জাতীয়

ফাল্গুন মাসেই আগুন লাগে বেশি বাঁচার উপায় কী

গত ১৫ বছর ধরে সারা দেশে দৈনিক ৫২টি আগুনের ঘটনা ঘটছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ অর্থাৎ ফাল্গুনে এ সংখ্যা গড়ের চেয়ে বেশি হয়। গত বছর শুধু মার্চে আগুনের ঘটনা ঘটে তিন হাজার ৩৩৪টি। আগুনে স্বজনহারাদের আর্তনাদ এ দেশে খুবই পরিচিত দৃশ্য।

যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে, অগ্নিকান্ডের পর কর্তাদের হুংকার, তদন্ত কমিটি গঠন কিংবা ক’দিন পর সব ভুলে যাওয়ার ধারাবাহিকতা। অনিয়ম, দুর্নীতি, অবহেলার বিহীত না হওয়ায় প্রতি বছর বাড়ে আগুন লাগার ঘটনা।একটু ফিরে তাকানো যেতে পারে পেছনে।

দুই হাজার নয় সালে, দেশে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে বারো হাজার ১শ’ ২০টি। পনেরো বছরে, এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৬২৪টিতে। খোদ রাজধানী ঢাকা রয়েছে, অগ্নি দুর্ঘটনার শীর্ষে।২০১৯ থেকে ২০২৩। প্রতি বছরেই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে, অগ্নিকান্ডের ঘটনা।

শিল্প কারখানার পাশাপাশি আক্রান্ত হয়েছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। গত পনেরো বছরে, আগুনে প্রাণ হারিয়েছেন দুই হাজার ২৩৪ জন। আহতের প্রকৃত সংখ্যা জানা নেই কারও। হয়তো কোনদিনই জানা যাবে না।ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে, ২০২৩ সালের মার্চে, আগুনের ঘটনা ঘটে ৩ হাজার ৩৩৪টি।

জানুয়ারিতে ছিল ২ হাজার ৬৪৬। ফেব্রুয়ারীতে ২ হাজার ৭১৩। এ শুষ্ক মৌসুমে আরও বেশি সর্তক থাকার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রি. জে. (অব.) আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ বলেছেন, পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাবে, শুষ্ক মৌসুমে বিশেষ করে শীতকাল ও ফাল্গুন মাস পর্যন্ত আগুনের দুর্ঘটনা অনেক বৃদ্ধি পায়।

অন্যদিকে, অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ফয়সাল মোহাম্মদ বলেছেন, ধরুন ব্যবসা করতে একটি ট্রেড লাইসেন্স নিলাম। তবে, ট্রেড লাইসেন্স তো আগুন লাগার কারণ নয়।অগ্নিকাণ্ডের পর কঠোর ঘোষণা এলে তা সীমিত থাকে টেলিভিশনের পর্দা বা খবরের কাগজের পাতায়।

শের বাস্তবতায় পুরোনো ভবনগুলো থেকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পৃথক করাও প্রায় অসম্ভব নয় বলে জানান তারা।ব্রি. জে. (অব.) আবু নাঈম মো. শহীদুল্লাহ আরও বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারগুলো খোলা-উন্মুক্তভাবে সিঁড়িতে থাকার কথা নয়।

এগুলো পর্যবেক্ষণ করার কোন ম্যানেজমেন্টই নাই। দিন আনি, দিন খাই; এভাবে যদি আমরা চলি, তাহলে কেন দুর্ঘটনা ঘটবে না বলে আক্ষেপ করেন ফায়ার সার্ভিসের এই সাবেক মহাপরিচালক।তাহলে কী করা যায়, দুর্ঘটনা বা প্রাণহানি কমাতে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবাসিক ভবনের বাসিন্দা ও কর্মচারী এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের আগুন নির্বাপনে প্রশিক্ষিত করতে।বিশেষজ্ঞ ফয়সাল মোহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, কর্মীরা আতিথেয়তা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। তবে, আগুন থেকে বাঁচতে করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে প্রশিক্ষণ নেন না। তারা মনে করেন, আগুনতো লাগে না।

তবে যেদিন আগুন লাগে, তখন একবারে পুরো বিল্ডিং জ্বলে যায়। জীবন চলে যায়।তবে ফাগুন অথবা বর্ষা যে ঋতুই হোক, আগুন মানুষের সমান ক্ষতির কারণ বলে স্মরণ করিয়ে দেন অগ্নি নির্বাপন সংশ্লিষ্টরা।

%d bloggers like this: