Uncategorized

আবারও সাংবাদিকদের জন্য ইসির সংশোধিত নীতিমালা জারি

নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নীতিমালা (সংশোধিত) প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই কথা জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সাংবাদিকরা যাতে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার পরিষদের সব সাধারণ ও উপনির্বাচনে নির্বিঘ্নে নির্বাচনী এলাকা ও ভোটকেন্দ্র থেকে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার করতে পারেন সেজন্য নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে থাকে। নির্বাচনের সময় বিশেষ করে ভোটগ্রহণের দিন নির্বাচনী এলাকায় যানবাহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, বিধি অনুযায়ী নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, পোলিং এজেন্ট, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেন। এছাড়া কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত ব্যক্তিবর্গ ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেন। সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশসহ নির্বাচনী এলাকায় সংবাদ সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রকাশ করেছে।

নীতিমালায় যা বলা হয়েছে

১. নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যম ও সাংবাদিক;

ক. প্রিন্ট মিডিয়া: ডিক্লারেশনপ্রাপ্ত এবং নিয়মিত প্রকাশিত দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক প্রভৃতি;

খ. টেলিভিশন: অনুমোদিত টেলিভিশন চ্যানেল যা বাংলাদেশ হতে প্রচারিত হয়;

গ. অনলাইন নিউজপোর্টাল: অনুমোদিত অনলাইন নিউজপোর্টাল, আইপিটিভি: অনুমোদিত ইন্টারনেটভিত্তিক টেলিভিশন, ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক: তথ্য অধিদফতরের সাংবাদিক পাসধারী (PID Accreditation);

চ. আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা: তথ্য অধিদফতর থেকে অনুমতিপ্রাপ্ত;

ছ. বিদেশি সাংবাদিক: তথ্য অধিদফতরের মাধ্যমে অন্যান্য দেশ থেকে আগত সাংবাদিক।

২. অনুমোদন প্রক্রিয়া:

ক. কেন্দ্রীয় সাংবাদিক: রাজধানীকেন্দ্রিক গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় সাংবাদিক হিসেবে গণ্য করা হয়। এসব সাংবাদিকদের পাস ও গাড়ির স্টিকার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ অধিশাখা হতে প্রদান করা হয়।

ঘ. স্থানীয় সাংবাদিক: সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকা/জেলা/উপজেলা থেকে প্রকাশিত পত্রিকা এবং জাতীয় দৈনিক টেলিভিশন, অনলাইন, আইপিটিভির স্থানীয় প্রতিনিধি। স্থানীয় পর্যায়ের এসব সাংবাদিকদের কার্ড ও গাড়ির লিকার সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বা তার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদান করবেন।

৩. আবেদন প্রক্রিয়া:

ভোটগ্রহণ দিনের অন্তত তিন দিন আগে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের অফিসিয়াল প্যাডে নিউজ এডিটর/চিফ রিপোর্টার বার্তা প্রধান/ব্যুরো প্রধান জেলা প্রতিনিধি স্বাক্ষরিত আবেদন নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বা রিটার্নিং অফিসার বরাবর দাখিল করতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান হতে কতজন সাংবাদিককে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হলো তাদের নাম, প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিক পরিচয়পত্র/পিআইডি কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, সদ্য তোলা এক কপি পাসপোর্ট ও এক কপি স্ট্যাম্প সাইজ রঙিন ছবি আবেদনের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।

8. অনুমোদন ও কার্ড প্রদান:

প্রাপ্ত আবেদনসমূহ ও দলিলাদি যথাযথভাবে যাচাই বাছাই করে নির্বাচনের কলেবর ও গুরুত্ব অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসার স্বীয় বিবেচনায় যৌক্তিক সংখ্যক সাংবাদিককে অনুমোদন ও কার্ড ইস্যু করবেন। জটিলতা এড়াতে কতসংখ্যক স্থানীয় সাংবাদিককে পরিচয়পত্র দেয়া যায় তা স্থানীয় প্রেসক্লাব বা প্রেসক্লাবসমূহ বা সাংবাদিক সংগঠন বা সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে নির্ধারণ করবেন। এছাড়া সাংবাদিকদের আবেদন যাচাই বাছাই করে পরিচয়পত্র ও গাড়ির স্টিকার প্রদানের জন্য রিটার্নিং একটি কমিটি গঠন করে দিতে পারবেন।

আবেদন যাচাই বাছাইয়ের সময় পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয় কি না তা দেখার জন্য গত এক সপ্তাহের পত্রিকা সাপ্তাহিকের ক্ষেত্রে তিনটি সংখ্যা জমা দেওয়ার জন্য বলা যেতে পারে। সাংবাদিক পরিচয়পত্র বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট পত্রিকার এডিটরা প্রেস ক্লাবের সভাপতির সাথে যোগাযোগ করা যাবে। যেসব সাংবাদিককে অনুমোদন দেওয়া হবে তাদের বিস্তারিত তথ্য ইস্যু নম্বরসহ রেজিস্টারে লিখে রাখতে হবে। এবং ইস্যুকৃত কার্ডে রিটার্নিং অফিসার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর, সিল ও তারিখ থাকতে হবে।

