3 September 2023 , 12:02:47 প্রিন্ট সংস্করণ
১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতার ভবানীপুরে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মেছিলেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। আসল নাম ছিল অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। সিনেমায় এসে নিজের নাম পাল্টে রাখেন উত্তম কুমার। শিক্ষাজীবন শেষ না করেই কলকাতা পোর্টে কেরানির চাকরি শুরু করেন সংসারের হাল ধরতে।
কিন্তু অভিনয়ের পোকাটা থেকেই গিয়েছিল মাথায়। রুপালি পর্দায় উত্তম কুমারের যাত্রা শুরু ‘মায়াডোর’ নামের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। ছবিটি মুক্তি পায়নি।এরপর প্রথম ছবি হিসেবে ‘দৃষ্টিদান’ ছবিটি মুক্তি পেলেও সেটি আলোচনায় আসেনি। ‘বসু পরিবার’ ছবিটি দিয়ে খানিকটা পরিচিতি আসে।
১৯৫৩ সালে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবি দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে ঝড় তোলেন উত্তম কুমার। এই ছবির মধ্য দিয়েই বাংলা চলচ্চিত্রে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা পান তিনি। শুরু হয় উত্তম যুগ। পাঁচ থেকে ছয়ের দশকে ‘হারানো সুর’, ‘পথে হল দেরী’, ‘সপ্তপদী’, ‘চাওয়া পাওয়া’, ‘বিপাশা’, ‘জীবন তৃষ্ণা’ আর ‘সাগরিকা’-এর মতো কালজয়ী সব ছবির পরিচিত ও আকাঙ্ক্ষিত মুখ হয়ে ওঠেন উত্তম।
সুচিত্রা সেনের সঙ্গে তার জুটি ছিল তুমুল জনপ্রিয়। একাধিক সিনেমার জন্য এ জুটি কালজয়ী হয়ে আছে। এ ছাড়া সুপ্রিয়া দেবী, তনুজাসহ আরও অনেক নায়িকার সঙ্গেই সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন উত্তম। তবে জুটি হিসেবে বেশি সাফল্য পেয়েছেন তিনি নায়িকা সুচিত্রা সেনের সঙ্গেই। এই জুটির ৩০টি সিনেমার মধ্যে ২৯টিই হিট ছিল।
উত্তম কুমার শুধু যে বাংলা সিনেমাতেই অভিনয় করেছেন তা কিন্তু নয়। বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন তিনি। তার অভিনীত হিন্দি চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘ছোটিসি মুলাকাত’, ‘অমানুষ’, ‘আনন্দ আশ্রম’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ক্যারিয়ারে অভিনয়ের জন্য ১৯৬৭ সালে ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ও ‘চিড়িয়াখানা’ সিনেমার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছিলেন।
ব্যক্তি উত্তম জনপ্রিয়তার বাইরে ছিলেন ভীষণ কোমল হৃদয়ের এবং আন্তরিক। একাধারে মেধাবী, প্রজ্ঞাবান, বিনয়ী এবং দুর্দান্ত প্রতিভাবান। এই অভিনেতা এতো বিখ্যাত হওয়া সত্ত্বেও শুটিং ইউনিটের অতি সাধারণ কর্মীরও দেখভাল করতেন। বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য তার ত্যাগ ছিল অবর্ণনীয়। চলচ্চিত্র থেকে উপার্জন করা সব অর্থ ফের বিনিয়োগ করেছেন চলচ্চিত্রেই।
চলচ্চিত্র প্রযোজনায় তার প্রযোজিত অনেক চলচ্চিত্র ফ্লপ তকমা পাওয়ার পরও ফের টাকা ঢালতে দ্বিধাবোধ করেননি তিনি। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই মাত্র ৫৪ বছর বয়সে উত্তম কুমার চিরবিদায় নেওয়ার পরও বাংলার মানুষের মনে থেকে গেছেন মহানায়ক হয়েই। যত দিন বাংলা সিনেমা আছে, তত দিন উত্তম কুমার নামটিও অমর হয়ে থাকবে।