বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

কোন কলমে লেখালেখি করা হয় মহাকাশে

মহাকাশে কোন কলমে লেখালেখির কাজ করেন বিজ্ঞানীরা? সেখানে সাধারণ বল পয়েন্ট পেন বা ফাউন্টেন কলম ব্যবহার করা যায় না। মহাকাশে ব্যবহার করতে হয় অ্যাস্ট্রোনট পেন বা স্পেস পেন। কিন্তু কেন? এর কারণ হল অভিকর্ষ শক্তি।আমরা সাধারণ কলমে যখন লিখি তখন পৃথিবীর অভিকর্ষের টানে উপরে থাকা কালি নীচের দিকে চেপে থাকে বা নেমে আসতে চায়।

লেখার সময় কলমের সুচালো অংশে থাকা বলটি ঘুরতে থাকে। তখন উপরে থাকা কালি বারবার বলটিতে লাগে। ফলে খাতার পাতায় কালির ছাপ পড়ে। আর আমরা যা লিখি, তা কাগজে দৃশ্যমান হয়। আর যদি কলমটি উল্টোভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, তাহলে কিছুক্ষণ পর পিছন দিয়ে কালি বেরিয়ে আসবে। আগে এ ধরনের অসাবধানতায় অনেক সময় হাতে বা জামাকাপড়ে কালি লেগে যেত।

এখন কিন্তু এই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।কলমে কালি ভরার পর পিছনের ছিদ্রটি আঠালো কোনও পদার্থ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে উল্টো করে রাখলেও আর কালি বেরয় না। তাহলে বোঝা গেল তো, কলম চালানোতেও অভিকর্ষ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। মহাকাশে অভিকর্ষ বল নেই। ফলে কালি কোনও নির্দিষ্ট দিকে চেপে থাকবে না বা নেমে আসবে না।

তাই সেখানে কলমের বলটিতে একটানা কালি লাগবে না। সেজন্য মহাকাশে এখানকার সাধারণ কলম ব্যবহার করা যায় না।আচ্ছা সাধারণ কলম না হয় কাজ করবে না। তাহলে কি মহাকাশে পেন্সিল ব্যবহার করা যেতে পারে? কারণ পেন্সিলে তো অভিকর্ষের কোনও প্রয়োজন হয় না। মহাকাশ যাত্রার শুরুতে মার্কিন ও রুশ বিজ্ঞানীরা পেন্সিলই ব্যবহার করতেন। কিন্তু তাতে অনেক বিপদের আশঙ্কা থাকে।

তাই মহাকাশে পেন্সিলও ব্যবহার করা হয় না। পেন্সিলের শিস গ্রাফাইট দিয়ে তৈরি। আর গ্রাফাইট তাপ ও বিদ্যুতের পরিবাহী। মহাকাশে অভিকর্ষ নেই। পেন্সিল ভেঙে গেলে গ্রাফাইটের গুঁড়ো বা টুকরো অভিকর্ষহীনতার কারণে নীচে পড়বে না। সেগুলি ভাসমান অবস্থায় থাকবে। এর ফলে সেগুলি মহাকাশচারীদের নাক-কান বা চোখে ঢুকে গিয়ে বিপত্তি বাধাতে পারে।

তাছাড়া ছোট টুকরো কোথাও আটকে গিয়ে মহাকাশযানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ফলে ঘটে যেতে পারে বড়সড় বিপদ।১৯৬৭ সালে অ্যাপোলো ১ মিশনে কেবিনে অগ্নিকাণ্ডের পর মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ ঝুঁকিহীন কোনও লেখার উপকরণ জোগাড়ের উদ্যোগ নেয়। সেই সময় এগিয়ে আসেন পল সি ফিশার।

তাঁর কোম্পানি ‘জিরো গ্র্যাভিটি পেন’ তৈরি করে। এতে ব্যবহার করা হয় নাইট্রোজেন গ্যাস যুক্ত প্রেসারাইজড ইঙ্ক কার্টিজ। মহাকাশে তো বটেই, জলের নীচে, ভেজা বা তৈলাক্ত কাগজে, যে কোনও কোণে বা উপর নীচে যেভাবে খুশি এই কলমে লেখা যায়। মাইনাস ৩৪ ডিগ্রি থেকে ১২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে এই কলম কাজ করে।