7 November 2023 , 2:35:25 প্রিন্ট সংস্করণ
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধ দুই মাসে গড়িয়েছে। যুদ্ধের প্রথম দিকে গাজায় শুধু বিমান হামলা চালালে এবার সেখানে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনারা। স্থল অভিযান শুরুর পর থেকেই হামাস ও ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের খবর আসছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের স্থল অভিযানে বেশ চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে ইসরায়েল। তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পুরো গাজায় জালের মতো বিস্তৃত হামাসের বিশাল সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক।
মূলত এই সুড়ঙ্গ ঘিরেই দুপক্ষের মধ্যে লড়াই হবে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ।এখন প্রশ্ন হলো, হামাসের সুড়ঙ্গপথ কতটা বিস্তৃত, এসব সুড়ঙ্গের ভেতরে আসলে কী আছে? কিংবা কোন কাজে এই সুড়ঙ্গপথ ব্যবহার করেন হামাস যোদ্ধারা? ২০২১ সালে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছিল, হামাসের ১০০ কিলোমিটারের বেশি সুড়ঙ্গ বা টানেল নেটওয়ার্ক তারা ধ্বংস করে দিয়েছে।
তবে হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার তখন বলেছিলেন, গাজার সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ, যা কি না গাজার দৈর্ঘ্যের চেয়েও ১০ গুণ বড়। এর মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ ধ্বংস করতে পেরেছে ইসরায়েল।হামাসের টানেলগুলোকে ‘গাজা মেট্রো’ বলে ডাকে ইসরায়েলি বাহিনী। অতীতের বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, এসব সুড়ঙ্গের ভেতরে আলো ও পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা আছে। এসব সুড়ঙ্গের দেয়াল সিমেন্টের তৈরি। সুড়ঙ্গগুলোতে বিদ্যুৎ ও রেলট্র্যাকের ব্যবস্থাও থাকে।
বিবিসি বলছে, এসব টানেল ব্যবহার করে হামাস পণ্য পরিবহন, বিমান হামলা থেকে আশ্রয় নেওয়া এবং ইসরায়েলে হামলা চালায়। এসব সুড়ঙ্গপথ ব্যবহার করে ইসরায়েলি সেনাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করতে পারবে হামাস। এ ছাড়া এই সুড়ঙ্গগুলো সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েল পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছেন হামাসের যোদ্ধারা। এই আন্তঃসীমান্ত সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে ইসরায়েলে আক্রমণও করেছেন তারা। ২০০৬ সালে তারা এ রকম একটি সুড়ঙ্গ দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে করপোরাল গিলাদ শালিতকে অপহরণ করেন। শালিতের মুক্তির বিনিময়ে পরে এক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছাড়িয়ে এনেছিল হামাস।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব টানেলের প্রবেশপথ আবাসিক এলাকার বিভিন্ন ভবনের মধ্যে লুকানো। ফলে এসব টানেল ধ্বংস করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। এমনকি গত ৭ অক্টোবরের হামলায় যে দুই শতাধিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে হামাস গাজায় নিয়ে এসেছে তাদের এসব গোপন সুড়ঙ্গে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি সূত্রগুলোর দাবি, গাজায় মাটির নিচে সুবিস্তৃত সুড়ঙ্গপথে ‘ইসরায়েল-প্রুফ’ যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি করেছে হামাস। বাইরে থেকে কেউ যাতে তাদের কথায় আড়ি পাততে না পারে, সে জন্য হামাস প্রায় ১০ কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে বিশেষ আবরণযুক্ত তার বসিয়েছে। ফলে খুব সহজেই হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের চোখ ফাঁকি দিতে পারে।
এই নতুন ধরনের সুরক্ষিত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণেই সম্ভবত হামাস ৭ অক্টোবরের হামলার পরিকল্পনা ইসরায়েলের কাছ থেকে গোপন রাখতে পেরেছিল। এ ছাড়া আত্মগোপন এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের রক্ষার জন্য এসব সুড়ঙ্গ ব্যবহার করেন হামাস যোদ্ধারা। এ ছাড়া এই সুড়ঙ্গগুলো অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুকানোর কাজেও ব্যবহার করা হয়।
এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল যেসব বোমা ব্যবহার করছে, তা মাটির খুব বেশি ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এক মিটারের বেশি গভীরে আছে এমন যে কোনো কিছুই ইসরায়েলের বোমা থেকে নিরাপদ।