রাজনীতি

নির্বাচনী গণসংযোগে নৌকা প্রার্থীর সংঙ্গী অস্ত্রধারী আনসার

নির্বাচনী গণসংযোগে নৌকা প্রার্থীর সংঙ্গী অস্ত্রধারী আনসার

আইন লঙ্ঘন করে নির্বাচনী গণসংযোগকালে অস্ত্রধারী আনসার বাহিনী নিয়ে ঘুরছেন লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন খান। প্রচারণার শুরু থেকে তিনি রামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ কিংবা উঠোন বৈঠকে অস্ত্রধারী ৪ জন আনসার নিয়ে নিয়মিত থাকেন।

এ অবস্থায় সাধারণ ভোটারদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।সরেজমিনে গিয়ে রোববার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ওই প্রার্থীকে রামগঞ্জের গাজীপুর বাজারে একটি ঘরে কর্মী বৈঠক করতে দেখা যায়। এসময় বাইরে পাহারারত ছিলেন অস্ত্রধারী ৪ আনসার সদস্য। সেখানে আনোয়ার হোসেন খান ৫০-৬০ জন কর্মীর সাথে প্রায় দেড়ঘন্টা বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে তিনি বাজার এলাকা সহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি বাড়ীতে গণসংযোগ করেন। গণসংযোগকালে আনসার সদস্যরাও তার পিছে পিছে হাঁটতে দেখা গেছে। এসময় আনোয়ার হোসেন খানের সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন- রামগঞ্জ উপজেলার নারী ভাইস চেয়ারম্যান সুরাইয়া আক্তার, করপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান প্রমুখ।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ভোটার জানান, নৌকার প্রার্থী অস্ত্রধারী আনসার নিয়ে গণসংযোগ করছে। এতে সাধারণ ভোটাররা ভীতসম্ভ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এর মধ্য দিয়ে তিনি নির্বাচনে একধরনের প্রভাব বিস্তার করে চলছেন বলে তারা মন্তব্য করেন। জানা গেছে, নির্বাচনকালীন সময়ে কোন প্রার্থী সরকারের কোন নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে নির্বাচনী গণসংযোগ করলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও ১৯০৮ এর ৭৭ অনুযায়ী দাপ্তরিক প্রভাব বা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার ব্যবহার আইন লঙ্ঘন হয়।

কুমিল্লার অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচনী কর্মকর্তা মো. ফরহাদ মিয়া বলেন, এটা স্পষ্ট আইনের লংঘন। কোন প্রার্থী গণসংযোগকালে সরকারী কোন বাহিনী ব্যাবহার করতে পারবেননা। কোন কারনে প্রার্থী আশংকাপন্ন হলে স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করে সহযোগীতা চাইতে পারেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন খান বলেন, আনসার সদস্যরা আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন। এখন আমার সঙ্গে এলাকায় এসেছেন।রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, আনোয়ার খান নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলে আমাদের মনে হচ্ছে না। কারণ তিনি কোনো অভিযোগও করেননি।

বহিরাগত অস্ত্রধারী আনসার সদস্যদের নিয়ে তার গণসংযোগের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্মীপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, ঘটনাটি আমার জানা ছিল না। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ ঘটনায় খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, দ্বাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এখানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী (বর্তমান এমপি) আনোয়ার হোসেন খানের সাথে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতায় রয়েছেন ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবন।

ইতিমধ্যে পবনের কর্মী-সমর্থকদের উপর নৌকা প্রার্থীর কর্মীরা বিভিন্নভাবে হামলা ও প্রভাব বিস্তারের একাধিক ঘটনায় নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসন ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩৪ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৫৯ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৮৫টি।

আরও খবর

Sponsered content