রাজনীতি

মার্কিন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে কী কথা হলো জানালেন আমির খসরু

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব পরিস্থিতি যাচাই করতে বাংলাদেশে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। আজ সোমবার সকাল সোয়া ১০টায় রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই বৈঠক শুরু হয়।বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরেন।উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি জানান, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, ওই নির্বাচনে অংশও নেবে না বিএনপি। বাংলাদেশে সফররত মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলকে এ কথা জানিয়েছে তার দল।

এ সময় আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন শুধু দেশের মধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ নয়, আজকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। যেহেতু বাংলাদেশের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ, তাই বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে চায় তাদের একজন নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য, আন্তর্জাতিক মানের, অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন। বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোও বাংলাদেশে এমন একটি নির্বাচন চায়।তিনি বলেন, ‘এর আগে আপনারা দেখেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে কথা বলে গেছেন। ফিরে গিয়ে তারা তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন যে, বাংলাদেশে তারা কোন পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। কারণ বাংলাদেশে নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই। এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একই উদ্দেশ্যে পর্যবেক্ষক দল এসেছে। তারা বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে এসেছেন।

ইতিমধ্যে তারা অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন, আরও বলবেন। ঘুরে ফিরে কথা একটাই- নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য, আন্তর্জাতিক মানের, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বাংলাদেশে হবে কিনা! হতে হলে- কি প্রয়োজন? কিভাবে করা যায়?  স্বাভাবিকভাবে আমরা সব সময় যেটা বলে এসেছি ‘শেখ হাসিনার অধীনে কোন নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা বিগত দুই তিনটি নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। আজকে যাদের বয়স ত্রিশ-বত্রিশ হয়েছে বিগত নির্বাচনগুলিতে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেনি। এই অবস্থার পরিবর্তন হয়নি, বরং আরও অবনতি হয়েছে। এখন নিপীড়ন নির্যাতনসহ ভোট চুরির প্রকল্প অধিকতর শক্তিশালী হয়েছে। ভোট চুরির প্রকল্পকে তারা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা, লুটেরা ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ একটা প্রকল্প করেছে।

আবারও তারা বাংলাদেশের মানুষের ভোটচুরি করার অভিপ্রায়ে কাজ করে যাচ্ছে।আমির খসরু বলেন, ‘এখন থেকে মুক্ত হতে হলে আমাদের এক দফা দাবি, এই শেখ হাসিনা সরকার, এটা সরকার বলা ভুল হবে, এটা একটি রেজিম-এই রেজিমের পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার মতামতের ভিত্তিতে আরেকটি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এরপর নির্বাচনী যত জঞ্জাল সৃষ্টি করা হয়েছে তা সমাধান করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দেশে জনগণের ভোটে একটি সংসদ হবে, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি-এটা এখন জনগণের দাবি।

দেশের জনগণ বিশ্বাস করে বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে তারা ভোট দিতে পারবে না, এতে কারো কোনো সন্দেহ নেই। এই প্রেক্ষাপটে নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছি।তিনি বলেন, ‘তারাও গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক মানের, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচনের কথা বলছেন। এটার সঙ্গে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো ব্যবধান নেই। অর্থাৎ শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে তা হবে না, এ জন্য তো তারা কথাগুলো বলছে। তারা তো তত্ত্বাধবায়ক সরকারের কথা বলতে পারে না। এই দাবি তো উঠেছে এই দেশের জনগণের কাছ থেকে। এই সরকারের অধীনে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন হবে না বলেই তো গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশের ওপর চোখ রাখছে। তারা শুধুমাত্র বলছে না, অ্যাকশনেও গেছে। ভিসানীতি দিচ্ছে, স্যাংশন দিচ্ছে।

গণতান্ত্রিক সম্মেলনে ১১০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। বার্তাগুলো নিয়মিত দিচ্ছে। মানবাধিকার, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা তাদের মতামত দিচ্ছে।এর আগে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

%d bloggers like this: