10 September 2024 , 5:34:38 প্রিন্ট সংস্করণ
যোগাসনের অর্থ হলো শরীরের সমস্ত অংশকে প্রকৃতির সঙ্গে আত্মস্থ করা। বর্তমান সময়ে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা একই সঙ্গে চাইলে আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত যোগাসন করতে হবে। কারণ ইয়োগা বা যোগাসন শারীরিক ও মানসিক অবসাদ কাটিয়ে তুলতে কার্যকরী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনো রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে ওষুধের বিকল্প হিসেবে যোগাসনের অভ্যাস করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ইয়োগার কিছু নিয়ম: ইয়োগা মানেই কঠিন সব দেহভঙ্গি নয়। শুরুর দিকে কষ্ট হয় এমন আসন না করাই ভালো। এ তালিকায় আছে শীর্ষাসন, সরভঙ্গাসন বা পদ্মাসন। তবে ইয়োগা করতে গেলে শুরুতে প্রশিক্ষকের কাছে যাওয়াই ভালো। সকাল, সন্ধ্যা ও গোসলের আগে বা রাতে ইয়োগা করা যায়। তবে ভরপেটে করা যাবে না। অল্প কিছু খেয়ে আধঘণ্টা পর আসন করা যেতে পারে। তবে প্রাণায়াম বা মুদ্রা খালি পেটে অভ্যাস করাই ভালো।
যাদের অনিদ্রা রোগ আছে, রাতে খাবার পর শোবার আগে কিছুক্ষণ বজ্রাসন করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। একবারে সাত-আটটির বেশি আসন অভ্যাস করা উচিত নয়। বয়স অনুযায়ী ও প্রয়োজন মতো দু-একটি প্রাণায়াম, মুদ্রা অভ্যাস করলে অল্প সময়ে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়। একেকটি আসন বা মুদ্রা অভ্যাসের পর প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে। যোগাসনে অসংখ্য আসন রয়েছে যা শরীর ফিট রাখে ও নির্দিষ্ট কিছু রোগের মুক্তি ঘটায়। তাই আসুন জেনে নিই যোগাসনের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।
ইয়োগার যত উপকার: ইয়োগা চর্চার বড় কারণ হলো মানসিক চাপমুক্ত থেকে একটি সুশৃঙ্খল ও স্বাস্থ্যকর জীবনাচার তৈরি করা, যাতে করে শরীর ও মন সুস্থ থাকবে। ইয়োগা চর্চা স্পষ্টভাবে স্ট্রেস এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি অ্যাংজাইটির মতো মারাত্মক মানসিক সমস্যার ঝুঁকি কমিয়ে আনে ইয়োগা। হৃদযন্ত্রের সুস্থতা আনে এই ব্যায়াম। হৃদযন্ত্রকে আরো সুষ্ঠুভাবে রক্ত সঞ্চালনে সক্ষম করতে ইয়োগার বিকল্প নেই।
গবেষণায় বলা হয়, বিশেষ করে মধ্যবয়সীদের জন্য ওজন নিয়্ন্ত্রণে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর উপায় হতে পারে ইয়োগা। মন-মেজাজ খারাপ থাকলে নিমিষেই তা ভালো করে দিতে পারে ইয়োগা। সুখকর অনুভূতি দেয় ইয়োগা। দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে ইয়োগায় বসলে মুহূর্তেই মনটা ভালো হয়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদি সুখ লাভে তাই ইয়োগা অতুলনীয় এক ব্যায়াম।
নিয়মিত ইয়োগার মাধ্যমে পেশি অনেক চটপটে কাজে সহনীয় হয়ে ওঠে। আপনি আগের চেয়ে অনেক বেশি উচ্ছল ও উদ্যমী হয়ে উঠবেন ইয়োগার কল্যাণে। নিয়মিত ইয়োগা চর্চা করলে পর্যাপ্ত ঘুম হবে। শারীরিক ভারসাম্য ও আবেগও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অতিরিক্ত ওজন যাদের তাদের ওজন কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে ইয়োগা।
সাইনোসাইটিস ও অ্যাজমার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। শারীরিক দুর্বলতা কাটানো ঘাড় এবং মাথা, হাত-পা ব্যাথা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ও কোমরের স্ট্রেচিং করে অঙ্গগুলোকে সচল রাখতেও এর জুড়ি নেই। ক্রনিক লো-ব্যাক পেইনে আক্রান্তদের নিয়মিত ইয়োগা করার পরামর্শ দিয়েছে আমেরিকান কলেজ অব ফিজিশিয়ান।
ঘাড়, হাঁটু বা পিঠের ব্যথা নিরসনে ওষুধের মতো কাজ করে ইয়োগা। ক্রনিক ব্যথা দূর করতেও চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্যতম অংশ হতে পারে ইয়োগা। যাদের ঘুম আসে না তাদের সেই সমস্যার সমাধান দেয় ইয়োগা। এর চর্চায় ইনসমনিয়ার মতো সমস্যা দূর হতে বেশি সময় লাগে না।
যোগানুশীলনের ধারাবাহিকতায় অশান্ত মন যখন সম্পূর্ণ চিন্তামুক্ত ও শান্ত হয়ে পড়ে তখন আমাদের ‘আত্মার’ উপলব্ধি হয়। ধৈর্যসহকারে নিয়মিত ইয়োগা চর্চা করে আজকের আধুনিক যান্ত্রিক জীবনেও আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও সুন্দর থাকতে পারি।