20 November 2024 , 4:58:43 প্রিন্ট সংস্করণ
একজন মুসলিমের জন্য শান্তিময় হৃদয় স্পন্দনের প্রিয় জায়গা মসজিদ। সেই মসজিদটি যদি হয় দৃষ্টি নন্দন আর অনাবিল সুন্দর, মার্জিত মনোরম কারুকাজ এবং দর্শনীয়, তাহলে তো আলাদা আবেগ থাকবেই! মসজিদে প্রবেশ করেই প্রশান্তির নির্মল পরশ শরীর জুড়ে বয়ে গেলে কার না ভালো লাগে! ইবাদত বন্দেগীতে মনোনিবেশ স্থির হলে বার বার মনটা সেখানে যেতে চাইবেই।
প্রশান্তিময় তেমনি একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর নিভৃত গ্রাম সদরপুরের পল্লীতে। জরাজীর্ণ মসজিদ থেকে নতুন নির্মিত মার্জিত আকর্শনীয় এই মসজিদে নামাজ আদায় শেষে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। প্রতিনিয়ত জেলার বাইরে থেকেও নিয়মিত বিভিন্ন পর্যটকরা আসছেন দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি দেখতে। জুমার নামাজে পর্যটকদের উপস্থিতি প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
জানা যায়, সদরপুরের আলিমুদ্দিন শেখ অত্যন্ত ধর্মভীরু একজন ব্যক্তি। এই বৃদ্ধ বাবা তার শিল্পপতি ছেলেকে একদিন বলেছিলেন, ‘তোমার কাছে আমার কিছুই চাওয়ার নেই। শুধু গ্রামে একটা ভালো মসজিদ নির্মাণ করে দিতে হবে‘। বৃদ্ধ বাবার একমাত্র ইচ্ছা পূরণ করতে ছেলে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ ঘর নির্মাণ করেছেন শিল্পপতি ছেলে মোহাম্মাদ শেখ সাদী। তিনি ঢাকাস্থ শীর্ষস্থানীয় রিয়েল এস্টেট কোম্পানি এশিউর গ্রæপের চেয়ারম্যান ও রিহ্যাবের পরিচালক। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার নন্দনালপুর ইউনিয়নের সদরপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় ১৫ কাঠা জমির উপর মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের পাশেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি আবাসিক মাদরাসাও।
জানা গেছে, ১৯৮৭ সাল থেকে ওই এলাকার মুসলমানরা একটি জরাজীর্ণ মসজিদে সালাত আদায় করে আসছিলেন। এলাকার বাসিন্দা হিসেবে আলিমুদ্দিন শেখও সেই মসজিদে নামাজ কালাম করতেন। মসজিদের জরাজীর্ণ পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে শিল্পপতি ছেলে মোহাম্মদ শেখ সাদীর কাছে একটা ভাল মসজিদ নির্মাণের ইচ্ছা পোষণ করেন। বাবার ইচ্ছে পূরণ করতে ২০১৯ সালে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদ ঘর নির্মাণ করেন ছেলে।
দৃষ্টিনন্দন দোতলা বিশিষ্ট মসজিদের ছাদের চার কোনায় রয়েছে ১৯ ফিট উচ্চতায় ৪ ফিট দৈর্ঘ্য ও ৪ ফিট প্রস্থের চারটি মিনার ও মাঝখানে রয়েছে মিনারের সমান উচ্চতায় ২৫ ফিট ডায়া একটি বড় গম্বুজ। গম্বুজের পাশেই রয়েছে একটি ছোট্ট কক্ষ। মসজিদের ফ্লোরে ব্যবহৃত হয়েছে ইন্ডিয়ান উন্নত মার্বেল পাথর আর জানালায় ব্যবহার হয়েছে থাই চমৎকার গøাস। দেওয়ালের কিছু অংশেও মার্বেল পাথর সৌন্দয্য বাড়িয়েছে। মসজিদে রয়েছে গ্রীলসহ মোট ৭০টি জানালা। নিচতলা ৩৩টা ও দেতলায় ৩১টাসহ মোট ফ্যান রয়েছে ৬৪টি। ইসলাম ও মুসলিম সংস্কৃতি ধর্মীয় বিভিন্ন কারুকাজ করা মোট ৬টা কাঠের মোটা দরজা স্থাপন করা হয়েছে এই মসজিদে। প্রধান ফটকের প্রবেশ পথে তিনটা এবং বারান্দায় তিনটা। সাদী মসজিদের চারপাশে রয়েছে পাকা ও লোহার চমৎকার বাউন্ডারি দেওয়াল। দেওয়ালে ৪৯টি সুসজ্জিত লাইট রয়েছে। আছে উন্নতমানের সাউন্ড সিস্টেম। বাউন্ডারির মধ্যে মসজিদ কমপ্লেক্সটির পাশেই অবস্থিত নূরানি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় অধ্যায়ন করছে শতাধিক শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী। হাফেজে কোনআনদের যাবতীয় ব্যয় বহন করছেন এই শিল্পপতি। আলোড়িত সাদী মসজিদে এক সাথে প্রায় এক হাজার জন মুসুল্লী সালাত আদায় করতে পারেন।
মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা এশিউর গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ শেখ সাদী দিন দিন দানশীল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছেন। সদরপুরের এই মসজিদটি এখন সাদী মসজিদ নামে খ্যাতি পাচ্ছে। তিনি বিভিন্ন মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন। এব্যাপরে সাদী জানান, অগনিত মসজিদ মাদরাসাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মেধাদী শিক্ষার্থীদের সহায়তা করি সব সময়। আমার প্রতিষ্ঠিত মসজিদ কেন্দ্রীক সামাজিক কর্মকান্ড আরো প্রসারের ইচ্ছা আছে।
মসজিদটি নির্মাণ কাজের ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আজাদ বলেন, বাবার ইচ্ছে পূরণ করতে শেখ সাদী সাহেব তিন কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। এমন একটি স্থাপনার সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করছেন বলেও জানান।
সাদী মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মাসুম বিল্লাহ্ এবিষয়ে বলেন, আমি দেশের বিভিন্ন জেলা ঘুরেছি, অনেক মসজিদে নামাজ পড়েছি, তবে এত সুন্দর মসজিদ কোথাও দেখিনি। তিনি আরো বলেন, মোহাম্মাদ শেখ সাদী সাহেব বাবার ইচ্ছায় মসজিদটি নির্মাণ করেছেন এলাকাবাসীর জন্য। এই সৌন্দর্য্যপূর্ণ মসজিদটি দেখতে এবং এখানে নামাজ আদায় করতে প্রতিদিনই আসছেন বিভিন জেলা এবং জেলার বাইরে থেকে অনেক পর্যটক মুসুল্লী।
সাদী মসজিদে আগত খোকসা উপজেলার কমলাপুরের আব্দুর রহমান ও সালেক মাহমুদ এই প্রতিবেদককে জানান, অনেক দুর থেকে এই মসজিদ দেখতে এসে ভালোই লাগছে। একটি অজপাড়া গাঁয়ে এমন একটি স্থাপনা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। আরেক পর্যটক আব্দুল গফুর, তিনি জানালেন- রাজবাড়ীর হাকিমপুর থেকে এসেছি, বেশ ভালো লাগছে। তবে তিনি মসজিদে যাওয়ার পাশর্^ রাস্তায় খানাখন্দের জন্য দুঃখ করেন। –মাহমুদ শরীফ