জাতীয়

আবারও টানা অবরোধ-হরতাল আসছে

বিএনপিসহ সরকার বিরোধীদলগুলোর ডাকা দেশব্যাপী চলমান রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি বাড়ছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল শুক্রবার এবং পর দিন শনিবার বাদ দিয়ে আগামী রোববার (৫ নভেম্বর) থেকে সপ্তাহজুড়ে ফের টানা অবরোধের কর্মসূচি আসতে পারে। স্থায়ী কমিটিসহ বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা হাইকমান্ডকে চলমান অবরোধ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। গণতন্ত্র মঞ্চসহ যুগপতের শরিকরাও বিএনপিকে একই পরামর্শ দিয়েছে।

এদিকে, গত মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হওয়া ৭২ ঘণ্টার টানা অবরোধ কর্মসূচি বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) শেষ হবে। গত ২৮ অক্টোবর পুলিশের সাথে সংঘর্ষের পর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। দলটির দাবি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হামলা চালিয়ে সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছিল এবং এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত।

এর প্রতিবাদে পর দিন রবিবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় দলটি। হরতাল কর্মসূচি শেষে মঙ্গলবার থেকে দেশব্যাপী টানা ৭২ ঘণ্টা অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।বিএনপির নয়াপল্টনস্থ মহাসমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের হত্যা, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এই অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বিএনপি তাদের চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে জনগণের ব্যাপক সাড়া দেখছে।

দলটির দাবি, জনগণের সমর্থনে নজিরবিহীন হরতাল পালিত হয়েছে। সে কারণে সরকারের শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সড়কপথে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলেনি। ঢাকার ভেতরেও সাধারণ মানুষ সরকারের প্রতি অনাস্থা দিয়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না। এই বিষয়টি দাবি আদায়ে বিএনপিকে টানা কর্মসূচিতে যেতে অনুপ্রাণিত করছে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহজুড়ে ফের দেশব্যাপী অবরোধের কর্মসূচি আসতে পারে। এমনকি আগামী সপ্তাহের পরেও অবরোধ চলতে পারে।দলটির কিছু কিছু নেতা বলছেন, চলমান কর্মসূচিতে তারা যে সাড়া পাচ্ছেন, তাতে তারা আশাবাদী যে অচিরেই আন্দোলনের ফল ঘরে তুলতে পারবেন। দ্বিতীয় ধাপের অবরোধ কর্মসূচি আরো কঠোরভাবে পালনের পরিকল্পনা করছে বিএনপির হাইকমান্ড।

সে কারণে পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড় সত্ত্বেও নেতাদের সর্বতোভাবে গ্রেপ্তার এড়িয়ে এবং কোনো শোডাউন না দিয়ে আগামী দিনের কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তারের পরিপ্রেক্ষিতে দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে এখন আন্দোলনের সার্বিক বিষয় মনিটরিং করা হচ্ছে। ফলে শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারা গ্রেপ্তার হলেও চলমান আন্দোলনে কোনো ছন্দপতন হবে না বলে দাবি বিএনপি নেতাদের।

এদিকে মহাসমাবেশকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মামলা ও গ্রেপ্তার অভিযান চলমান থাকায় নেতারা প্রকাশ্যে না আসতে পারলেও অভ্যন্তরীণভাবে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন। কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। বিএনপির মহাসমাবেশে হামলার ঘটনায় সরকার ও পুলিশকে দায়ী করে গত সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ঢাকাস্থ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চিঠি দিয়েছে দলটি।

এছাড়া সহিংসতার ঘটনায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, সেগুলোকে আন্দোলনের পথে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে সহিংসতার ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চায় তারা। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে তারা যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নেবে। ওই ঘটনায় সরকারের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।