বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

আবারও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য সুখবর

অবশেষে গ্রাহকদের জন্য সুখবর দিল বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি)। ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় সমুদ্রের তলদেশে বিচ্ছিন্ন হওয়া সাবমেরিন ক্যাবলের মেরামত কাজ শেষ। এখন পুনরায় সংযোগ সচল করা হয়েছে। শিগগির মিলবে পূর্ণ গতির ইন্টারনেট সেবা।বিএসসিপিএলসি মহাব্যবস্থাপক (চালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) সাইদুর রহমান আজ রবিবার সকালে গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, ‘আমাদের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটি (এসএমডব্লিউ-৫) সিঙ্গাপুর থেকে কিছুটা পশ্চিমে ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় কাটা পড়েছিল। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় সেটার মেরামত কাজ শেষ হয়েছে গত ২৮ জুন।

এখন সিমিউই-৫ সংযোগ পুরোপুরি সচল। ধীরে ধীরে ইন্টারনেটের গতি বাড়বে। কয়েকদিনের মধ্যে পূর্ণ গতির ইন্টারনেট পাবেন গ্রাহকরা। বিএসসিপিএলসি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে মোট ব্যান্ডউইথের ব্যবহার ৫ হাজার জিবিপিএসের বেশি। এর অর্ধেকেরও বেশি প্রায় ২ হাজার ৭০০ জিবিপিএস আন্তর্জাতিক টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল (আইটিসি) লাইসেন্সের মাধ্যমে আসে, যা ভারত থেকে স্থলপথে ব্যান্ডউইথ আমদানি করতে ব্যবহৃত হয়।বাকি ২ হাজার ৪০০ জিবিপিএসের মতো ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করে বিএসসিপিএলসি। দুটি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এ ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য-পশ্চিম ইউরোপ-৪ (সিমিউই-৪) কনসোর্টিয়ামের সদস্য।

২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হয়। এর ল্যান্ডিং স্টেশন কক্সবাজারে। এটি প্রায় ৮০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করে থাকে।দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সিমিউই-৫ প্রবেশ করেছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা হয়ে। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এক হাজার ৬০০ জিবিপিএস সরবরাহ করা হয়। দুই মাস ৮ দিন পর অবশেষে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল (এসএমডব্লিউ-৫) চালু হয়েছে। গত ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসির (বিএসসিপিএলসি) আওতাধীন দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটি সিঙ্গাপুর হতে পশ্চিম প্রান্তে ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় আকস্মিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

এই দীর্ঘসময়ের মধ্যে ক্যাবলটির মেরামত সম্পন্ন হয়েছে এবং সার্কিটগুলো চালু করা হয়েছে।বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসির (বিএসসিপিএলসি) মহাব্যবস্থাপক (চালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) সাইদুর রহমান এ তথ্য জানান।বিএসসিপিএলসি জানায়, গত ১৯ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টায় বিএসসিপিএলসির আওতাধীন দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটি (এসএমডব্লিউ-৫) সিঙ্গাপুর হতে পশ্চিমপ্রান্তে ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় আকস্মিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে ইন্টারনেট সংযোগে বিঘ্ন ঘটে।

সাইদুর রহমান জানান, এসএমডব্লিউ-৫ কনসোর্টিয়াম শুক্রবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ক্যাবলটির মেরামত কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে। বিএসসিপিএলসির এসএমডব্লিউ-৫ এর মাধ্যমে সংযোগ করা সার্কিটগুলো চালু করা হয়েছে।কক্সবাজারে অবস্থিত দেশের প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল, কুয়াকাটায় অবস্থিত সাবমেরিন ক্যাবল এবং কয়েকটি আইটিসি বা ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবলের মাধ্যমে দেশে ইন্টারনেট সরবরাহ করা হয়ে থাকে।বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সাবমেরিন কেবল ‘এসএমডব্লিউ-৪’ এ যুক্ত হয় ২০০৫ সালে, যার মাধ্যমে ২৫০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাচ্ছে।এছাড়া বাংলাদেশ ছয়টি বিকল্প সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।

যেগুলোর মাধ্যমে ভারত থেকে ব্যান্ডউইথ আমদানি করা হয়।আর ২০১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালীর কুয়াকাটার কলাপাড়ায় চালু হয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন। এই ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে সাউথইস্ট এশিয়া-মিডলইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ (এসএমডব্লিউই-৫) আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের সাবমেরিন ক্যাবল থেকে সেকেন্ডে ১ হাজার ৫০০ গিগাবাইট (জিবি) গতির ইন্টারনেট পাচ্ছে বাংলাদেশ।শিক্ষা ও ডিজিটাল দক্ষতার অভাবে দেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে নারীরা। যদিও এ বিষয়ে তাদের আগ্রহ পুরুষের চেয়েও বেশি। সচেতনাতেও পুরুষের কাছাকাছি তাঁরা।

