আন্তর্জাতিক

গাজা নিয়ে গোপন ফন্দি আঁটছে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র

ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধ ১৮তম দিনে গড়িয়েছে। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় টানা বোমা হামলার পাশাপাশি বড় ধরনের স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে গাজা সীমান্তে হাজার হাজার সেনা ও সমরাস্ত্র জড়ো করেছে নেতানিয়াহু সরকার। এমন পরিস্থিতিতে একটি প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, ইসরায়েলি স্থল অভিযানের পর গাজার ভাগ্যে কী ঘটবে।

গাজার বর্তমান ক্ষমতাসীন হামাসকে উৎখাতের পর গাজাবাসীর ভাগ্য নিয়ে এরই মধ্যে গোপনে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে এই যুদ্ধের অন্যতম কুশীলব ইসরায়েল ও তাদের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে জাতিসংঘের সমর্থনে অন্তর্বর্তী সরকার বসানো এবং এর সঙ্গে অন্যান্য আরব দেশের সরকারকে সম্পৃক্ত করার সম্ভাবনা যাচাই করছে তারা। যদিও মার্কিন-ইসরায়েলি এ প্রচেষ্টার সঙ্গে আরবদের সম্পৃক্ত করা বেশ চ্যালেঞ্জ হবে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। এই আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে ব্লুমবার্গ।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের এই আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সামনে আরও অনেক কিছু হবে। ইসরায়েলি স্থল অভিযানের সফলতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আরবদের সম্পৃক্ত করার বিষয় আছে, যা এখনো নিশ্চত নয়।যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বারবার বলে আসছেন, তাদের গাজা দখলের কোনো ইচ্ছে নেই। তবে ৭ অক্টোবরের হামলার পর সেখানে হামাসের শাসন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১৪০০ ইসরায়েলি এবং দুই শতাধিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে জিম্মি করে হামাস।

স্থল অভিযানের পরে কী হবে, তা নিয়ে ইসরায়েল এখনো যুক্তরাষ্ট্রকে তেমন তথ্য দেয়নি। হামাসকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাড়া আর কোনো সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য না থাকায় এই যুদ্ধ আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলেও উদ্বিগ্ন ওয়াশিংটন।মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলকে এ বিষয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ৯/১১-এর হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র যে ভুল করেছিল ইসরায়েলও একই ধরনের ভুল করতে পারে। ৯/১১-এর হামলার পর আমেরিকা আফগানিস্তান ও ইরাক পাল্টা আক্রমণ করে। সেই হামলায় আল কায়েদাকে দুর্বল করতে পারলেও দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে হাজার হাজার মার্কিন সেনা প্রাণ হারায়।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের এক মুখপাত্র বলেছেন, এই মুহূর্তে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ‍ঐক্যবদ্ধ করা এবং গাজায় দ্রুত ত্রাণসহায়তা পাঠানোয় যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য। একই সময়ে সম্ভাব্য স্থল অভিযানের পর গাজাবাসীর ভাগ্য কী হবে, তা আমেরিকান কর্মকর্তাদের বড় উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দেখে থাকে।তবে এই মুর্হূতে উত্তর গাজা থেকে আরও মানুষ সরিয়ে নিতে এবং কাতারের মধ্যস্থতায় আরও জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ইসরায়েলের স্থল অভিযান ‍নিয়ে কালক্ষেপণ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা। এরই মধ্যে গত শুক্রবার কাতারের মধ্যস্থতায় দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে হামাস।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সাবেক সিনিয়র বিশ্লেষক উইলিয়াম উশার বলেছেন, গাজায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা বেশ কঠিন হবে। এ বিষয়ে আরব সরকারগুলোর সায় পাওয়া আরও বেশি চ্যালেঞ্জ হবে।অন্যদিকে ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার ল্যাপিড গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ২০০৬ সালের নির্বাচনে হামাসের কাছে পরাজিত হয়ে গাজা থেকে বিতাড়িত হয়েছিল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।

তবে সিআইএর সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা টেড সিঙ্গার বলছেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ হামাসের কার্যকর বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারবে না। অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং জর্ডান ও লেবাননের মতো দেশে থাকা ফিলিস্তিনি প্রবাসীদের শাসন করে থাকে মাহমুদ আব্বাসের এই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে গত রোববার বাইডেনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান সংবাদমাধ্যম সিবিএসকে বলেছেন, গাজার ফিলিস্তিনি জনগণ এমন প্রতিনিধি পাওয়ার যোগ্য যারা তাদের শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে দেবে।