28 August 2023 , 4:38:38 প্রিন্ট সংস্করণ
খুব অল্প বয়সে তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হলো সালমাকে। পাচারের শিকার হয়েছেন অপ্রাপ্তবয়স্ক এই মেয়ে। নিজের দুরাবস্থার শুরু থেকে বর্তমান পরিস্থিতির পুরোটাই তিনি খুলে বলেছেন বিবিসিকে।মেয়েটি অপ্রপাপ্তবয়স্ক হওয়ায় সংবাদে তার নাম প্রকাশ করা হয়নি। ছদ্মনাম ‘সালমা’ ব্যবহার করে তুলে ধরা হয়েছে তার ঘটনা।
কাজ ও অর্থ উপার্জনের প্রত্যাশায় অবৈধ পথে ভারত পৌঁছে ছিল সালমা। সম্প্রতি গুজরাট থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে তাকে।সালমা জানান, চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছিলেন তিনি ও তার পরিবার। এরমধ্যেই তার খালা এক ঈদে ভারত থেকে তাদের বাসায় আসেন।
তিনি সালমাকে ভারতে নিয়ে গিয়ে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সে দেশে সালমাকে নিয়েও যান তিনি। কিন্তু শেষমেশ বিক্রি করে দেন সালমাকে।চাকরি পেলে অভাব ঘুচবে—এই আশায় খালার সঙ্গে ভারত যেতে রাজি হন সালমা। তখন তার বয়স ১৫ বছর। অবৈধভাবে সালমাকে ভারত নিয়ে যান তার খালা। কিন্তু সেখানে গিয়েই বদলে যায় খালার আচরণ।
তার খালা সাফ জানিয়ে দেন, পাসপোর্ট নেই সালমার। তাই তিনি যে কাজ দেবেন সালমাকে সেটাই করতে হবে। তা না হলে খাটতে হবে জেল।সালমা হিন্দি ভাষা জানত না। তবে সে যে বড় সমস্যায় পড়েছে সেটা আঁচ করতে পারছিল। একপর্যায়ে একটি হোটেলে নিয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে সালমাকে পরিচয় করিয়ে দেন তার খালা।
এর মধ্যে খালা সালমার কাছে টাকাও দাবি করে বসেন। বলেন, ভারতে থাকতে হলে তাকে টাকা দিয়ে থাকতে হবে। এতে আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে সালমা। এখান থেকেই তার সমস্যার শুরু। সালমা বুঝতে পারেন তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। প্রতি রাতেই চলত তার দেহ বেচাকেনা।
সালমা বলেন, ‘প্রতি রাতে তারা আমার দেহ আঁচড়ে খেয়েছে। অনেক সময় আমাকে ১০ জনের সাথে শুতে হতো, কখনো কখনো ১৮ জনের সাথেও থাকতে হয়েছে। এর বিনিময়ে আমি যা পেয়েছি তা হলো খাবার আর ঘুমানোর জায়গা। অনেক সময় খদ্দেররা বকশিস দিত, আর সেটাই ছিল আমার একমাত্র উপার্জন।
সালমা জানায়, তাকে যে নিয়োগ দিয়েছে সে বলতো, প্রতি মাসে তার মায়ের কাছে টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু পরে সে জানতে পারে তার মা কোনো টাকাই পায়নি।সালমা সেখান থেকে পালাতে চাইত। কিন্তু পালিয়ে যাবে কোথায়? বাইরে রয়েছে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়। কিন্তু একদিন পালানোর সুযোগ পেয়ে যায় সে।
সেদিন কোনো খদ্দের না আসায় হোটেল থেকে পালানোর সুযোগ পেয়ে যায় সালমা। সেখান থেকে পালিয়ে একটি বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে পৌঁছান। কিন্তু সেখানে পুলিশ দেখে লুকিয়ে পড়েন। পরে আশপাশের লোকজন চোর সন্দেহে সালমাকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন। পুলিশ সালমার অবস্থা দেখে তাকে মহিলা আশ্রমে নিয়ে যায়।
সেই আশ্রমে অনেক নিপীড়িত নারী বাস করত। সেখানে তাদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করা হতো। সালমা বলেন, ‘এখানকার ভালো ব্যবস্থাপনা দেখে, আমি ধীরে ধীরে তাদের আমার বিষয়ে, আমার যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতার বিষয়ে বলতে শুরু করি।সালমা এই প্রতিষ্ঠানে এমব্রয়ডারি, সেলাই এবং কৃত্রিম গয়না তৈরির কাজ শিখেছেন।
এমনকি তিনি তার তৈরি পণ্য বেচে দুই লাখ রুপি আয়ও করেছেন।বাংলাদেশে ফেরার আগে সালমা গুজরাটের জাগরুত মহিলা সংস্থা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে দুবছর ছিলেন। তারাই সালমাকে বাংলাদেশে তার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন।
জাগরুত মহিলা সংস্থার প্রেসিডেন্ট আশাভান জানান, সালমা যখন তার অফিসে আসে, তখন সে চুপচাপ একটা কোণে বসে থাকত। তারা তাকে চিকিৎসা দেন।অন্যদিকে, সালমার খালাকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সালমা এখন বাড়ি ফিরেছে।