শিক্ষা

জবি শিক্ষকের কু-প্রস্তাবের গ্লানি বুকে নিয়ে এখনও বেঁচে আছেন মিম

জবি শিক্ষকের কু-প্রস্তাবের গ্লানি বুকে নিয়ে এখনও বেঁচে আছেন মিম

ফাইরুজ অবন্তিকার ‘আত্মহত্যা’র বিচারের দাবিতে উত্তাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাদী হয়ে মামলা করতে ও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে ১২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এই সময় বেঁধে দেন।

এদিকে অবন্তিকাকে নিয়ে যখন উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঠিক সে সময়ে উঠে এলো আরেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।অবন্তিকার মতো শিক্ষক কর্তৃক যৌন হয়রানি ও কু-প্রস্তাবের স্বীকার হন ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের ১৩ তম আবর্তন ব্যাচের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মিম।তার দাবি, ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক এবং ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজক আবু শাহেদ ইমন তাকে দিনের পর দিন কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন।

তার কথায় সাড়া না দেয়ায় তাকে একাধিকবার পরীক্ষায় ফেল করানো হয় বলেও দাবি মিমের।মিম গণমাধ্যমকে বলেন, তার বাবা রাজবাড়ী প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও তার বিভাগীয় প্রধান ওই কু-প্রস্তাবকারী শিক্ষককে নিয়ে মিমের বাড়ীতে গিয়ে বহিস্কারের ভয়-ভীতি দেখিয়ে বাবাকে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার কথা জানান। ২০২২ সালের এই ঘটনা নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট হলে মিম বিজয়ী হন।

তারপরও সেই কু-প্রস্তাবকারীর বিচার হয়নি বলে জানান মিম।আজ যখন অবন্তিকার ‘আত্মহত্যা’র বিচারে সোচ্চার পুরো বিশ্ববিদ্যালয় তখন মিম নিজে ভিকটিম হয়ে গণমাধ্যমের সামনে হাজির হন এবং শক্ত অবস্থানে দাঁড়ান।মিম আরও বলেন, আমার আর ছাত্রত্ব হারানোর ভয় নেই। আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছি।

এই ঘটনার পর কোন শিক্ষার্থী আমার সঙ্গে মিশেনি।মিম বলেন, সহপাঠিরাও আমার সঙ্গে মিশতে চায় না তাদেরকেও ফেল করিয়ে দেওয়া হবে এই ভয়ে। এমনকি গেল বছর সমাবর্তনে সহপাঠিদের সঙ্গে ছবি তুলতে গেলে তারা আমার থেকে দূরে সরে যায়। মিমের দাবি, কোন সংগঠন করি না বলে আমার চরিত্র নিয়েও কথা তোলেন।

যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন আমি নিজেই ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে একা প্রতিবাদ করেছি। তখন থেকে একাধিক অনলাইনে খবর চাউর হলেও কু-প্রস্তাবকারী প্রযোজক আবু শাহেদ ইমন নিজের ক্ষমতায় সেখান থেকে নিউজ সরিয়েছেন।বিগত সময়ে আপোষ করেছেন কি না জানতে চাইলে মিম বলেন, আমাকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বলে নানান রকমের অপমান করেছেন।

চেয়ারম্যান স্যার আমার কাছ থেকে মুচলেকা নেয়ার জন্য ঘরবন্দি করার চেষ্টা চালিয়েছেন। সেখান থেকে পালিয়েছি। গত দুই বছর আমি বিন্দু পরিমান আপোষ করি নাই। সকল প্রমাণ আছে বলেও জানান এই শিক্ষার্থী।রাজধানীতে একা থাকায় শঙ্কিত তিনি। বিচার চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর নিকট। মিম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের মমতাময়ী মা।

তিনি আমাদের নারী উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন।নারী শিক্ষাকে এগিয়ে রেখেছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে সঠিক বিচারের দাবি জানাই।মিমের দাবি, বিভিন্ন সময় মোবাইলে পাঠানো কু-প্রস্তাবের স্ক্রীনশট রয়েছে তার কাছে।মিমের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে আবু শাহেদ ইমনকে ফোন করা হলে তিনি সোনালীনিউজকে বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর (মিম) অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

দুই বছর আগের এই ঘটনা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে তাই মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করতে চাই না।মিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং প্রতিটি কমিটি ঘটনার সত্যতা খুঁজে পেয়েছে এমন প্রতিবেদন দিলেও তা মানেননি ওই শিক্ষক।

যদিও বিষয়টিকে মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি। এছাড়া আদালতে করা রিট আবেদনের রায় মিমের পক্ষে ছিলো, এমন দাবিও মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন শিক্ষক ইমন।