রাজনীতি

মাঠে নামাতে মরিয়া বিএনপি নেতাকর্মী

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেষ সময়ে খুলনায় দলীয় নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি। মামলা ও বাড়ি বাড়ি পুলিশের তল্লাশির কারণে আত্মগোপনে রয়েছে খুলনা বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী। গ্রেপ্তার এড়াতে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে না অনেকেই। এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে থাকছেন কিছু নেতাকর্মী। ফলে জোরদার হচ্ছে না আন্দোলন। এ অবস্থায় ১০ জন নেতাকে শোকজ ও একজনকে বহিষ্কার করেছে দলটি।

দলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করে আরও কঠোর অবস্থানে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি।বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের দিন থেকে তালাবদ্ধ রয়েছে নগরীর কে ডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়। এরপর আন্দোলন চলাকালে নেতাকমীদের বিরুদ্ধে জেলা ও নগরীতে এক ডজনেরও বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে। সে কারণে অধিকাংশ নেতাকর্মী আত্মগোপন করেছেন।

কেউ কেউ এলাকা ছেড়েছেন, অনেকে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে থাকছেন। এছাড়া অনেকে নিজ এলাকায় থাকলেও গ্রেপ্তার এড়াতে মাঠে নামছেন না দলীয় কর্মসূচিতে।এ অবস্থায় নড়েচড়ে বসেছে খুলনা জেলা ও মহানগর বিএনপি। দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকায় নগরীর খালিশপুর থানা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ জাহিদুল ইসলাম ও সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান বিশ্বাসকে ১৩ ডিসেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় মহানগর বিএনপি। একই দিন ডুমুরিয়ার ধামালিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. জহুরুল হককে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং চলমান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করায় সকল পদ-পদবী থেকে বহিষ্কার করে জেলা বিএনপি।

এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর দলীয় কর্মসূচিতে নিয়মিত উপস্থিত না থাকায় ৮ নেতাকে শোকজ করে জেলা বিএনপি। তারা হলেন রূপসা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খান জুলফিকার আলী জুলু, ডুমুরিয়া উপজেলা আহবায়ক মোল্লা মোশাররফ হোসেন মফিজ, তেরখাদা উপজেলা সভাপতি চৌধুরী কওসার আলী, কয়রা উপজেলা আহবায়ক মোমরেজুল ইসলাম, দাকোপ উপজেলা আহ্বায়ক অসিত কুমার সাহা, ফুলতলা উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মো. সেলিম সরদার, তেরখাদা উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মো. রবিউল হোসেন এবং ফুলতলা উপজেলা সদস্য সচিব মো. মনির হাসান টিটো।

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শেখ আবু হোসেন বাবু বলেন, দুঃসময়ে যারা রাজপথে আসছে না তাদেরকে রাজপথে নামানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের সক্রিয় করা এবং আন্দোলন জোরদার করতে আরও কঠোর অবস্থান নেয়া হবে।জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী বলেন, দলের পদধারী কিছু নেতার নিষ্ক্রিয় থাকার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জিরো টলারেন্স। তিনি নিজেই বিষয়টি মনিটরিং করছেন। সে কারণে তাদেরকে শোকজ করা হয়েছে।

এদিকে বিএনপির লাগাতার কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর গত ৩০ অক্টোবর রাতে রূপসা উপজেলার বাগমারা এলাকায় একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ১ নভেম্বর নগরীর আড়ংঘাটা এলাকায় ককটেল হামলায় ট্রাক চালক আহত হন। ২ নভেম্বর দিঘলিয়া উপজেলার চন্দনীমহল গ্রামে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ৫ নভেম্বর রূপসা উপজেলার তালিমপুর এলাকায় একটি ও ২৮ নভেম্বর সোনাডাঙ্গা এলাকায় আরেকটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ৬ ডিসেম্বর দুপুরে নগরীর শেরে বাংলা রোডে বাস ভাঙচুর করা হয়।

এসব ঘটনায় পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এছাড়া গত ১৩ ডিসেম্বর ভোররাতে পাইকগাছা উপজেলায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাস কক্ষে পেট্রোল ছিটিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়।মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, পুলিশ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। জেলা ও নগরীর ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে। পুলিশের তল্লাশির কারণে নেতাকর্মীরা বাড়ি ছাড়া। তারপরও নেতাকর্মীরা রাজপথে দিনে-রাতে মিছিল করছে।

এই আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। তিনি দাবি করেন, নাশকতামূলক যেসব কর্মকাণ্ড ঘটছে এর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অন্যরা করে তার দায় বিএনপির উপর চাপাচ্ছে।এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, যারা শান্তি শৃংখলা বিঘ্ন ও নাশকতা করছে, তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখানে রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় আনা হচ্ছে না।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলনা জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের আগে নাশকতা আরও বাড়তে পারে, সে বিষয়টি তাদের বিবেচনায় রয়েছে। নাশকতা প্রতিরোধে তারা তৎপরতা বৃদ্ধি করেছেন।

%d bloggers like this: