অপরাধ বার্তা

কুমারখালীতে গরুর খামার-মিষ্টির কারখানা, জরিমানা ৭০ হাজার

বাড়ির পিছনে বিশাল গরুর খামার। তার সঙ্গেই লাগোয়া গোবরের স্তুপ। গোবর আর খামার ঘেঁষেই মিষ্টিজাত পণ্য তৈরির কারখানা। নেই কোনো বেড়া বা ঢাকনার ব্যবস্থা। মশা, মাছি ও পোকামাকড় ভনভন করছে। উড়ে বেড়াচ্ছে পাখি। আবার কারখানাটির নেই কোনো লাইসেন্স বা বৈধ কাগজপত্রাদি। তবুও কোনো নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করেই প্রায় দুই বছর ধরে চলছিল কারখানাটি। অবশেষে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী দয়রামপুর ঘোষপাড়া এলাকার বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডার এন্ড বেকারীতে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযান পরিচালনা করেন জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মাসুম আলী। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইয়াসিন আরাফাত, উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক ফারুক হোসেন, পুলিশ প্রমূখ। কারখানাটি উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। জানা গেছে, দয়রামপুর ঘোষপুর এলাকায় রমন ঘোষের জামাই সুশান্ত কুমার ঘোষের একটি বড় গরুর খামার রয়েছে। কোনো প্রকার বৈধ কাগজপত্রাদি ছাড়াই সেখানে প্রায় দুই বছর আগে মিষ্টিজাত পণ্য উৎপাদনের কারখানা তৈরি করেন সুশান্ত। খামারে উৎপাদিত দুধ দিয়ে কারখানাটিতে প্রতিদিন প্রায় তিন থেকে চার মণ মিষ্টিজাত পণ্য উৎপাদন করা হয়। ঢাকার দয়াগঞ্জ বাজার সড়ক এলাকার তাঁর বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডার এন্ড বেকারী নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কুমারখালীতে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদিত মিষ্টিজাত পণ্য প্রতিদিনই গাড়িতে করে ঢাকার কারখানাটিতে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এ তথ্য জানিয়েছেন কারখানাটির ব্যবস্থাপক সুশান্ত রায়। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিশাল গরুর খামার। খামার পিছনে গোবর ও ময়লার স্তুপ। স্তুপ ও গরুর খামার ঘেঁষে মিষ্টিজাত পণ্য তৈরির কারখানা। খোলামেলা পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে পণ্য। মশা, মাছি ও পোকামাকড় ভনভন করছে। উড়ে বেড়াচ্ছে পাখির ঝাঁক। সেখানে অভিযান চালাচ্ছে ভোক্তা অধিদপ্তর। এ সময় কারখানার ব্যবস্থাপক সুশান্ত রায় বলেন, কোনো বৈধতা ছাড়ায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রায় দুই বছর ধরে চলছে কারখানাটি। আমাদের ভুল হয়েছে। খুব দ্রুতই সংশোধন করা হবে। জানতে চাইলে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মাসুম আলী বলেন, ‘যেন গরুর খামারেই তৈরি হচ্ছে মিষ্টিজাত পণ্য। এখানে পশুপাখির অভয়ারণ্য ও অবাধ বিচরণ। কোনো বৈধতায় নেই। সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশ এবং কাগজপত্রাদি না থাকায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’ যেহেতু কোনো বৈধতা নেই, সেহেতু কারখানাটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সংশোধনের জন্য সাতদিন সময় দেওয়া হয়েছে। কিছু মিষ্টিজাত পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে। আইন অমাণ্য করলে ভবিষ্যতে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে শুধু জরিমানা করায় অখুশি স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি দ্রুত অবৈধ কারখানাটি বন্ধ করা হোক। একদিকে গরুর গোবর আর চেনা (প্রসব) পড়ছে। অন্যদিকে মিষ্টি ছানা তৈরি হচ্ছে। সেগুলো মিলেমিশে একাকার হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, খাবারের নামে বিষ খাওয়ানো হচ্ছে। ৭০ হাজার টাকা জরিমানা কিছুই না। কারখানাটি বন্ধ করতে হবে। দয়রামপুর গ্রামের ছাদ আলী ছেলে ভ্যানচালক রাকিবুল ইসলাম বলেন, আগে সুশান্তের ওখান থেকে মিষ্টি কিনতাম। তবে বারবার বলেও পরিবেশ খুবই খারাপ হওয়ায় অন্য কারখানার মিষ্টি কিনি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে খুব দ্রুতই কারখানাটি বন্ধ করার আশ্বাস দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম।

আরও খবর

Sponsered content