রাজনীতি

কালকিনিতে প্রথম জনসভায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী

কালকিনিতে প্রথম জনসভায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে প্রথমবারের মত মাদারীপুরের কালকিনিতে জনসভায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে স্বাগত জানাতে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ মাঠ সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকালে এই মাঠেই জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপস্থিত থাকবেন তার ছোটবোন শেখ রেহানাও।

তাদের স্বাগত জানাতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ। সড়ক জুড়ে তৈরি করা হয়েছে তোরণ। ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে গেছে মাঠের চারপাশ। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই জনসভায় লক্ষাধিক মানুষ জমায়েতের টার্গেট নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীও।সরেজমিনে দেখা যায়, বিকালে জনসভা হলেও সকাল থেকেই দলে দলে নেতাকর্মীরা জড়ো হচ্ছেন জনসভাস্থলে।

পদ্মা সেতু নির্মাণের পর এই জনসভা দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তনে আরও ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা নেতাকর্মীদের। তাইতো আনন্দে আত্মহারা সাধারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর আগমনে জেলায় মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি তুলেছে।একই সঙ্গে এলাকার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী কি কি প্রতিশ্রুতি দেবেন, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে কৌতূহল রয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনার জন্য তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।মাদারীপুরের মস্তফাপুরের ইলিয়াস আহমেদ নামের এক কর্মী বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য ভোরেই জনসভায় চলে এসেছি। কাছাকাছি থেকে বক্তৃতাও শুনতে চাই।

রাজনীতির জীবনে প্রধানমন্ত্রী কালকিনি সফর আমাদের জন্য বড় পাওয়া। আমাদের মস্তফাপুর ইউনিয়ন সদর উপজেলায় হলেও সংসদীয় এলাকা আমাদের কালকিনির (মাদারীপুর-৩ আসন) মধ্যে পড়ছে।কালকিনি, ডাসার ও সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসন। এই আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ।তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু কন্যার আগমনে সাধারণ মানুষ উচ্ছ্বসিত। অধীর আগ্রহ নিয়ে তার কথা শোনার জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে। শেখ হাসিনাকে কাছাকাছি থেকে দেখার জন্য অনেক বয়স্ক নেতাকর্মীরাও আসছেন মাঠে।

সবকিছু মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় লক্ষাধিক মানুষ উপস্থিতি আশা করা হচ্ছে।তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চল আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত তারপরেও প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। যারা এখনো নৌকার বিরোধিতা করছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে তারাই নৌকার হয়ে যাবেন।প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ বলে জানিয়েছেন মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা। তিনি বলেন, ‘মাদারীপুরের কালকিনিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম আগমন ঘটবে।

এই কারণে এখানকার মানুষ অত্যন্ত উৎফুল্ল।আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রীর এই জনসভা সফল করতে আওয়ামী লীগ ও আমাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সবাই মিলেমিশে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি যে দিকনির্দেশনা দেবেন, তা সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে মেনে চলবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন সরদার বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকেও অনেক মানুষ আসবে।

আশা করছি, জনসভাস্থলে এক লাখ লোকের সমাগম ঘটবে।প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি সভা উপলক্ষ্যে কালকিনিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো একাধিক প্রস্তুতি ও মতবিনিময় সভা, প্রচার প্রচারণা ও মিছিল করেছে। কালকিনি উপজেলা ছাড়াও আশপাশের জেলা-উপজেলায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চলছে মাইকিংও।একাধিক সাধারণ ভোটার জানিয়েছেন, জনসভায় প্রধানমন্ত্রী কী ভাষণ দেবেন, তা নিয়ে সবার মনে কৌতূহল রয়েছে। তিনি কালকিনি, ডাসার ও মাদারীপুরের একাংশ মিলে মাদারীপুর-৩ আসনের উন্নয়নে ভবিষ্যতে কী কী করবেন কিংবা তাঁর নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি কী হতে পারে, তা জানতেও মানুষের মধ্যে আগ্রহ রয়েছে।

এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী যেহেতু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম, তাঁকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো মন্তব্য করবেন কি না, সেটা নিয়েও ভোটারদের মনে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে।আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, শনিবার বেলা ৩টায় গোলাপগঞ্জের কোটালীপাড়ায় জনসভা শেষে সড়ক পথে কালকিনি আসবেন প্রধানমন্ত্রী।কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে এই জনসভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্ব ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন সরদারের সভা সঞ্চালনা করার কথা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী শাজাহান খান বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত যে, প্রধানমন্ত্রী মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় আসছেন। তিনি সারা দেশেই প্রচারণা করছেন, তবে কালকিনিতে তিনি সশরীরে জনসভায় বক্তব্য দিবেন।কালকিনির জনসভায় শেখ হাসিনার তার নির্দেশিত কথাই এদেশের মানুষ পুনরায় নৌকায় ভোট দিবেন। আমরা যারা নৌকার প্রার্থী রয়েছি, তারা অধীর অপেক্ষায় আছি। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের শেষ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিকালে জনসভায় ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তার সাথে ছোটবোন শেখ রেহানাও থাকবেন। এই জনসভায় জনসমুদ্রে পরিণত হবে। এরই মধ্যে দলীয় নেতাকর্মীরা মাঠে আসতে শুরু করেছেন।মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি এসএসএফ, পিজিআর, এনএসআই, ডিজিএফআইসহ একাধিক সংস্থার প্রায় ৫ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য তৎপর রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে জনসভার মাঠ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে।

মাদারীপুর-৩ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫৬ জন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ বিভিন্ন দলের আট প্রার্থী।তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার তিনি দ্বিতীয়বারের মতো এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শক্ত অবস্থানে রয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম।

কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার আয়োজন করা হলেও সেখানে থাকবেন না বলে জানিয়েছেন তাহমিনা বেগম ও তার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীন।তাহমিনা বেগম বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের এখানে আসবেন, এর চেয়ে সুখবর আর কিছুই হতে পারে না। তাকে আমরা স্বাগত জানাই।

তবে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে যেহেতু আমি নির্বাচন করছি, ওই জনসভায় গেলে আমার বহু কর্মীও জনসভাস্থলে আসবেন। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই প্রধানমন্ত্রী জনসভায় থাকার ইচ্ছা থাকলেও মাদারীপুর-৩ আসনের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমার থাকা হচ্ছে না।