লাইফ স্টাইল

যেসব খাবার বাড়ায় প্লাটিলেট খুবই জরুরী

মানবদেহে থাকা তিন ধরনের রক্ত কণিকার মধ্যে সবচেয়ে ছোট আকারটি হলো প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকা। এর মূল কাজ হল রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করা। শরীরের কোথাও কেটে গেলে প্লাটিলেটের কারণেই দ্রুত রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়।

তবে বর্তমানে রাজধানীসহ সারাদেশে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। আর ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে যে সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তাহলে রক্তে প্লাটিলেট কমতে শুরু করা। যদিও ডেঙ্গু ছাড়া অন্যান্য অনেক কারণেই রক্তে প্লাটিলেট কমতে থাকে।

তাই প্লাটিলেট বাড়াতে এমন সব খাবার খাওয়া উচিত যা স্বাভাবিকভাবে রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সক্ষম।

প্লাটিলেটের স্বাভাবিক পরিমাণ : একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের শরীরে প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকার স্বাভাবিক পরিমাণ হচ্ছে দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। দেড় লাখের নিচে নামলেই বুঝতে হবে কোন সমস্যা হয়েছে। আর ৫০ হাজার থেকে ২০ হাজারের নিচে নামলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে সঠিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

প্লাটিলেট বাড়াতে যা খাবেন

১. ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার : ফোলেট বা ভিটামিন বি ৯ স্বাস্থ্যকর রক্তকণিকার জন্য অপরিহার্য ভিটামিন। শরীরে ফোলেটের ঘাটতি হলে প্লাটিলেট ও কমে যেতে পারে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (এনআইএইচ) এর তথ্য অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট প্রয়োজন এবং গর্ভবতীদের ৬০০ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট প্রয়োজন।

সাধারণত গরুর কলিজা, গাড় সবুজ শাক, দুগ্ধজাত খাবার, চাল ইত্যাদিতে ফোলেট পাওয়া যায়।

২. ভিটামিন বি-১২ সমৃদ্ধ খাবার : লোহিত রক্তকণিকা গঠনের জন্য ভিটামিন বি ১২ প্রয়োজনীয়। শরীরে ভিটামিন বি ১২ কমে গেলে প্লাটিলেট ও সংখ্যায় কমতে থাকে। এই ভিটামিন রক্তের কোষকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

সাধারণত প্রাণীভিত্তিক খাদ্যে এই ভিটামিন পাওয়া যায়। যেমন, গরুর মাংস ও কলিজা, ডিম, সামুদ্রিক মাছ ভিটামিন বি ১২ এর উৎকৃষ্ট উৎস। এ ছাড়া বাদাম দুধ বা সয়া দুধেও এই ভিটামিন পাওয়া যায়।

৩. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার : রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি এর বিকল্প নেই। তবে ভিটামিন সি শরীরে প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়িয়ে প্লাটিলেটগুলোকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে এবং শরীরের আয়রন শোষণ করার ক্ষমতা বাড়ায়।

অনেক ফল এবং শাকসবজিতে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। যেমন লেবু, কমলা, ব্রকলি, ক্যাপসিকাম, জাম্বুরা, স্ট্রবেরি, টমেটো ইত্যাদি।

৪. ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার : ভিটামিন ডি হাড়, পেশী, স্নায়ু এবং রোগ প্রতিরোধের সঠিক কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তবে প্লাটিলেট ডিসঅর্ডার সাপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (পিডিএসএ) এর তথ্যমতে, ভিটামিন ডি অস্থি মজ্জা কোষগুলির কার্যকারিতায় একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে যা প্লাটিলেট এবং অন্যান্য রক্ত ​​কণিকা তৈরি করে।

সাধারণত সূর্যের আলো থেকে শরীর ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে। তবে ডিমের কুসুম, সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, টুনা এবং ম্যাকেরেল, মাছের তেল, দুধ, দই, দুগ্ধজাত খাবার থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।

৫. ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাবার : ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধা এবং হাড়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য একটি ভিটামিন। এক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ভিটামিন কে গ্রহণকারী ২৭-৩২ শতাংশ মানুষের মধ্যে প্লাটিলেটের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে।

ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে পাতাযুক্ত শাক যেমন পালং শাক, ব্রোকলি, কুমড়া, সয়াবিন এবং সয়াবিন তেল,

৬. আয়রন সমৃদ্ধ খাবার : শরীরের সুস্থ রক্ত কণিকা তৈরিতে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখে আয়রন। ২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে আয়রন অ্যানিমিয়া রোগীদের মধ্যেও প্লাটিলেটের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সক্ষম।

আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে টোফু, মটরশুটি, টমেটো, মসুর ডাল, গরুর মাংশ, আপেল, ডালিম ইত্যাদি রয়েছে।

প্লাটিলেট বৃদ্ধিতে সাপ্লিমেন্ট : নিয়মমাফিক খাবার গ্রহণের পরেও অনেক সময় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি রয়ে যায়। এক্ষেত্রে কিছু সাপ্লিমেন্ট প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে পারে। তবে সাপ্লিমেন্ট সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে সেবন করা উচিত।

১. ক্লোরোফিল : ক্লোরোফিল হল উদ্ভিদের একটি সবুজ রঞ্জক পদার্থ। ক্লোরোফিল সমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্ট হল ক্লোরেলা। এই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ প্লাটিলেট কমে যাওয়ার কিছু উপসর্গ উপশম করতে পারে, যদিও এর কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা চলমান। কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ক্লোরেলা সেবনকারীদের প্লাটিলেটের সংখ্যা বেড়েছে।

২. পেঁপে পাতার রস : প্লাটিলেট কমে যাওয়া বা থ্রম্বোসাইটোপেনিয়ায় পেঁপে পাতার রসের গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা দেখা গেছে। ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে থ্রম্বোসাইটোপেনিয়ায় রোগীদের মধ্যে কেমোথেরাপির চেয়েও দ্রুত এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করে পেঁপে পাতার রস। ট্যাবলেট আকারেও পাওয়া যায় পেঁপে পাতার রস।

৩. মেলাটোনিন : যদিও শরীরে স্বাভাবিকভাবেই মেলাটোনিন উৎপন্ন হয়। তারপরও এটি তরল বা ট্যাবলেট আকারে দোকানে পাওয়া যায়। এটি সাধারণত ঘুমের উন্নতির জন্য ব্যবহৃত হলেও, এটি প্লাটিলেটের মাত্রা বৃদ্ধিতেও উপকারী বলছে গবেষণা।