23 December 2024 , 2:59:49 প্রিন্ট সংস্করণ
পুরুষ বা মহিলাদের চুল নিয়ে নানান বিড়ম্বনা এড়াতে, নিজেদের স্মার্ট করতে ও সৌন্দর্য বর্ধনে ঝলমলে মাথা ভর্তি চুলের বিকল্প নেই। তাই সৌন্দর্য বর্ধনে পরচুলা বা নকল চুলের দিকে ঝুঁকছে অনেকেই। বর্তমানে দেশে-বিদেশে পরচুলার চাহিদা অনেক। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর তৈরি পরচুলা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানী হচ্ছে বিদেশে। ইউরোপের পাশাপাশি চীন এবং কোরিয়াতে চাহিদা রয়েছে এই পরচুলার।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর তৈরি পরচুলা বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এতে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে গ্রামের নারী শ্রমিকরা। এই শিল্পটি দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলেও শ্রমিকদের মজুরী নিয়ে আছে চরম অসন্তোষ। শুরুতে একটি পরচুলা ক্যাপের মজুরী ছিলো পাঁচশত টাকা, কমতে কমতে বর্তমানে সেই মজুরী দুইশত টাকায় নেমেছে। একটি পরচুলা ক্যাপ তৈরি করতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। গ্রাম্য হকারের মাধ্যমে এসব চুল সংগ্রহ করা হয় প্রত্যন্ত এলাকা থেকে।
উপজেলার সাঁওতার রোজিনা আক্তার জানান, তার স্বামী ভ্যানচালক। স্বামীর রোজগারে কোন রকমে সংসারটা চলে। ছেলে মেয়ের লেখাপড়া পরচুলা তৈরির টাকা দিয়ে যোগান দেন। গৃহিণী দিপা জানায়, স্বামী হাসান খড়ি ব্যবসায়ী। এই শ্রমিকও অভিযোগ করে জানান, এখন দুইশত টাকা মজুরী দেয়, তারপরও বিল সময় মতো পরিশোধ করেনা। শিক্ষার্থী মাছুরা পারভিন জানায়, তার পিতা আলী হোসেন মাছ বিক্রেতা। মাছুরা স্কুল থেকে ফিরে বিকেলে পরচুলা ক্যাপ তৈরি করে। সে আরো বলে, আমার আম্মু আগে কাজ করত, মজুরী কমে যাওয়ায় আর কাজ করেনা। আমি বিকেলে একটু একটু করে কাজ করি। ৭-৮ দিন লাগে একটা কাজ শেষ করতে। দুইশত টাকা পেয়ে আমি আমার স্কুলে যাতায়াত ভাড়া ও খাতা কলম কিনি। এই শিক্ষার্থীরও দাবী মজুরী বৃদ্ধি করা হোক।
উপজেলার সাঁওতা ও লক্ষিপুর গ্রামের অনেক নারী পরচুলা তৈরির কারিগর। দুই বছর আগে পরচুলা তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন কিছু নারী কর্মী। বর্তমানে ৫/৬ শত নারী এই কাজের সাথে যুক্ত। সম্ভাবনাময় এই শিল্পটির শুরুর দিকে গ্রামের মেয়েদেরকে স্বাবলম্বীর পাশাপাশি কর্মদক্ষ করে তোলে উদ্যোক্তারা। পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্রীরাও এই কাজ করে নিজেদের খরচ যোগায়। আবার সংসারের কাজ সেরে গৃহিনীরা এই কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন করে করছে গ্রামের এসকল মেয়েরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পরচুলা তৈরিতে প্লাস্টিকের দামি মাথায় আটকানো হচ্ছে পলিমার কটনলেস নেট কাপড়, ফানেল সুই এর সাহায্যে ওই নেটে বসানো হচ্ছে চুল। কটনলেস নেটে চুলের বুননের এই কাজকে বলে ভেন্টিলেটি। এরপর বিভিন্ন ধাপে তৈরি হয় পরচুলা। এব্যাপারে পরচুলা তৈরির কাজ সরবরাহকারী উদ্যোক্তা জানান, মোছাঃ পপি খাতুন বলেন, ঝিনাইদহ থেকে কাজের কাঁচামালসহ অর্ডার দিয়ে যায় পরচুলা ক্যাপের মহাজনেরা। যারা কাজ দেয় তারাই মজুরি কমিয়েছে, আমি মজুরীর ব্যাপারে কথা বললে তারা বলেন, এখন দাম কম যাচ্ছে দাম বাড়লে মজুরি বাড়িয়ে দিব, কিন্তু তারা মজুরি বাড়ায় না।
শ্রমিকরা একসময় একাজ করে মাসে ৮-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করেছে। এখন ৪-৫ হাজার টাকার বেশি কাজ করতে পারেনা। যদি পল্লী উন্নয়ন কর্মসংস্থান বা সরকার এই মজুরী সমস্যা সমাধান করেন তাহলে এ কাজের আরো প্রসার ঘটবে। এই শিল্পকে বাঁচাতে হলে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির বিকল্প নেই, তা না হলে অচিরেই এই শিল্প হারিয়ে যাবে।