৫. সাপোর্ট স্টাফ:

টেলিভিশনের সাংবাদিকদের প্রযুক্তিগতভাবে সহায়তা করার জন্য যে সকল সাপোর্ট দিয়ে (ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান) নিয়োজিত থাকবেন; তাদেরকে সাপোর্ট স্টাফ (মিডিয়া) কার্ড প্রদান করতে হবে।

৬. গাড়ির স্টিকার:

সাংবাদিকদের যাতায়াতের জন্য যৌক্তিকসংখ্যক গাড়ির স্টিকার প্রদান করা হবে। প্রয়োজনীয়তার নিরিখে ও বাস্তবতার আলোকে স্থানীয় প্রশাসন (রিটার্নিং অফিসার, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার সমন্বিতভাবে) প্রকৃত সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে গমনাগমন করত সংবল সংগ্রহের লক্ষ্যে সীমিত পর্যায়ে মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবেন।

এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপত্র প্রেস আইডির কপি, এনআইডির কপি এবং যে মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হবে সেই মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র রিটার্নিং/সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট জমা দিলে তার সঠিকতা যাচাই করে রিটার্নিং অফিসার বা রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দেবেন। কোনো সাংবাদিকের জন্য গাড়ির স্টিকার প্রদান করা হলে ক্রমিক নম্বর রেজিস্টারে লিখে রাখতে হবে।

৭. সাংবাদিক কার্ড, সাপোর্ট স্টাফ (মিডিয়া) কার্ড, গাড়ির স্টিকার:

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে বিভিন্ন নির্দেশনাসহ নির্বাচনভিত্তিক সাংবাদিক কার্ড, সাপোর্ট স্টাফ (মিডিয়া) ও গাড়ির স্টিকার মুদ্রণ করা হয়। এগুলো বিভিন্ন নির্বাচনে চাহিদা অনুযায়ী সারাদেশে ব্যবহার করা হয়।

৮. ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের অবহিতকরণ:

নির্বাচনী কর্মকতাদের প্রশিক্ষণের সময় সাংবাদিকদের বিষয়ে নির্দেশনাসমূহ প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিতে হবে। এছাড়া সাংবাদিকদের জন্য কারো নমুনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটদের সরবরাহ করতে হবে। নির্দেশনাসমূহ যেসব সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র দেয়া হবে। তাদেরও জানাতে হবে।

৯. সাংবাদিক কার্ড ও গাড়ির স্টিকার:

মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকদের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক সাংবাদিক পরিচয়পত্র, সাপোর্ট স্টাফ (মিডিয়া) পরিচালনার জন্য গাড়ির স্পিকার অন্যান্য নির্বাচনী মালামাল সংগ্রহের সময় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখা থেকে সংগ্রহ করতে হবে।

১০. নির্বাচনী এলাকা ও ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের পালনীয় নির্দেশাবলি:

• নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রদত্ত বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিজাইডিং অফিসারকে অবহিত করে ভোটগ্রহণ কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা এবং ভিডিও ধারণ। করতে পারবেন, তবে কোনোক্রমেই গোপন কক্ষের ভেতরের ছবি ধারণ করতে পারবেন না;

•একইসাথে দুইয়ের অধিক মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না এবং ১০ মিনিটের বেশি ভোটকক্ষে অবস্থান করতে পারবেন না; ভোটকক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা, নির্বাচনী এজেন্ট বা ভোটারদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে পারবেন না;

• ভোটকক্ষের ভেতর থেকে কোনোভাবেই সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না;

• ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে সরাসরি সম্প্রচার করতে হলে ভোটকক্ষ থেকে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে তা করতে হবে, কোনোক্রমেই ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করা যাবে না;

• সাংবাদিকরা ভোটগণনা কক্ষে ভোট গণনা দেখতে পারবেন, ছবি নিতে পারবেন তবে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না। ভোটকক্ষ থেকে ফেসবুকসহ কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি প্রচার করা যাবে না;

• কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম ব্যাহত হয় এমন সকল কাজ থেকে বিরত থাকবেন। ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকগণ প্রিজাইডিং অফিসারের আইনানুগ নির্দেশনা মেনে চলবেন,

• নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।

•কোনো প্রকার নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করতে পারবেন না; নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রার্থী বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যেকোনো ধরনের প্রচার বা বিদ্বেষমূলক প্রচারণা হতে বিরত থাকবেন।

• নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্য নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান মেনে চলবেন।

উপরোল্লিখিত নির্দেশনা কোনো সাংবাদিক পালন না করলে কার্ড ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ তার সাংবাদিক পাস বাতিল। করতে পারবেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক বা উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এ নীতিমালা নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন ও উপনির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য হবে।

নির্বাচন কমিশনের আদেশক্রমে এ নীতিমালা জারি করা হলো। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।

আরও খবর

Sponsered content