16 March 2024 , 12:58:18 প্রিন্ট সংস্করণ
রোজার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও শৃঙ্খলাবোধ যেমন হয়, তেমনি সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ লাভও হয়। তবে এ সময় অনেকে কিছু ভুলভ্রান্তি করে থাকেন। ফলে রোজা রাখতে গিয়ে তার বেশ সমস্যায় পড়েন।
* রোজা রাখলে বেশি বেশি খেতে হয়
অনেকে মনে করেন, সারাদিন উপবাসের পর ইফতারে বেশি খাবার খেতে হয়। তা না হলে শরীর ভালো থাকবে না। প্রয়োজনের তুলনায় যত বেশি খাবার খাওয়া হবে, তত এর কুফল ভোগ করতে হবে। দেখা যায়, ইফতার ও সেহরিতে বেশি বেশি খাবার খেলে ক্ষুধা বেশি অনুভূত হয়। পরিমিত খাবার খেলে ক্ষুধা তত তীব্র হয় না। শুধু পেট খালি থাকার জন্য ক্ষুধা অনুভূত হয় না। পাকস্থলির চর্বিই এর জন্য দায়ী। পেটে চর্বির স্তর বেশি থাকলেই ক্ষুধা বেশি টের পাওয়া যায়। অপরদিকে চর্বি কম থাকলে ক্ষুধাও কম লাগে। অর্থাৎ ক্ষুধার সঙ্গে চর্বির একটি যোগসূত্র আছে। এ কারণে ইফতার ও সেহরিতে বেশি খেলে দিনের বেলায় ক্ষুধা বেশি লাগে। সুস্থ থাকতে হলে পরিমিত ও সুষম খাবার খেতে হবে।
* পানি কম পান করতে হয়
কেউ কেউ মনে করেন, যেহেতু রমজানে খাবারের সময় কম থাকে তাহলে পানিও কম খাওয়া উচিত। অথচ রোজার সময়ই ডিহাইড্রেশন বা পানিস্বল্পতা এবং প্রস্রাবের সংক্রমণ দেখা দেয়। এটা এড়ানোর জন্য অন্য দিনে দুই থেকে আড়াই লিটার পর্যন্ত পানি পানের প্রয়োজনীয়তার কথা মনে রেখে, ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত কিছুক্ষণ পর পর পানি পান করতে হবে। পানিস্বল্পতা রক্ত তরল রাখতে বাধা দেয় এবং প্রস্রাবে সংক্রমণ ঘটায়। এ সময়ে পানি পান না করতে চাইলে লেবুর পানি, ডাবের পানি, রসালো ফল, শসা, টমেটো, বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে শরবত পান করা যেতে পারে। পাকা কলা দুধ দিয়ে মিল্ক শেক করেও খাওয়া যায়। পানি কম খেলে বিকালের দিকে মাথা ধরে ও শরীরে দুর্বলতা দেখা দেয়। ত্বক তার জলীয় অংশ হারায়।
* রোজায় ওজন কমে যায়
যাদের ওজন বেশি, তারা মনে করেন রোজা রাখলেই ওজন স্বাভাবিকে চলে আসবে। এজন্য তারা ইফতারে বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলেন এবং পরে আফসোস করেন, কেন তাদের ওজন একেবারেই কমছে না! ওজন কমানোর জন্য উপরে দেওয়া উপদেশ তাদের অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
* খুব কম খাবার খাওয়া
অনেকে বেশি পূণ্য লাভের আশায় চাহিদার তুলনায় এ সময় খুব কম খাবার খান। এতে ধীরে ধীরে ওজন কমে যেতে থাকে এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। দশ থেকে পনেরো রোজার পর থেকে তারা রোজা রাখার সমর্থ্য হারিয়ে ফেলেন।
* বার্ধক্যে রোজা না রাখা
এটা ঠিক নয়। যতক্ষণ শারীরিক সক্ষমতা আছে ততক্ষণই রোজা রাখতে হবে। দাঁত এবং হজম ক্রিয়া কমে যাওয়ার কারণে এসময় নরম খাবার খেতে হবে। যেমন-ইফতারে দুধ বা দই-চিড়া, দুধ-সাগু, দুধ-সুজি, নরম খিচুড়ি, ঘুঘনি, আলুর চপ, যে কোনো হালুয়া, ওটস, ভেজানো মুড়ি খেতে পারেন।
* সেহরি না খেলেও চলবে
অনেকে ঘুমের ব্যাঘাত হবে মনে করে সেহরি খেতে চান না। অথচ ধর্মীয় বিধান হলো, সেহরি আপনাকে খেতেই হবে। সেহরি না খেলে ১৮/২০ ঘণ্টা খাবার ও পানি না খেয়ে থাকতে হয়, এতে শরীর পানিস্বল্পতায় আক্রান্ত হয়। অনেকে দেখা যায় রাত বারোটার সময় একবারে খেয়ে শুয়ে পড়েন। এছাড়া যারা সকালে ওষুধ খান সে সুযোগটিও আর থাকে না।
* রোজা রাখলে ডায়াবেটিস বাড়ে না
অনেকে মনে করেন, রোজা রাখলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ে না। এজন্য তারা ইফতারে শরবত, জিলাপি, পায়েস ইত্যাদি সব ধরনের মিস্টান্ন খেয়ে থাকেন। আসলে দিনের বেলা হয়তো আপনার রক্ত শর্করা কম থাকবে, কিন্তু যখনই আপনি মিষ্টি খাবার খাবেন, তখনই রক্তে শর্করা বেড়ে যাবে। ফলে আপনার ট্যাবলেট অথবা ইনসুলিনের ডোজ বাড়াতে হবে। অন্যদিনের পাঁচবারের খাবারই রোজার সময় তিনবারে ভাগ করে খেতে হবে। বেশি নয়, আবার কমও নয়। ডায়াবেটিসের খাবারের বিধিনিষেধগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এসময় মিষ্টি ফলের রসও না খাওয়া ভালো।
* তেলে ভাজা খাবার বাদ দিতে হবে
রোজার সময় একটি কথা বলতে শোনা যায়, ভাজা-পোড়া একেবারেই বাদ। একজন পুষ্টিবিদ হিসাবে বলব, তেলে ভাজা একেবারে বাদ না দিয়ে দুটি উপাদান তেলে ভেজে খেলে কোনো ক্ষতি নেই। কারণ আমাদের দেহে তেলের প্রয়োজন আছে। এ তেল শরীরে শক্তি জোগাবে, হজমে সাহায্য করবে, ত্বকের মসৃণতা বজায় রাখবে। তবে কোন ধরনের তেল এবং কতখানি উচ্চতাপে ভাজা হবে সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। একই তেল বারে বারে ব্যবহার করা যাবে না। এতে দেহে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আবার উচ্চতাপে ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয় বলে হৃদরোগীসহ অন্যদের ক্ষতির কারণ হয়।