারা বললেন বিএনপি

নির্বাচনের আগে একটানা আন্দোলন নেমেছিলো বিএনপি। টানা কর্মসূচির শুরুটা ২০২২ সালের আগস্টে। শুরুতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, বিভাগীয় সমাবেশ। তারপর এলো রোডমার্চ। নির্বাচনের আগের দুই মাসে কখনো হরতাল, কখনো অবরোধ। কখনো হরতাল-অবরোধ দুটোই। কিন্তু নির্বাচনের পরে নতুন করে আর বড় কোন কর্মসূচি নেই বিএনপির। তবে ‘ভোট বর্জন করায়’ বিচ্ছিন্নভাবে কোন কোন এলাকায় সাধারণ মানুষকে ফুল দিয়ে ‘অভিনন্দন’ জানিয়েছেন দলটির নেতারা।যদিও দলটির নেতা-কর্মীদের বড় অংশই একরকম আত্মগোপনে রয়েছে।

নির্বাচনের আগে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় দলটির সমাবেশকে ঘিরে সহিংতার পর থেকেই এ অবস্থা। যার রেশ আছে নির্বাচনের পরও। বিশেষ করে মামলা এবং গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকায় ফিরছেন না অনেকেই। সারা দেশে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে না পারায় এখন অনেকটাই দিশেহারা বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। দলটি সরকারবিরোধী আন্দোলন আবার গতিশীল করতে চাইলেও বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী কারাগারে থাকায় সেদিকে এগোতেও পারছে না। শুধু তা-ই নয়, এ মুহূর্তে ঠিক কী করা দরকার, সেটিই বুঝে উঠতে পারছেন না বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। এ ছাড়া দলের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ধরপাকড়ের আতঙ্কে আছেন। এই অবস্থায় দলটির নীতিনির্ধারকেরা আপাতত কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্ত করে ধীরেসুস্থে আন্দোলনের পথে এগোতে চান।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস মিলেছে।আন্দোলনে খেই হারিয়ে ফেলার বিষয়টি অবশ্য প্রকাশ্যে স্বীকার করতে রাজি নন বিএনপির কোনো নেতা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বলেন, ‘আন্দোলন গতি হারানোর প্রশ্নই ওঠে না। নির্বাচন বর্জন করার মধ্য দিয়ে জনগণ সরকারের প্রতি তাদের অসন্তুষ্টি ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের চলমান আন্দোলন আরও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে গেছে।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য আবদুল মঈন খান গতকাল এক আলোচনা সভায় বলেন, ‘আমরা রাজপথে আন্দোলনে রয়েছি, আমাদের রাজপথে আন্দোলনে থাকতে হবে। তবে এই আন্দোলন হবে সম্পূর্ণ শান্তিপ্রিয় এবং নিয়মতান্ত্রিক।বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাঠের কর্মসূচি পালন করতে পর্যাপ্ত নেতা-কর্মীর প্রয়োজন।

অথচ এই মুহূর্তে বিএনপির ২৩ হাজার নেতা-কর্মী কারাবন্দী আছেন। তাঁদের মুক্ত করেই ধীরেসুস্থে পূর্ণোদ্যমে মাঠে ফেরার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি আন্দোলনও পুনরায় চাঙা করার কাজ চলছে।জানা গেছে, বিএনপির বিপর্যস্ত অবস্থায় নতুন করে আন্দোলন শুরু করার বিষয়ে আশাবাদী হতে পারছে না সমমনা দলগুলোও। এই অবস্থায় তাড়াহুড়ো না করে ‘ধীরে চলো’ নীতিতে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তাঁদেরও সায় আছে।সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার পর নতুন করে আন্দোলন চাঙা করার চিন্তা আছে। এর অংশ হিসেবে আগের ভুলত্রুটি বিবেচনায় নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে বিএনপিসহ সব দলই আলোচনা-পর্যালোচনা করছে। মিত্র দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে পৃথক বৈঠকও করছে বিএনপি। তবে আলোচনা-পর্যালোচনা চললেও এখনো কোনো করণীয় ঠিক করা সম্ভব হয়নি।

এই অবস্থায় সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে খানিকটা হতাশা দেখা দিয়েছে।হতাশার মধ্যেও অবশ্য এখনো আত্মবিশ্বাসী কোনো কোনো নেতা। এলডিপি সভাপতি অলি আহমেদ এখনো মনে করেন, সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার। তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি চলতে থাকবে। আমরা আমাদের কাজ করে যাব। ফলাফল কী হবে, তা বলা যাচ্ছে না।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ধাপে ধাপে আন্দোলন সফল পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ছোট-বড় নানা কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে মাঠ গরম করার একপর্যায়ে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিও পালন করে তারা। কিন্তু তাদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে। এরই মধ্যে সরকারও গঠন হয়ে গেছে। ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসার কথা।

অথচ বিএনপিসহ বিরোধীরা মাঠে নেই বললেই চলে। নির্বাচনের পর এ পর্যন্ত দুদিনের গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করেছে তারা। বিএনপি নতুন করে দুই দিনের কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে। ২৬ জানুয়ারি দেশের সব জেলা শহরে এবং ২৭ জানুয়ারি সব মহানগরে এই কর্মসূচি পালিত হবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। বিএনপির সঙ্গে থাকা কয়েকটি দল এই কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিলেও তা যুগপৎ ধারায় হচ্ছে না।বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা আন্দোলনে আছি এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনব।

আরও খবর

Sponsered content

%d bloggers like this: