অপরাধ বার্তা

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চালুকরণের প্রশাসনিক অনুমোদন

৫০০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চালুকরণের প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। গত সোমবার (১৮ নভেম্বর) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ইম্মে হাবিবা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে প্রশাসনিক অনুমোদনের বিষয়টি জানানো হয়। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ডঃ শাহ মোঃ হেলাল উদ্দীন হাত থেকে চালুকরণের প্রশাসনিক অনুমোদনের কপি গ্রহণ করে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার। প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার, এর আগেও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা চালুর বিষয়ে নিজে উদ্যোগ গ্রহন করেন।

গত ৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হসপিটাল চালুর ব্যাপারে প্রসাশনিক অনুমোদন ত্বরান্বিত করা এবং পূর্ণাঙ্গভাবে হসপিটাল চালুর ব্যাপারে হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সাথে মতবিনিময় করেন প্রকৌশলী জাকির হোসনে সরকার। এছাড়াও তিনি গত ১২ নভেম্বর এই বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ডঃ শাহ মোঃ হেলাল উদ্দীনের সাথে স্বাক্ষাৎ করে তার নিকট কুষ্টিয়া জেলা বাসীর পক্ষ থেকে মেডিকেল কলেজ চালুর বিষয়ে ফলপ্রসু আলোচনা করেন। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চালুকরণের প্রশাসনিক অনুমোদনের বিষয়ে প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে সীমাহীন দূর্ণীতির কারনে চালু করা সম্বব হয়নি। যার ফলে কুষ্টিয়া জেলা সহ আশে পাশের জেলা প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ কাঙ্খিত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত ছিলো।

আশা রাখি, সব সমস্যা কাটিয়ে দ্রুত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হবে। সেই সাথে মেডিকেল কলেজের দূর্ণীতির সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বিএনপি দূর্ণীতির সাথে কোন আপোস করে না। কেউ দূর্ণীতি করে পার পাবে না। যারা দূর্ণীতি করবে. তাদেরকে দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চত করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। উল্লেখ্য, দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং মানসম্পন্ন চিকিৎসক অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে সরকার পর্যায়ক্রমে সকল জেলায় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন করা হয়।

এর ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে কুষ্টিয়াতেও একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। “কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্প, কুষ্টিয়া (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক ২৭৫৪৩.৫১ লক্ষ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জানুয়ারী ২০১২ হতে ডিসেম্বর ২০১৪ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্যে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করে ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত পুনঃনির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদ পুনরায় এক বছর বৃদ্ধি করে ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত পুনঃনির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পটির ১ম সংশোধন ২১ জুন ২০১৮ তারিখে ৬১১০৮.৪৬ লক্ষ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জানুয়ারী ২০১২ হতে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। সর্বশেষ ২৫ জুন ২০১৯ তারিখে প্রকল্পটির আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয় করা হয়। ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্যসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, চিকিৎসা শিক্ষার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা, চিকিৎসক তৈরীর মাধ্যমে চিকিৎসক এবং জনসাধারণের আনুপাতিক হার যৌক্তিক করা,

চিকিৎসা শিক্ষাকে বিকেন্দ্রিকরণ করা, প্রান্তিক জেলার তৃণমূল জনসাধারণ পর্যায়ে চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা, চিকিৎসা শিক্ষার চাহিদা পূরণ করা ইত্যাদি। প্রাক্কলিত ব্যয়ের (৬১১.০৮ কোটি টাকা) বিপরীতে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ২০৭.৩০ কোটি টাকা যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৩৩.৯৩%। মূল ডিপিপি অনুসারে তিন বছরে বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত প্রকল্পের খাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৬৯.৭৫% নির্মাণ খাত, ১৪,৩১% যন্ত্রপাতি ক্রয়, ৭.৯৭% ভূমি অধিগ্রহণ এবং ৪.২৯% আসবাবপত্র ক্রয়। তম্মধ্যে নির্মাণখাতে ৩২.৩৬% আর্থিক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। উল্লেখ্য, উক্ত ব্যয় সম্পাদনের জন্য চলমান নির্মাণ কাজ ও অবশিষ্ট ৪২টি প্যাকেজের নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান থেকে শুরু করে নির্মাণ সমাপ্ত করা, নির্মিত স্থাপনায় যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র ক্রয় করে স্থাপন করতে হবে। প্রকল্পের কার্যক্রম জানুয়ারি ২০১২ থেকে শুরু হয়ে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত আট বছরে প্রকল্পের ভৌত কাজের আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৩৪%।

প্রকল্পের মেয়াদ ইতোমধ্যে ২০০% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এ মেয়াদে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয় নাই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি, সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত, স্বাস্থ্য ও সংস্থাপন বিভাগের অব্যবস্থাপনা ও অস্বচ্ছতার সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবে এ অবস্থা তৈরি হয়। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতিও খুঁজে পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।সোমবার (৮ নভেম্বর ২০২১) দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ শফিউল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করে । কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (৮ নভেম্বর ২০২১) একটি অভিযান পরিচালনা করে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। সমন্বিত জেলা কার্যালয়, কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে সরেজমিন নির্মাণ প্রকল্প পরিদর্শন করে এনফোর্সমেন্ট টিম। এ সময় টিম কাজের মান যাচাই করে এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে। তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দুদক টিম জানতে পারে মেডিকেল কলেজ ভবন নির্মাণের আগে ফিজিবিলিটি টেস্ট করা হয়নি। কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে এবং প্রকল্পের নথিপত্র সংগ্রহ করে দুদক টিম।

আরও খবর

Sponsered content