জাতীয়

আবারও তীব্র গ্যাস সংকটে জ্বলছে না চুলা ধুঁকছে নগরবাসী

গত কয়েক বছরের মধ্যে দেশে গ্যাসের সরবরাহ সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। সারা দেশের শিল্পকারখানা ও বাসাবাড়িতে গ্যাসের যে তীব্র সংকট চলছে, তা বোঝানোর জন্য পেট্রোবাংলার একটি তথ্যই যথেষ্ট। সেটি হলো-প্রায় তিন হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে চলতি মাসে গড়ে সারা দেশে দুই হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে।

দিনের বেশিরভাগ সময় মিট মিট করে জ্বলা চুলায় রান্না করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। রাজধানীর এক বাসিন্দা বলেন, “এখন এক সপ্তাহ ধরে সকাল ৭টায় গ্যাস সম্পূর্ণ চলে যাচ্ছে, আসছে ঠিক রাতের ১১টার দিকে। ফলে দিনের বেলায় রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। রাত জেগে যা রান্না করি সেগুলো দিনের বেলায় ওভেনে গরম করে খেতে হয়। গ্যাসের স্বল্পতার কারণে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

উত্তর বাড্ডার এক বাসিন্দা বলছিলেন, তিন দিন ধরে চুলায় গ্যাস আসছে না। বিকল্প উপায়ে রান্নার কাজ সারছেন তারা। আর যাত্রাবাড়ীর এক গৃহিনী বলেন, ‘‘দিনে তো কোনো সোম গ্যাস থাকেই না। রাত ১২টা/১টার দিকে আগে আসে, গত এক সপ্তাহ ধরে আসে আরো পরে। চুলায় যে আগুন তাতে রান্না করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযোগ আসছে, গত এক সপ্তাহ ধরে ঢাকার আবাসিক এলাকায় দিনের অধিকাংশ সময় গ্যাস থাকছে না। গ্যাস না থাকার কারণে ঢাকার আশপাশের শিল্পাঞ্চলের জেনারেটর, বয়লার অচল রয়েছে, ফলে উৎপাদনও বন্ধ রাখার কথা জানাচ্ছেন শিল্প মালিকরা।সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ার কারণে গ্যাসের জন্য অপেক্ষামান গাড়ির প্রতীক্ষার সময়ও দীর্ঘতর হচ্ছে।

এ বিষয়ে জ্বালানি সচিব নুরুল আলম জানান, শীত মওসুমে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় অনেক স্থানে গ্যাস লাইনে ফেনা জমে যায়। এতে লাইনে গ্যাসের চাপ বাধাগ্রস্ত হয়। এ সমস্যার পাশাপাশি জাতীয় সঞ্চালন লাইনের গ্যাসের সরবরাহের পরিমাণও কমে গেছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরপুর, ধানমন্ডি, কাঁঠালবাগান, বসুন্ধরা, শান্তিনগর, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মহাখালীসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা গ্যাস সংকটের কারণে গত দুই দিন ধরে গ্যাসের চুলায় রান্না করতে পারছেন না।

কাঠের চুলা, কেরোসিন স্টোভ ও অন্যান্য অস্থায়ী পদ্ধতি অবলম্বন করছেন কেউ কেউ।ঢাকার সাত রাস্তার সিটি ফিলিং স্টেশন ও মহাখালীর ঈসা গার্ডেন ফিলিং স্টেশনে কথা বলে জানা যায়, সিএনজি গ্যাস রূপান্তর করার জন্য ২০০ বার চাপের গ্যাসের প্রয়োজন হলেও গত তিন দিন ধরে এসব ফিলিং স্টেশনে ১৩০ থেকে ১৪০ বার চাপের গ্যাস আসছে। ফলে নানা উপায়ে গ্যাসের চাপ বাড়াতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গ্যাসের জন্য অপেক্ষমান যানবাহনের লাইনও দীর্ঘ হচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে কি না প্রশ্ন করা হলে এই উদ্যোক্তা বলেন, “কথা বলেছি। তারা কোনো আশ্বাস দিতে পারছেন না। কবে যে এই সমস্যার সমাধান হবে তারা কিছুই জানাতে পারছেন না।নারায়ণগঞ্জের মতই গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ আরও অন্যান্য শিল্পাঞ্চলে গ্যাসের স্বল্পতার কারণে একই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়ার কথা জানিয়েছেন পোশাক কারখানা মালিকরা।

দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট করে গত কয়েক মাস ধরে সরবরাহ করা যাচ্ছিল বলেই পেট্রোবাংলার প্রতিবেদনে দেখানো হচ্ছে। তবে চলতি জানুয়ারিতে গ্যাসের সরবরাহ দৈনিক প্রায় ৫০০ মিলিয়ন কমে ২৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমেছে।

পেট্রোবাংলার প্রতিবেদন বলছে, একদিকে আমদানি করা এলএনজির সরবরাহ কমেছে। অন্যদিকে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদনের পরিমাণও কিছুটা কমেছে।জ্বালানি সচিব জানান, আশা করি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আমদানি করা এলএনজি দিয়ে এতদিন দৈনিক ৭০০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলেও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের কারণে তা দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে।

পাশাপাশি পেট্রোবাংলার প্রতিবেদন বলছে, দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলনও দৈনিক ১০০ থেকে ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট কমে গেছে।তিনি আরো বলেন, দুটি এফএসআরইউর মধ্যে একটিকে ড্রাই ডকে পাঠানো হয়েছে। সাধারণ পাঁচ বছর পর পর ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল বা এফএসআরইউকে রক্ষণাবেক্ষণে পাঠানো হয়। সেই হিসাবে এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ চলছে। এই রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে একটি টার্মিনাল বন্ধ রাখতে হয়েছে।

আবার একটি রক্ষণাবেক্ষণ হয়ে কাজে যোগ দিলে আরেকটি পাঠানো হবে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক্সিলারেট এনার্জির এফএসআরইউ ইতোমধ্যেই সাগরে তার অবস্থানে চলে এসেছে। নতুন করে একটি এলএনজির কার্গো আগামী তিন দিনের মধ্যে বাংলাদেশ প্রান্তে পৌঁছানোর পর সেটা এটির টার্মিনালে যুক্ত করা হবে। এরপরই সামিটের টার্মিনালটি রক্ষণাবেক্ষণে পাঠানো হবে।

%d bloggers like this: