জাতীয়

শেখ হাসিনার পতনের পর বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর হিড়িক

শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর ধীরে ধীরে আবারও সচল হতে শুরু করেছে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ। জানা গেছে, কয়েকদিন আগেও যারা বৈধপথে দেশে টাকা পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর তারাই এখন রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত করেতে ইউরোপ প্রবাসী ব্যবসায়ীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। অনেক প্রবাসী দেশে বৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠাতে অস্বীকৃতি জানান।বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। এর বড় অংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য থেকে। ফ্রান্সেও আছে অপার সম্ভাবনা। উপযুক্ত পরিকল্পনায় এ সুযোগ কাজে লাগাতে চান ব্যবসায়ীরা।

ইউরোপের বিজনেস স্টেশন বলা হয় ফ্রান্সের বাংলাদেশি অধ্যুষিত গার্দু নর্দকে। ফ্রান্সের এই অঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় ৭ লাখ মানুষের আনাগোনা হয়। এখানে বসবাসরত অধিকাংশ বাঙালির রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয় এই কেন্দ্রে। এখানে যেমন আছেন খেটেখাওয়া বাঙালি, ঠিক তেমনি আছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী। হাজার মাইল দূরে হলেও দেশের অর্থনীতির সঙ্গে আছে যাদের নিবিড় সম্পর্ক।

প্যারিস প্রবাসীরা বলছেন, আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম দেশে রেমিট্যান্স পাঠাব না। তবে বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। ফলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আমরা অবদান রাখতে চাই।প্যারিসের ব্যবসায়ী কাজী এনায়েত উল্লাহ বলেন, বড় শক্তি হচ্ছে প্রবাসীদের সেভিংস। এটা কীভাবে বাংলাদেশে নেয়া যায়, সে চেষ্টা করতে হবে।

একই সঙ্গে বিভিন্ন পরিকল্পনার মধ্যে প্রবাসীদের অংশগ্রহণেরও দাবি জানান এ ব্যবসায়ী।এদিকে জানা গেছে, চলতি বছরের গত জুলাই মাসে সব মিলিয়ে ১৯০ কোটি ৯ লাখ ডলার দেশে রেমিট্যান্স এসেছে। যা গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় ৬ কোটি ৪ লাখ ডলার কম।গত ১ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, জুলাই মাসের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ তারিখে রেমিট্যান্স এসেছে ১২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আর সারা মাসে মোট যে রেমিট্যান্স এসেছে তা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৬ কোটি ৪ লাখ ডলার কম। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৭ কোটি ৩ লাখ ডলার।মূলত কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সপ্তাহব্যাপী সহিংস পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে দেশের প্রবাসী আয়েও।

সহিংসতার কারণে ১৮ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত টানা ইন্টারনেট শাটডাউন এবং সহিংসতা দমনের জন্য সরকারের কারফিউ জারি ও সাধারণ ছুটি ঘোষণার কারণে প্রায় এক সপ্তাহ স্থবির ছিল দেশের আর্থিক খাত। গত ১৯ থেকে ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে মাত্র একদিন।এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ থেকে ২৪ জুলাই এই ছয়দিনে দেশে প্রবাসী আয় আসে মাত্র ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

অথচ চলতি মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার। প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অর্থাৎ চলতি মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে, ১৮ থেকে ২৪ জুলাই এই ছয়দিনে সম্মিলিতভাবে রেমিট্যান্স এসেছে তার থেকে কম।চলতি মাসের প্রথম ১৮ তারিখ পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহের হার গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশ ভালোই ছিল।

গত বছর ১ থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১২৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। অপরদিকে চলতি বছরের একই সময় রেমিট্যান্স এসেছে ১৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৩ কোটি ডলার বেশি।