এক্সক্লুসিভ

যারা নিয়োগ পেয়েছে তারা অবশ্যই তাদের পরিশ্রমের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছে-পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান

“সেবার ব্রতে চাকরি” প্রতিপাদ্যে কুষ্টিয়ায় সফল ভাবে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা-২০২৪ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাত ১১ টায় কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন্স মাঠে মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষনা করে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। সেসময় পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান’র সভাপত্বি উপস্থিত ছিলেন, জেলা পুলিশের কর্মকর্তা সহ জেলাপুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যবৃন্দ। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা-২০২৪ এ সর্বমোট ৪ হাজার ৬ শত জন চাকরী প্রত্যাশি আবেদন করেন। সেখান থেকে মাঠ পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয় ৫ শত ৯১ জন। যার মধ্যে ৫ শত ৮৭ জন পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ করে ১ শত ১১ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।

এরপর মৌখিক পরীক্ষা শেষে সেখান থেকে মেধাক্রমানুসারে মেধা কোটায় ৫৪ জন এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩ জনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে ফলাফল ঘোষনা করেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৫৭ জনের মধ্যে নারী পরীক্ষার্থী তিনজন। এছাড়াও আরও ৬ জনকে অপেক্ষা মানতালিকায় রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে ঘুষ ছাড়া চাকরী পেয়ে খুশির জোয়ারে ভাসছেন প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৫৭ জন প্রার্থী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। মাঝ রাতেও চাকরী প্রত্যাশিত প্রার্থীদের পরিবারের সদস্যদের দেখা যায় কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের প্রধান ফটকে ভীড় জমাতে। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানের বলিষ্ঠ পদক্ষেপে এবারের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা কোন প্রকার দূর্ণীতি ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে।

এছাড়াও প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতরা জানান, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান কোন প্রকার দূর্ণীতিকে প্রশয় দেন নাই, যার ফলে যোগ্য প্রার্থীরাই প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে। সেই কারণে তার সবাই অনেক খুশি। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত তালিকায় প্রথম হওয়া দৌলতপুর উপজেলার আল্লাহরদর্গার মোহিতুজ্জামান অশ্রু জানান, আমি আজকে যেই পর্যায়ে এসেছি তা আমার আম্মুর জন্য। এত স্বচ্ছভাবে পরীক্ষা সম্পূর্ণ কারায় আমি জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান সহ জেলা পুলিশের সকল সদস্যে প্রতি কৃতজ্ঞ। এই ভাবে স্বচ্ছতার সহিত যদি প্রত্যেক জেলা পরীক্ষা নেওয়া হয়, তাহলে মেধার জয় অবশ্যই হবে। অনেকেই যে বলে টাকা ছাড়া পুলিশের চাকরী হয় না, তাদের এই ধারণা একেবারেই ভূল। আমার মাত্র ১’শ ২০ টাকা বিনিময়ে পুলিশের চাকরী হয়েছে। যা আমার আবেদন করতে লেগেছিলো। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন দৌলতপুর উপজেলার দৌলতখালীর কৃষক পরিবারের কন্যা সোনিয়া। তিনি জানান, আমি এতদিন লোকের মুখে শুনেছি পুলিশের চাকরী নাকি ঘুষ ছাড়া হয় না।

কিন্তু কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান সততা এবং নিষ্ঠার সাথে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। তার কারনেই পুলিশের চাকরী পেতে আমাদের কোন ঘুষ দিতে হয়নি। আমি এবং আমার পরিবার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞ। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত সাইফ আহমেদ গৌরব জানান, আমি কৃষক পরিবারের সন্তান। আমি এর আগেও ১৭ বার চেষ্টা করেছি। ১৮ বারের বার এসে সফল হয়েছি। এর আগে কখনও ভাইভা আবার কখনও লিখিত পরীক্ষায় বাদ পড়েছি। পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ দিয়েছেন। এভাবে যদি প্রতিবছর নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে অবশ্যই মেধার জয় হবে। ভোড়ামারা ষোলদাগ এলাকার শহিদুল ইসলামের মেয়ে শিলা খাতুন এবারের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত।

তিনি  জানান, কোন ঘুষ ছাড়া নিজে যোগ্যতায় চাকরী পেয়ে আমি খুশি। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, মূলত একমাস দীর্ঘ মেয়াদী একটা প্রসেসের মধ্যে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আমার সর্বাত্বক চেষ্টা করেছি পেশাদারিত্বের সাথে প্রতিটা ক্ষেত্রে যাচাই বাছাই করে নিয়োগ দিতে। আমাদের সাথে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন এসপি এবং এএসপি ছিলেন। এছাড়াও সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদ এবং মেহেরপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার করিম সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিাসবে আমাদের সাথে অংশগ্রহন করেছেন। পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান আরও বলেন, আপনারা জানেন প্রক্সি পরীক্ষা দিতে এসে একজন গ্রেফতার হয়েছে। যা খুবই অনাকাঙ্খিত। এখনও কিছু মানুষ প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। বর্তমানে যে ভাবে পুলিশে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে সেখানে তদবির করে বা অন্যভাবে চাকরী পাওয়ার কোন সুযোগ নাই। শুধু মাত্র নিজের যোগ্যতা থাকলেই চাকরী পাবে।

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চ্যালেঞ্জেরে বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রার্থীদের ছবির সাথে বাস্কবের কিছুটা গরমিল ছিলো। যার ফলে একজনের পরীক্ষা অন্যজন দিচ্ছে কিনা তা সনাক্ত করা কিছুটা কঠিন ছিলো। নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত কনস্টেবলদের উদ্দেশ্যে কনস্টেবল পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, যারা নিয়োগ পেয়েছে তারা অবশ্যই তাদের পরিশ্রমের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছে। আমি আশা করবো তারা পুলিশের ট্রেনিং গ্রহণ করে তারা তাদের কর্মে অবশ্যই পেশাদারিত্বের পরিচয় দেবে। একজন ভালো পুলিশ ও ভালো মানুষ হিসাবে মানুষের সেবা করতে হবে। ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ শেষে প্রাথমিকভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত ৫৭ জনকে ফুল দিয়ে বরণ করে তাদের নিজ হাতে মিষ্টিমুখ করান পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

আরও খবর

Sponsered content