16 October 2023 , 5:29:18 প্রিন্ট সংস্করণ
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থবহ সংলাপে বসার তাগিদ দিয়েছে মার্কিন নির্বাচনী মিশন। চলতি মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা সফর করেছে প্রতিনিধি দলটি। যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে তারা মোট ৫টি মতামত তুলে ধরেছে। মতামতের প্রথমেই সংলাপের আহ্বান করা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনের সময় মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে অনুরোধ করা হয়। সেই সঙ্গে নাগরিকের ভিন্ন মতকেও সম্মান জানাতে বলা হয়েছে।
দেশের নাগরিক যেন অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পরামর্শ দেয়া হয়। রাজনৈতিক সহিংসতাকারী অপরাধীদেরকে জবাবদিহি করার প্রতিও আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিকল্প নেই। দেশের জনগণকেও নিজেদের মতামত তুলে ধরতে সহায়তা করতে হবে।
এদিকে, রোববার (১৫ অক্টোবর) বিএনপির শর্ত মেনে কোনো সংলাপ হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।তিনি বলেন, বিএনপি যে চারটি শর্ত দিয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করা হলে সংলাপের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। আর শর্তযুক্ত সংলাপে আওয়ামী লীগের আগ্রহ নেই বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেতে সরকারকে চারটি শর্ত দিয়েছে বিএনপি। শর্তগুলো হলো—নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন খালেদা জিয়া, নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্দলীয় সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপিকে আগে শর্ত প্রত্যাহার করতে হবে। বিএনপি যদি শর্ত প্রত্যাহার করে তখন আমরা চিন্তাভাবনা করে দেখব। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুসারে। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগে যে দাবি বিএনপি করেছে, তা বাস্তবায়ন অসম্ভব।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিভাবে গঠন হবে, সে বিষয়ে সংলাপ হলে আলোচনার টেবিলে বসতে আপত্তি নেই তাদের। কিন্তু অন্য কোনো বিষয়ে সংলাপের আয়োজন করা হলে তারা যাবেন না।মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সংলাপের এজেন্ডা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা হতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে সংলাপের কোনো সুযোগ নেই। নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে সংলাপের পথ তৈরি হবে।সংলাপে নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা কিভাবে গঠন করা যায়, কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে সবার গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশের প্রধান দুই দলই তাদের নিজস্ব এক দফা নিয়ে অনড় অবস্থানে আছে। বিএনপি চায় শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। আর শাসক দল চায় শেখ হাসিনার অধীনে এখন সংবিধানে যে ব্যবস্থা আছে তার অধীনে নির্বাচন। কিন্তু শর্তহীন সংলাপ না হলে সেই সংলাপে কোনো ফল আসবেনা বলে মত বিশ্লেষকদের।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, দুই দলই এখন এক দফায় আছে৷ বিএনপি চায় তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন। আর আওয়ামী লীগ চায় শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন। দুই দল যদি এভাবে দুই প্রান্তে অনড় থাকে তাহলে তো কোনো অর্থবহ সংলাপ করা সম্ভব নয়। যদি সংলাপ হয়ও তা কোনো ফল বয়ে আনবে না। দুই পক্ষ যদি তাদের এই অনড় অবস্থান ছেড়ে দিয়ে বিকল্প কিছু বের করতে পারে তাহলে অর্থবহ সংলাপ সম্ভব৷ আর এটা হলে বাকি যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো সমাধান করা সম্ভব।
তার কথা, বিএনপির জন্য একটি বড় ইস্যু হবে মামলা। শীর্ষ পর্যায়ে যারা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন তারা যদি দণ্ড মওকুফ না পান তাহলে ওই পর্যায়ের অনেকেই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। আবার তৃণমূলের মামলা প্রত্যাহার না হলে বিএনপি নির্বাচনে এজেন্ট দিতে পারবে না। এ ধরনের অনেক সংকট আছে বিএনপির। এর সমাধানও হয়তো তারা চাইবে। আর এইসব বিষয় বাদ দিয়ে বিএনপি সংলাপে আসবে কী না আমি জানি না।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, তারা যে অর্থবহ সংলাপের কথা বলেছেন, তার মানে আমি মনে করি শর্তহীন সংলাপ। যেখানে কোনো পূর্ব শর্ত থাকবে না, খোলা মনে আলোচনা হবে এবং উদ্দেশ্য হবে মহৎ, রাজনৈতিক অচলবস্থার নিরসন। জনগণের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে পুলুরাল সেইফগার্ড চিন্তা করে সেটা করতে হবে।
তার মতে, এখন রাজনৈতিক অচলবস্থা একটি জায়গায় এসে থমকে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় আমি মনে করি আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা এবং গ্যারান্টি প্রয়োজন। তা না হলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না।গ্যারান্টির ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, গ্যারান্টি মানে হলো রিজেনবল আন্ডারস্ট্যান্ডিং, লাস্টিং এবং সেটা বাইন্ডিং। দুই পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে। অনড় অবস্থানে থাকলেতো আর সমঝোতা হয় না।সংলাপের পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা কোনো সংলাপের জন্য মধ্যবর্তী অবস্থা দেখছি না।
দুই পক্ষই তাল গাছ আমার বলে অনড় অবস্থান নিয়ে বসে আছে। শাসক দল সংবিধানের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার কথা বলছে আর বিএনপি সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইছে।তার কথা, এই পরিস্থিতিতে যদি অর্থবহ সংলাপ না হয় তাহলে দেশ এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে যাবে। লেজিমেটিসির সংকট কাটবে না এবং বর্তমান পরিস্থিতি সহিংসতার দিকে মোড় নিতে পারে।