রাজনীতি

১৫ বছরে ওবায়দুল কাদেরের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১৩ গুণ

১৫ বছরে ওবায়দুল কাদেরের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১৩ গুণ

গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১৩ গুণের বেশি ও তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২ গুণের বেশি বেশি। এই সময়ে ওবায়দুল কাদের ও তার স্ত্রীর সম্পদ একত্রে বেড়েছে ৬ গুণের বেশি। এ সময়ে তাদের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা এবং সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী বিনিয়োগ বেড়েছে। নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ওবায়দুল কাদেরের অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫ টাকা। তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ৪৮ লাখ ৮১ হাজার ৫২২ টাকা। ১৫ বছর পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালে ওবায়দুল কাদেরের অস্থাবর সম্পত্তি ৩ কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৯৮ টাকা এবং তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ১ কোটি ২৮ লাখ ৪২ হাজার ৪৬৪ টাকা।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ওবায়দুল কাদেরের জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, তার পেশা ছিল লেখক ও সাংবাদিকতা। লেখালেখি থেকে তার আয় ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তার আইনজীবী স্ত্রীর আয় ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া হলফনামায় পেশায় দেখানো হয় বেসরকারি চাকরি (বর্তমানে এমপি ও মন্ত্রী হিসেবে বেতন ভাতা পাই এবং বই ও পত্রপত্রিকায় আয় করি)। এর বাইরে তার আয়ের উৎস বাড়ি ভাড়া, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত।

ওবায়দুল কাদেরের বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছে ৩৮ লাখ ৭ হাজার ৫০৮ টাকা। তার মধ্যে বাড়ি ভাড়া থেকে ১৪ লাখ ২৪ হাজার ৯২৪ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক আমানত থেকে ৬ লাখ ৯৭ হাজার ২৮৪ টাকা, এমপি ও মন্ত্রী হিসেবে বেতন ভাতা ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও বই লিখে আয় ৪ লাখ ২৫ হাজার ৩০০ টাকা উল্লেখ করেছেন। তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় ১২ লাখ ২৩ হাজার ৫১২ টাকা।

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে কাদেরের অস্থাবর সম্পদের প্রায় সবকিছুই জব্দ ছিল। ব্যাংকে তার জমা ছিল প্রায় ৪ লাখ ৮৮ হাজার এবং স্ত্রীর নামে ছিল সাড়ে ৬৯ হাজার টাকা। দুটি হিসাবই জব্দ করা ছিল। বর্তমানে কাদেরের ব্যাংকে জমার পরিমাণ প্রায় ৭৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা আছে প্রায় ৫১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। নিজের কাছে নগদ ৮০ হাজার ও স্ত্রীর কাছে ৭০ হাজার টাকা রয়েছে।

১৫ বছর আগে ওবায়দুল কাদেরের বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ছিল সাড়ে ১৫ লাখ টাকা। স্ত্রীর বিনিয়োগ ছিল ৪২ লাখ টাকা। এসব বিনিয়োগও জব্দ ছিল। বর্তমানে কাদেরের সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ আছে প্রায় ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে বিনিয়োগ আছে ৭৩ লাখ টাকা।

১৫ বছর আগে ওবায়দুল কাদেরের নিজের কোনো গাড়ি ছিল না। বর্তমানে ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গাড়ি রয়েছে তার। কাদেরের স্ত্রীর নামে আগে একটি গাড়ি ছিল, সেটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ওবায়দুল কাদেরের একটি শটগান ও একটি পিস্তল ছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে শটগান ও পিস্তলটি বিক্রি করে দেওয়া হয়।

ওবায়দুল কাদেরের স্থায়ী সম্পদের মধ্যে রয়েছে উত্তরায় একটি ৫ কাঠার প্লট। স্ত্রীর নামে রয়েছে ১ হাজার ৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট। এ ছাড়া যৌথ মালিকানায় (পৈতিৃক সম্পত্তি) ৪ দশমিক ৭৪ একর কৃষিজমি আছে।

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা ছিল ১৯টি। এর মধ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে একাধিক মামলা ছিল। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। আগের মামলাগুলো থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন, কিছু মামলা খারিজ হয়েছে।