জাতীয়

সব দুর্নীতিবাজকে আইনের আওতায় আনতে হবে

দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও খেলাপি ঋণের সমস্যা সমাধানে সময়ক্ষেপণ না করে এখনই বিশেষ কমিশন অথবা বৃহত্তর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলের সংসদ-সদস্যরা। জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এ দাবি জানান। দেশে দুর্নীতি বন্ধ করতে এখনই ‘বিশেষ কমিশন’ গঠনের দাবি জানানোর পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদের অর্থসম্পদ বাজেয়াপ্ত ও বিচার করে কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিও জানান তারা।

বস্তুত দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ব্যাংক খাতে লুট ও নৈরাজ্য, খেলাপি ঋণের বিশাল পাহাড় দেশের অর্থনীতিতে সংকট বাড়িয়েছে।এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দেশের সব দুর্নীতিবাজকে আইনের আওতায় আনা জরুরি।আলোচনাকালে বিরোধী দলের সংসদ-সদস্যরা আরও বলেছেন, প্রতিবছর দেশ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশের দাবিও জানিয়েছেন তারা। আমরা মনে করি, এক্ষেত্রে তালিকা প্রকাশই যথেষ্ট নয়। খেলাপি ঋণ আদায়ে যা যা করণীয়, এর সবই করতে হবে। খেলাপি ঋণ নিয়ে বছরের পর বছর আলোচনা হয়; খেলাপি ঋণ আদায়ে নানারকম উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

এত উদ্যোগ নেওয়ার পরও কেন এসব খাতে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। যেহেতু দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও খেলাপি ঋণের কারণে দেশে নানারকম সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সেহেতু এসব সমস্যা সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।জাতীয় সংসদে একজন সংসদ-সদস্যের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশের শীর্ষ ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ কেলেঙ্কারি বন্ধে খেলাপি ঋণগ্রহীতা ও ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতাকে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চিহ্নিত করা এবং ওই ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেছেন, বিদ্যমান আইনে খেলাপি ঋণগ্রহীতা ও ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা সম্পর্কিত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করে সার্কুলার দেওয়া হয়েছে।এসব পদক্ষেপের সুফল নিশ্চিত করতে হবে।অর্থ পাচারের একটি বড় কারণ দুর্নীতি। ঋণ খেলাপ করাও একধরনের দুর্নীতি। দুর্নীতি রোধ করা গেলে অর্থ পাচার ও ঋণ খেলাপি হওয়ার প্রবণতাও কমবে। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচারের কারণে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় খোঁজা জরুরি। এক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অর্থ পাচারের ছিদ্রগুলো শনাক্ত করতে হবে। কীভাবে, কোন কোন চ্যানেলে অর্থ পাচার হচ্ছে, তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সেই ফাঁকগুলো বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায় এবং অর্থ পাচার রোধে যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, দুর্নীতি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে না।