30 June 2025 , 6:04:43 প্রিন্ট সংস্করণ
কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নেতা বাছাইয়ে ভোটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গত শুক্রবার (২৭ জুন) কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ চত্বরে সম্মেলনের পর ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। রাতে নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে এই ফলাফল মানতে নারাজ হন সভাপতি পদের পরাজিত এক প্রার্থী। ভোটে কারচুপির অভিযোগ আনেন তিনি।
গত রবিবার দুপুরে শহরের একটি রেস্তোরাতে জেলার দলীয় শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির নানা অভিযোগ তুলে পুনরায় ভোটগ্রহণের দাবি জানানো হয়। এ নিয়ে শহরে বিএনপি নেতাদের মধ্যে বিরোধ ছড়িয়ে পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পরাজিত সভাপতি প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক কাজল মাজমাদার বলেন, ‘ভোট অদৃশ্য শক্তিদ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। আগে থেকেই আমাকে হারানোর পরিকল্পনা ছিল। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাকির হোসেন সরকার আমার সাথে প্রতারণা করেছে। আমি আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আগামী ১ জুলাই দলীয় কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।’
তবে কাজল মাজমাদারের অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই বলে দাবি করেছেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাকির হোসেন সরকার। দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর কমিটি সম্মেলন ও ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির ২১টি ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করা হয়। গত শুক্রবার কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির কমিটি গঠন উপলক্ষে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ চত্বরে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন বিকেল ৩টা থেকে ভোট গ্রহণ চলে। ২১ টি ওয়ার্ডের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির প্রত্যেককে ভোটার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। মোট ভোটার ছিল ১ হাজার ৪৯১ জন। সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন ৬জন। রাত ১০টায় ঘোষিত ফলাফলে একে বিশ্বাস বাবুকে সভাপতি ও কামাল উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। বিজয়ী সভাপতি একে বিশ্বাস বাবু পান ৬১১ ভোট। নিকটতম প্রার্থী কাজল মাজমাদার পান ৫৯৫ ভোট।

ফলাফল ঘোষণার পর কাজল মাজমাদার ও তার সমর্থকেরা এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। কারচুপির অভিযোগ তুলে তিনি ভোট পুনর্গণনা দাবিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। শনিবার বিকেলে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ে অবস্থান করেন তাঁরা।
পরে নির্বাচন কমিশনার কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. আবদুল মজিদ জেলা বিএনপির নেতাদের উপস্থিতিতে পুনরায় ভোট গণণা করেন। সেখানে বাতিল হওয়া ভোটের মধ্যে চারটি ভোট কাজল পান। ফলে কাজল মাজমাদারের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৯৯।
এনিয়ে গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে বারটায় কুষ্টিয়া শহরের একটি রেস্তোরাতে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির পদবঞ্চিত নেতাদের ব্যানারে নেতাকর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, জেলা বিএনপির দুই নেতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হয়েছে। ব্যালট পেপার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ভোটের নির্বাচন কমিশনার যোগসাজসে ভোট চুরি করেছে। ফলাফল তথা পুরো নির্বাচন প্রত্যাক্ষান করছেন। এ ব্যাপারে তারা আদালতে যাবেন।
কাজল মাজমাদারের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মিরাজুল ইসলাম রিন্টু বলেন,‘একজন পোলিং এজেন্টকে পুরো ২১ ওয়ার্ড ভোটারদের চিনতে হয়েছে। সেখানে ওয়ার্ডভিত্তিক এজেন্ট রাখতে দেয়া হয়নি। গণণা শেষে রেজাল্টশীট দেওয়া হয়নি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ব্যালট পেপারের সংখ্যায় মিল ছিল না। সার্চ কমিটি নিজেদের মতো ভোটার তালিকা করেছিল। পরিকল্পিতভাবে হারানো হয়েছে আমাদের মনোনীত প্রার্থীকে।’
জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি বশিরুল আলম চাঁদ বলেন,‘এই চুরির ভোটের কারণে আগামী নির্বাচনে আমাদের ওপর জনগণের বিরুপ ধারণা তৈরি হচ্ছে। দলের চরম ক্ষতি হচ্ছে। আজ যে বিবাদ তৈরি করা হল তাতে আগামী নির্বাচনে প্রভাব পড়বে।’ কাজল মাজমাদার বলেন,‘আগে থেকে প্লান ছিল। আমার দলের মধ্যে ভোটের অধিকার যদি না পায়, কার কাছে পাবো। তার মতো (জাকির সরকার) মানুষ কেন করলো। সে (জাকির হোসেন সরকার) আমার সাথে প্রতারণা করেছে। আমি হারি নাই, হারানো হয়েছে। প্রতারণা করা হয়েছে। আবার আন্দোলন চলবে। আগামী এক জুলাই বিএনপি কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।’
এদিকে সংবাদ সম্মেলন চলার সময় কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের পুরানো পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসের ভেতর বেশ কিছু ব্যালট পেপারের টুকরো টুকরো অংশ পাওয়া যাবার খবর আসে। পরে কাজল মাজমাদারসহ সাংবাদিকেরা সেখানে যান।
পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসের ভেতর শতাধিক টুকরো ব্যালট পেপার পড়ে থাকতে দেখা যায়। জোড়া লাগালে সেখানে চেয়ার প্রতীকে (কাজল মাজমাদারের প্রতীক) সিল মারা দেখা যায়।
এসময় কাজল মাজমাদারসহ তার অনুসারীরা শহরে ব্যালট পেপারের টুকরো অংশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। কাজল মাজমাদার নেতৃত্ব দেন মিছিলের। স্লোগানে বলা হয়, ভোট চোর, ভোট চোর, জাকির সরকার ভোট চোর। মানি না মানবো না, চুরির ভোট মানি না।’ এরপর পরই অপর সভাপতি প্রার্থী আল আমিন রানা কানাই, সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী আব্দুল হাকিম মাসুদ সহ দলের কয়েকশ নেতাকর্মী পরিদর্শনে যান। এসময় সাংবাদিক ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও সুন্দরভাবেই ভোট গ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। কারচুপির অভিযোগ সঠিক না। কাজল মাজমাদারের আবেদনে পুনরায় ভোট গণণা করা হয়। সেখানে চার ভোট বেশি পান তিনি। সব কিছু মেনে নিয়ে তিনি চলে যান। এরপর কেন এমন করছে তা বোধগম্য নয়।’ তিনি আরও বলেন,‘একটা বিশৃঙ্খলা তৈরির পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’