মোবাইল অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশনের (জিএসএমএ) চলতি মাসে প্রকাশিত ‘দ্য মোবাইল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৪’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।জিএসএমএর প্রতিবেদন বলছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় মুঠোফোনের মালিকানায় নারীরা পিছিয়ে আছেন। বিশেষ করে অসচ্ছল, পড়াশোনা না জানা, গ্রামাঞ্চলে বসবাস করা বা বিশেষভাবে সক্ষম নারীরা আরও বেশি পিছিয়ে আছেন।প্রতিবেদনে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ১২টি দেশের তথ্য প্রকাশ করেছে জিএসএমএ। দেশগুলো হলো মিসর, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, সেনেগাল, নাইজেরিয়া, উগান্ডা, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, গুয়াতেমালা ও মেক্সিকো।

সংগঠনটি গত বছর এসব দেশে জরিপ চালায়। জরিপে ভারত বাদে বাকি ১১টি দেশে ১৫ বছর ও এর বেশি বয়সের এক হাজার নারী ও পুরুষের তথ্য নেওয়া হয়েছে। ভারতে দুই হাজার জনের ওপর জরিপ চালানো হয়।সম্প্রতি প্রকাশিত ওই জরিপের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট সেবা গ্রহণে নারী-পুরুষের ব্যবধান বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি, ৪০ শতাংশ। ভারতে এ ব্যবধান ৩০ শতাংশ, পাকিস্তানে ৩৮ শতাংশ ও ইন্দোনেশিয়ায় ৮ শতাংশ। তবে বাংলাদেশে মুঠোফোনের মালিকানা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে নারী-পুরুষের ব্যবধান কমেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ নারী ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে জানেন। এরপরও তাঁরা তা ব্যবহার করেন না। মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার না করার কারণ হিসেবে সাক্ষরতা ও ডিজিটাল দক্ষতার অভাবের কথা উঠে এসেছে, যা পুরুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এ ছাড়া সামর্থ্য না থাকাও বড় একটি কারণ।ইন্টারনেট ব্যবহারে বড় বাধা হিসেবে সামর্থ্যের বিষয়টিও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, মুঠোফোনের দাম বেশি। ইন্টারনেটের বাড়তি দামও বাধা হিসেবে ভূমিকা রাখছে। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ৮৫ শতাংশ পুরুষ ও ৬৮ শতাংশ নারী মুঠোফোনের মালিক। অর্থাৎ মালিকানায় নারী-পুরুষের ব্যবধান ২০ শতাংশের কাছাকাছি।

যদিও সর্বশেষ জরিপের আগের বছর (২০২২) এ ব্যবধান ২১ শতাংশ ছিল। এছাড়া দেশে যত পুরুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, নারীর মধ্যে সেই সংখ্যা তার অর্ধেক।জিএসএমএ বলছে, মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়ে জানেন দেশের ৩৭ শতাংশ পুরুষ। নারীর মধ্যে এ হার ২১ শতাংশ। তাঁরা মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য। অন্যদিকে, পুরুষের তুলনায় দেশের নারীরা ইন্টারনেট ব্যবহারে আগ্রহী বেশি। জিএসএমএ বলছে, দেশে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নারীর ৫৩ শতাংশ ও পুরুষের ৪৬ শতাংশ আরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চান।প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ২৪ শতাংশ নারী এবং ১৫ শতাংশ পুরুষ প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ডাটা প্যাকেজের বাড়তি দামের বিষয়টি চিহ্নিত করেছেন।

বাংলাদেশে নারী ও পুরুষ উভয়ই অনলাইন কল, ভিডিও কল এবং অনলাইনে বিনোদনের জন্য মুঠোফোনে ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করেন। পুরুষের ৫৫ শতাংশ ও নারীর ৪৫ শতাংশ অনলাইনে খবর পড়েন। পুরুষের ২৩ ও নারীর ১২ শতাংশ চাকরি ও ব্যবসা-সংক্রান্ত তথ্য অনলাইনে খুঁজে থাকেন। তবে কৃষিসংক্রান্ত তথ্য খোঁজায় ইন্টারনেট সবচেয়ে কম ব্যবহার করা হয়।জিএসএমএ বলছে, ইন্টারনেট ব্যবহার করে নেতিবাচক ঘটনার শিকার হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি অভিযোগ করেন। অনলাইনে নিরাপদ থাকার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে দক্ষ, এমন পুরুষ দেশে ৭৪ শতাংশ ও নারী ৬৫ শতাংশ।