11 February 2025 , 7:17:02 প্রিন্ট সংস্করণ
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালুর দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার পর মেডিকেল কলেজের সামনে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়ক অবরোধ করে এই বিক্ষোভ সমাবেশ করে তারা। এর আগে তারা হাসপাতালের পরিচালক আনোয়ারুল ইসলামকে তার অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালু না হওয়ায় মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, রোগীসহ সাধারণ মানুষের ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে, ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর দাবি জানিয়ে আসছি। তবে আশ্বাস ছাড়া বাস্তবায়নের মুখ দেখিনি। দ্রুত হাসপাতাল চালু করা না হলে আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাদের দাবি না মানার কারণে আমরা হাসপাতালের পরিচালককে অবরুদ্ধ করেছি এবং সড়ক অবরোধ করেছি। এ সময় সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ যাত্রীরা। শিক্ষার্থী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অবরোধের খবর পেয়ে প্রথমে কুষ্টিয়া চৌড়হাস হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ফিরে আসেন। পরে ক্যাপ্টেন সোহানুরের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি দল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘটনাস্থলে যান। বেলা ১টার কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনী ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে আগামী ২০ দিনের মধ্যে শিশু বিভাগ ও মেডিসিন বিভাগ চালুর লিখিত আশ্বাসে বেলা দেড়টার দিকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে কুষ্টিয়া শহরে ম্যাটসে (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) অস্থায়ীভাবে মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয় ২০২২ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। সেখানে ছয়তলা একাডেমিক ভবন, চারতলা করে দুটি হোস্টেল, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তিন ও দোতলাবিশিষ্ট ডরমিটরি, মসজিদসহ আরও কিছু ভবন হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লিনিক্যাল ক্লাস করেন। শিক্ষার্থীরা দুটি ভাড়া বাসে যাতায়াত করেন। কারণ, মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল অংশ চালু হয়নি। এদিকে তিন দফা কাজের মেয়াদ বাড়ানোর পরও মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল চালু হয়নি। নির্মাণাধীন হাসপাতাল ভবনের একটি ব্লকে গত বছরের ১৫ নভেম্বর আংশিক বহির্বিভাগ চালু হয়। সেখানে শুধু বহির্বিভাগে কিছু রোগী দেখা হয়। হাসপাতালে রোগী ভর্তি, এমনকি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয় না।
আন্দোলনকারী মেডিকেল শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা বলেন, হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালু না হওয়ায় মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, রোগীসহ সাধারণ মানুষের বেশ অসুবিধা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বারবার আশ্বাস দিয়েও এখন পর্যন্ত পুরোদমে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু করতে পারেনি।
এমবিবিএস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম শাহরিয়ার বলেন, শুধু বহির্বিভাগ চালু রাখা হয়েছে। ১ ফেব্র“য়ারি হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর কথা থাকলেও তা হয়নি। তিন মাস আগেই প্রশাসনিক অনুমোদন হয়ে গেছে। তারপরও চালু হয়নি। অবিলম্বে মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল চালুর দাবি জানান তিনি। বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃত্বদানকারী এমবিবিএস নবম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘পরিচালক স্যার আমাদের জানিয়েছেন ২০ দিনের মধ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিশু ও মেডিসিন বিভাগ চালু করবেন। আগামী এক মাসের মধ্যে সার্জারিসহ অন্যান্য বিভাগ চালু করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের পক্ষ নিয়ে পরিচালক স্যারের সাথে কথা বলেছেন। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।’ কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবির বলেন, দ্রুততার সঙ্গে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ চালু করার বিষয়ে সব পদক্ষেপ চলমান আছে। শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামী ২০ দিনের মধ্যে শিশু বিভাগ ও মেডিসিন বিভাগ চালুর লিখিত আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কুষ্টিয়া চৌড়হাস হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বেলা ২টার দিকে বলেন, এখন যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।