6 September 2023 , 4:46:44 প্রিন্ট সংস্করণ
বর্তমান সময়ের কর্মব্যস্ততার পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, অ্যালকোহল পান এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বা হাই ব্লাড প্রেসারের রোগী।
আর উচ্চ রক্তচাপের কারণে সময়মত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা না করা হলে দেখা দিচ্ছে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকসহ নানা রকম জটিল হৃদরোগ।বাংলাদেশে এক চতুর্থাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এ ছাড়া পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি ভুগে থাকেন এ সমস্যায়।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার কি?
যখন কোন ব্যক্তির রক্তের চাপ সব সময়েই স্বাভাবিকের চেয়ে ঊর্ধ্বে থাকে তখন তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার বলে থাকে। রক্তচাপ সাধারণত মিলিমিটার (পারদ) বা mmHg এককে মাপা হয়। মানুষের সাধারণ রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ মিলিমিটার (পারদ) থেকে ১২০/৮০ মিলিমিটার (পারদ) সীমার মধ্যে থাকে তাহলে তা স্বাভাবিক রক্তচাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তবে রক্তচাপ যদি সবসময় ১৪০/৯০ মিলিমিটার (পারদ) বা এর বেশি থাকে এছাড়া ৮০ বছর বা তার অধিক বয়সীদের ক্ষেত্রে রক্তচাপ যদি ১৫০/৯০ মিলিমিটার (পারদ) বা এর বেশি থাকে তাহলে একে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার বলা হয়।
উচ্চ রক্তচাপের কারণ
১. বয়স্ক ব্যক্তিদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
২. ওজন বেশি হলে বা স্থূল ব্যক্তিদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
৩. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক ব্যায়ামের অভাবে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
৪. ধূমপান, অত্যাধিক অ্যালকোহল পান, অতিরিক্ত লবণ খেলেও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি থাকে।
৫. অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বি জাতীয় খাবার হাই ব্লাড প্রেশারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৬. দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপ উচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি করে।
৭. ডায়াবেটিস এবং সোরিয়াসিসে আক্রান্ত রোগীরা অনেক সময় হাই ব্লাড প্রেসারে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
৮. গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার একটি সাধারণ অবস্থা।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ
মাথাব্যথা
বমি বমি ভাব অথবা বমি
মাথা ঘোরা
ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
বুক ধড়ফড় করা
শ্বাসকষ্ট হওয়া
চোখে ঝাপসা দেখা
নাক দিয়ে রক্ত পড়া
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ঘরোয়া প্রতিকার
১. আদা
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আদা চা অনেক উপকারি। আদা হৃদপিন্ডের সংকোচনের শক্তি এবং হার কমাতে সাহায্য করে। এটি একটি ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার হিসাবেও কাজ করে যা রক্তচাপ কমাতে সহায়ক। এক কাপ পানিতে কয়েক টুকরা আদা নিয়ে পাঁচ মিনিট সিদ্ধ করে নিন। এরপর ঠান্ডা করে আদা চা পান করুন।
২. রসুন
রসুন উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে রসুন অনেক কার্যকরি। ব্লাড প্রেশার অনেক বেড়ে গেলে এক থেকে দুই টুকরা রসুন নিয়ে সরাসরি খেয়ে নিন বা কুচি কুচি করে কেটে মধুর সাথে মিশিয়ে খেয়ে নিন।
৩. ভিটামিন বি এবং ডি
ভিটামিন বি এবং ভিটামিন ডি তে থাকা পুষ্টিগুণ উচ্চ রক্তচাপের উপর বিপরীত প্রভাব ফেলে। এই ভিটামিনগুলি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণে হওয়া স্বাস্থ্য জটিলতা যেমন স্ট্রোক প্রতিরোধে কার্যকর।
গোটা শস্য, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার, মাংস, লেবু, গাঢ় শাক এবং চর্বিযুক্ত মাছ ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার। হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে এগুলো নিয়মিত পর্যাপ্ত খাওয়া উচিত।
৪. আপেল সিডার ভিনেগার
হাই ব্লাড প্রেশার কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার উপকারি ভূমিকা রাখে। আপেল সিডার ভিনেগার শরীরে রেনিন নামক এক এনজাইমের কার্যকলাপ হ্রাস করতে সাহায্য করে যা উচ্চ রক্তচাপ তৈরি করে থাকে। এক গ্লাস গরম পানিতে তিন চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার যোগ ভালভাবে মিশিয়ে পান করুন।
৫. লেবুর রস
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের পাশাপাশি লেবুর রস পান শরীরে হাই ব্লাড প্রেশার কমাতে সহায়তা করে। এক গ্লাস গরম পানিতে অর্ধেক লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে পান করলে উচ্চ রক্তচাপ তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আসে।
৬. গ্রিন টি
পরিমিত পরিমাণে গ্রিন টি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। গ্রিন টিতে থাকা পলিফেনল ধমনীকে শিথিল করতে সাহায্য করে, ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত একবার বা দুইবার গ্রিন টি পান কার্যকরি ভূমিকা রাখে।
তবে খুব বেশি গ্রিন টি পান করবেন না কারণ এর ক্যাফেইন উপাদান হিতে বিপরীত রক্তচাপ বাড়িয়ে তুলতে পারে।
৭. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড কার্ডিওপ্রোটেকটিভ প্রভাব প্রদর্শন করে থাকে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে থাকা ডকোসাহেক্সায়েনোয়িক অ্যাসিড (ডিএইচএ) রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন কমাতে সাহায্য করে। সামুদ্রিক মাছ (স্যামন, টুনা ইত্যাদি), বীজ, আখরোট এবং চিয়া বীজ, বাদাম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে যা খাবেন না
চর্বিযুক্ত মাংস
টমেটো
চিনিযুক্ত খাবার
প্যাকেটজাত বা প্রক্রিয়াজাত খাবার
জাংক ফুড
অতিরিক্ত অ্যালকোহল
অতিরিক্ত ক্যাফেইন
উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ
প্রতিদিন আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা ব্যায়াম করুন, সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
পর্যাপ্ত ঘুমানো।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
অ্যালকোহল পান ত্যাগ করা বা কমিয়ে দেয়া।