জাতীয়

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শুধু মুখেই আল্টিমেটাম নেই গুরুত্ব

বাংলাদেশে সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরকে পাল্টাপাল্টি আল্টিমেটাম দিলেও কোন দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে এমন কর্মসূচিকে মুখে অন্তত গুরুত্ব দিচ্ছেন না। দু’দলই বলছে যে, এ ধরনের কর্মসূচিতে বিচলিত নন তারা।আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এ ধরণের ঘোষণা নিয়ে তার দল কোনভাবেই বিচলিত নয়। কারণ বিএনপি এ ধরণের আল্টিমেটাম দিয়ে কোনও কিছুই করতে পারে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান আওয়ামী লীগের আল্টিমেটামের বিষয়ে বলেন, ক্ষমতাসীনদের এমন ঘোষণাকে খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন না তারা। বিষয়টি নিয়ে খুব একটা কথা বলতেও রাজি হননি তিনি।আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনের আগে আগে এ ধরণের ঘোষণা আসাটাই স্বাভাবিক। এগুলোকে দলগুলোর রাজনীতির মাঠে ‘বল ঘোরানোর’ প্রয়াস বলে মনে করছেন তারা।

গত সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে এক জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে ৩৬ দিনের আল্টিমেটাম দেন। এই ৩৬ দিনের মধ্যে তিনি বিএনপিকে ‘অপরাজনীতি, আগুন সন্ত্রাস, নাশকতার রাজনীতি ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ বন্ধ করার আহ্বান জানান। তা না হলে বিএনপির ‘হাত গুড়িয়ে দেয়া হবে’ বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

এর আগে রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টনে খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় বিএনপি। আল্টিমেটাম দেয়ার পর বিএনপি নেতারা বলেন, দাবি মানা না হলে ‘বাঁক পরিবর্তন করার মতো কর্মসূচি’ আসতে পারে।এদিকে, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির দেয়া আল্টিমেটাম গতকাল মঙ্গলবারেই (২৬ সেপ্টেম্বর) শেষ হয়েছে। তবে তাদের এই হুঁশিয়ারিকে গুরুত্ব দেয়নি আওয়ামী লীগ। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‌‘এ ধরণের আল্টিমেটাম তারা (বিএনপি) বিভিন্ন সময়েই দিয়েছে। এগুলো আসলে কী উদ্দেশ্যে দেয় এবং আল্টিমেটামের পর তারা কী বলবে তা চিন্তা না করেই তারা এই ঘোষণা দেয়।

জনগণের যেহেতু সমর্থন নাই তাই আল্টিমেটাম দিয়ে তারা কিছু করতে পারে না।এদিকে আওয়ামী লীগের আল্টিমেটাম নিয়েও অনেকটা একই সুরে কথা বলেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) সময় বেঁধে দেয়ার কে?।আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘সহিংসতা কে করছে? শান্তি সমাবেশের নামে তারাই তো লাঠিয়াল বাহিনী, হেলমেট বাহিনী দিয়ে সহিংসতা করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দল পরস্পরকে যে আল্টিমেটাম দিচ্ছে, দেশের ইতিহাসে এগুলো আসলে নতুন কিছু নয়। বরং ’৯০ এর দশকে গণতান্ত্রিক শাসনে ফেরার পর থেকেই এ ধরণের ‌‘আল্টিমেটামের রাজনীতি’ বাংলাদেশে চলে আসছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক গোবিন্দ চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ধরণের সন্ধিক্ষণ চলছে। বাংলাদেশের শক্তিমান দুটি রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে আল্টিমেটামের এই সংস্কৃতি বজায় রেখে চলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুই দল যখন খেলে তখন বলতো স্পিন করাতে হয়, বল তো ঘোরাতে হয়। এই বল ঘোরানোর যে রাজনীতি সেটা দুই দলই সমান তালে করতে থাকে।

বরাবর বিরোধীদল আল্টিমেটাম দিয়ে আসলেও সরকারি দলের আল্টিমেটাম দেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।গোবিন্দ চক্রবর্তী মনে করেন, এর মাধ্যমে হয়তো তারা বিএনপিকে বোঝাতে চাইছে যে, বিএনপি আন্দোলন বাদ দিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিক, নইলে ভবিষ্যতে তারা আরো কঠোর হতে পারে।

আরও খবর

Sponsered content