17 January 2024 , 2:54:02 প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে ব্যবসা করতে দুর্নীতিকে বড় বাধা হিসেবে দেখছেন ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী। ৫৮ শতাংশ ব্যবসায়ী মানি লন্ডারিং পরিস্থিতিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। আর আগামী ২ বছর ব্যবসায় জ্বালানি সংকটকে বড় সংকট হিসেবে দেখছেন তারা। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে ধানমন্ডিস্থ সিপিডি কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ ২০২৩: উদ্যোক্তা জরিপের ফলাফল’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গবেষণা সহযোগী নিশাত তাসনিম আনিকা ও জেবুন্নেসা। খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এ জরিপে কোভিড ও যুদ্ধ পরবর্তীতে বিশ্ব কিভাবে চলবে, অর্থ বৈষম্য সহায়তা ও সাহায্য কিভাবে অব্যাহত থাকবে তাও জানার চেষ্টা করা হয়। এই জরিপে এ মুহূর্তে ভবিষ্যতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ কিভাবে চলবে সেটার উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
জরিপে উদ্ভাবনী, অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই উন্নয়ন ও সহনশীলতার সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে প্রবৃদ্ধিও। পাশাপাশি মানবসম্পদ, শারীরিক ও টেকনিক্যাল স্কিল, অর্থ, গবেষণা ও প্রযুক্তিগত কৌশল, প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়কে দেখা হয়েছে। গবেষণায় গত বছরের মে থেকে জুলাই, ঢাকা, গাজীপুর ও সাভার এলাকার ৭১ জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। এরমধ্যে ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ২৯.৫৮ শতাংশ, মধ্যম মানের ব্যবসায়ী ৩৫.২১ ও বড় ব্যবসায়ী ৩৫. ২১ শতাংশ।
ব্যবসা খাতের মধ্যে কৃষি সংক্রান্ত ২.৮২ শতাংশ, শিল্প ও তৈরিকারক ২২.৫৪ শতাংশ। নন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ৯.৮৬ ও সেবাখাতের ৬৪.৭৯ শতাংশকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। জরিপে উঠে আসে এশিয়ার মধ্যে ব্যবসার প্রতিযোগিতায় সব থেকে পিছিয়ে বাংলাদেশ। ভিয়েতনাম সব সূচকে বাংলাদেশের উপরে। ভারত, থাইল্যান্ড থেকে ইনোভেটিভ দিকে এগিয়ে ভিয়েতনাম। ইনক্লুসিভ অর্থনীতি থাইল্যান্ডের। তবে বাংলাদেশ টেকসই সূচকে একটু উপরে রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসায় ২০২৩ সালে প্রতিবন্ধকতা বা প্রধান চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি। ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ীরা মত দিয়েছেন। সরকারি প্রশাসনকে মানবমুখি করতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি মনে করেন ৫৫ শতাংশ ব্যবসায়ী। বৈদেশিক মুদ্রার অচলাবস্থাকে তৃতীয় প্রধান বাধা মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এর মানে এই না অন্যান্য সমস্যা বা বাধা কমে গেছে। তবে ইতিবাচক হলো অবকাঠামো সমস্যা কমে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, ৬৬.২০ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন আগামী দুই বছর জ্বালানি সংকটে ভুগবে ব্যবসায়ীরা। তারা এটা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা বারবার বললেও সেটা যথাযথভাবে আমলে নেয়নি সরকার। বৈশ্বিকভাবেই জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে এলএনজি আমদানি বড় সংকট তৈরি করেছে।
আমরা মনে করি সরকারের উচিত জ্বালানি সংকট নিরসনে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য দেওয়া। ৫৮ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করছেন ব্যাংকিং খাতে নজরদারি ও তদারকির অভাব রয়েছে। ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ী বলছেন ডলার সংকটের কারণে তারা পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। ৩০ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন, ২০২৩ সালে উৎপাদন বা সেলসের পতন হয়েছে।
৪২ শতাংশ ব্যবসায়ী ব্যবসায় কোনো পরিবর্তন দেখছেন না, স্থিতাবস্থায় আছেন। তবে মাত্র ৬ শতাংশ ব্যবসায়ী ইতিবাচক পরিবর্তন দেখছেন। সুতরাং প্রবৃদ্ধি বা লাভের মুখ সবাই দেখছেন না, এটা স্পষ্ট। ৩৫ শতাংশ ক্ষুদ্র, ২৪ শতাংশ বড় ব্যবসায়ী ব্যবসা ভালো পরিস্থিতিতে নেই বলে জানিয়েছেন।